হানিফ সংকেত
করোনা দুর্যোগে বিশ্ব এখন কাঁপছে। আর কনটেন্ট প্ল্যাটফর্ম নিয়ে এ দুর্যোগেও কাঁপছে আমাদের মিডিয়া। যাকে বলা হয়, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। শুরু হয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক। চলমান এই ওয়েব সিরিজ বিতর্কের কারণ গত রোজার ঈদে ওয়েব প্ল্যাটফর্মে প্রচার হওয়া তিনটি ওয়েব সিরিজ ‘আগস্ট ১৪’, ‘সদরঘাটের টাইগার’ ও ‘বুমেরাং’।
এসব সিরিজে কিছু অশালীন ও অশোভন দৃশ্যের পাশাপাশি রয়েছে অশ্লীল ও অশ্রাব্য সংলাপ, যা কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ কেউ বলেছেন, এসব উদ্দেশ্যমূলক ‘যৌনতার পসরা প্রদর্শন’। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ওয়েব প্ল্যাটফর্মের কোটি কোটি দর্শকের সামনে আমরা কি এই পর্নোগ্রাফি নিয়ে উপস্থিত হব নাকি আমাদের সামাজিক মূল্যবোধকে তুলে ধরে এখানকার পটভূমিতে গল্প কাহিনি নির্মাণ করব? এ নিয়ে মিডিয়াতে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথা হচ্ছে। দেওয়া হয়েছে দলবদ্ধ বিবৃতি।
ওয়েব সিরিজের চলমান বিতর্কের পক্ষ অবলম্বন করে ১১৮ জন নির্মাতা, প্রযোজক, শিল্পী বিবৃতি দিয়েছেন এবং এর পরেই ওয়েব সিরিজের অশ্লীলতার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৭৯ বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। ৭৯ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব তাদের বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘আমরা ইউটিউব বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে নিয়ন্ত্রণ বা বর্জন করার পক্ষপাতী নই। আমরা শিল্পীর স্বাধীনতা ও ভিন্নমতে বিশ্বাসী। তবে অপ্রয়োজনে দর্শক টানার মিথ্যা প্রলোভনে আমাদের নাটক শুধুই বিনোদনের পণ্য হয়ে দাঁড়াক তাও চাই না।’
আবার ১১৮ জন নির্মাতা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এক জায়গায় এসে বলেছেন, আমরাও মনে করি দেশীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ দিয়েই আমাদের কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। শুধু তাই নয়, এই বিবৃতিতে নির্মাতার সারিতে ছিল না অভিযোগ ওঠা তিন নির্মাতার নাম। জানা গেছে, যেহেতু তাদের কাজ নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে, তাই তাদের তারা যুক্ত করেননি।
অর্থাৎ তারাও অশ্লীলতার দায় নিতে রাজি নন। ওয়েব সিরিজের এসব অশ্লীলতা অনেককেই ক্ষুব্ধ করেছে। মিডিয়ার সিংহভাগ শিল্পী-কলাকুশলীর দাবি এখন একটাই, ওয়েব সিরিজের নামে এসব ‘পর্নোগ্রাফি মার্কা’ নাটক বন্ধ হোক। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এসব নির্মাতাকে স্বাধীনভাবে কনটেন্ট করতে দেওয়া মানে অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় দেওয়া। ওয়েব প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশি কনটেন্ট ছাড়াই ২০০ কোটি কেন ২০০০ কোটি টাকার বাজার তৈরি করা মানে এই নয় যে, এর লোভে আমরা শুরুতেই এসব নগ্নতা বা যৌনতা দিয়ে ওইসব প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করব।
৩৫ কোটি বাঙালির সামনে আমাদের প্রথম উপস্থাপনা নিশ্চয়ই এই নগ্নতা বা অশ্লীলতা হতে পারে না। বাংলাদেশের মিডিয়ার পরিচয় এটা নয়। আর এতে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হবে। প্রতিটি সচেতন মিডিয়াকর্মী, পত্রপত্রিকা এমনকি তথ্য মন্ত্রণালয় পর্যন্ত এসব অশ্লীল ওয়েব সিরিজের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন শিরোনাম করেছে- ‘ওয়েব সিরিজের নামে নীল ছবি’। প্রথম আলো লিখেছে- ‘সেন্সরবিষয়ক কোনো নিয়মনীতি না থাকায় এসবের চরিত্রগুলোর মুখের ভাষা, অঙ্গভঙ্গি টেলিভিশনের মতো স্বাভাবিক নয়।
এমনকি গল্পে থাকছে অশ্লীল সংলাপ, দৃশ্য এবং সহিংসতা।’ কেউ শিরোনাম করেছেন- ‘ওয়েব সিরিজ নাকি সেমিপর্ন?’। কেউ লিখেছেন, ‘অশ্লীলতার অপর নাম ওয়েব সিরিজ’। নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেছেন, ‘এসব ওয়েব সিরিজের মূল বিষয়ই হলো যৌনতা আর সহিংসতা’। একজন আইনজীবী বলেছেন, ‘আলোচনা বা প্রশংসা নয় সমালোচনা ও বিতর্ক দিয়েই বাংলাদেশে ওয়েব সিরিজের যাত্রা।’ ওদের কারণে ওয়েব প্ল্যাটফর্মও কলঙ্কিত হতে চলেছে। সম্প্রতি ভারতেরও অনেক বিচারপতি সরব হয়েছেন অশ্লীলতার বিরুদ্ধে।
আবার ওয়েব সিরিজের অশ্লীলতা সমর্থনকারী কিছু কিছু নির্মাতা এই ধরনের নির্মাণকে বৈশ্বিক ডিজিটাল বিনোদনের অন্যতম দাবির পাশাপাশি চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা বলেও মনে করেন। কিন্তু আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা মানেই উচ্ছৃঙ্খলতা নয়, রুচিবিকৃতি নয়, অশ্লীলতা নয়। এক সময় আমাদের দেশে এর চেয়েও বহুগুণ কম অশ্লীলতার কারণে ‘কাটপিস’ দৃশ্য বাদ দেওয়ার জন্য এদেশের নির্মাতারাই আন্দোলন করেছিলেন।
এই ডিজিটাল যুগেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে রোমান্টিকতা প্রকাশ বা বাসরঘরের দৃশ্য চিত্রায়নের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে। এ ধরনের অশ্লীলতা থাকে না। কিছু কিছু ওয়েব নির্মাতা বলেছেন, তাদের এসব নগ্ন দৃশ্য নাকি গল্পের প্রয়োজনে। অথচ অনেকেই বলছেন, গল্পের প্রয়োজনে নয় বরং অশ্লীলতার প্রয়োজনেই তাদের এই গল্প। শয্যা দৃশ্যের বিষয়েও একই প্রশ্ন-গল্পের প্রয়োজনে শয্যা দৃশ্য নাকি শয্যা দৃশ্যের প্রয়োজনে গল্প? তাও আবার টেলিভিশনে পরিচিতি পাওয়া কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রীর মাধ্যমে চিত্রায়িত। ধাক্কাটা বেশি লেগেছে সে কারণেই।
ওয়েব সিরিজে স্বাধীনতা চেয়ে ওয়েব নির্মাতাদের কেউ কেউ বলছেন, ওয়েব সিরিজ দেখার জন্য কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে সেটি কিনতে হবে। কেউ কাউকে বাধ্য করে না এসব দেখতে। এটিও নাকি একটি সেন্সর প্রক্রিয়া। এটা কোনো যুক্তি হলো না। একশ্রেণির দর্শক যখন জানবেন এখানে যৌন সুড়সুড়ি আছে, তখন অনেক বাধা পেরিয়ে সেটা দেখতে আগ্রহী হবেন। কারণ তারা পর্নোগ্রাফির দর্শক।
যেমন সত্তর দশকের শেষে ভিসিআরের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে পুরান ঢাকার বেগমবাজারে টিকিটের বিনিময়ে গোপন কক্ষে পর্নোছবি দেখানো হতো। সেটাও কয়েক ধাপ পেরিয়ে লুকিয়ে দেখতে হতো। সে সময় পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে লেখালেখি হলো, পরে তা বন্ধ হলো। অনেকে খোঁড়া যুক্তি দিয়েছেন, সাবালক বা উপার্জনক্ষম হলেই এই প্ল্যাটফর্ম কিনে দেখতে পারবেন।
এটাও ঠিক নয়। ইদানীং যেসব নাবালক কিশোর গ্যাংস্টারদের ধরা হচ্ছে এরা সবাই বিভিন্নভাবে নষ্ট হচ্ছে। এদের অর্থের কোনো অভাব নেই। এদের আরও খারাপ হওয়ার জন্য এই জাতীয় ওয়েব সিরিজ যথেষ্ট। শুধু তাই নয়, স্মার্ট টেলিভিশনের মাধ্যমে এসব ওয়েব বা নেটফ্লিক্স সিরিজ দেখা যায়, ফলে এসব এখন পারিবারিক মাধ্যমেও পরিণত হয়েছে। যা আরও ভয়ঙ্কর। সে জন্য এ ক্ষেত্রে রেগুলেশন কমিশন থাকা প্রয়োজন যারা সার্টিফিকেশন দেবেন।
বলা হয়, ওয়েব প্ল্যাটফর্মে দেওয়া কনটেন্টের বিষয়বস্তু, নির্মাণের ঢং ও পরিবেশনার ধরন সবই অনন্য। এই অনন্যের নমুনা কি নগ্নতা? এদের দাবি, বৈচিত্র্যহীনতার সংকটে ইতিমধ্যে টেলিভিশন ও সিনেমার নাকি বাজার নষ্ট হয়েছে। এ কথাটাও ঠিক নয়। টেলিভিশনের দর্শক তো কমেনি, বরং বেড়েছে। আগে একটি টেলিভিশনে দর্শক অনুষ্ঠান দেখত, এখন ৩০টি চ্যানেলে দেখে। আর এখন এই প্রজন্মের নির্মাতারাই টিভির জন্য অনেক ভালো ভালো নাটক নির্মাণ করছেন। টেলিভিশনের অনুষ্ঠান যে কতটা জনপ্রিয় তার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন দেখি টেলিভিশনের সেই স্বর্ণযুগের নাটক দেখার জন্য দর্শকরা বিটিভির সামনে এখনো হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তখনকার সীমিত সুযোগে নির্মিত পুরনো নাটক সংশপ্তক, এইসব দিনরাত্রি, নক্ষত্রের রাত এখনো দর্শকরা দেখছেন।
কারণ এর গল্পের গাঁথুনি ও শৈল্পিক নির্মাণ। সুতরাং টেলিভিশনের দর্শক নেই এ কথাটিও ডাহা মিথ্যে। বছরে স্বল্পসংখ্যক অনুষ্ঠান করে আমি যে সাড়া পাই তাতে বুঝি টেলিভিশনে ভালো অনুষ্ঠান হলে দর্শকরা দেখেন। দেশের আবহমান সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য আমরা ছুটে যাই দেশের নানান প্রান্তে। তুলে ধরি বাংলাদেশের প্রকৃত প্রকৃতিকে আর সেটাই দর্শক পছন্দ করে।
আমরা এখন গর্ব করে বলি, ডিজিটাল বাংলাদেশ। কিন্তু এই ডিজিটাল সুবিধা নিয়ে এসব নোংরামি ও অশ্লীল নাটক ওয়েব প্ল্যাটফর্ম থেকে যাচ্ছে ইউটিউবে, সেখান থেকে ফেসবুক। আর এভাবেই এসব ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামেগঞ্জে। যা ক্যান্সারের মতো গ্রাস করছে আমাদের যুব সমাজকে। মনে রাখতে হবে অশ্লীলতা নৈতিকতার দৃষ্টিতে অপরাধ বা দোষ হিসেবে বিবেচিত। যদিও এসব কনটেন্ট নির্মাতা বলছেন, পাইরেসি হয়ে এসব ওয়েব কনটেন্টের অংশবিশেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে।
আর এই খন্ডিত অংশই এত বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এ কথাটাও ঠিক নয়। অনেকেই পুরো কনটেন্ট দেখেছেন। কারও কাছেই তা গল্পের প্রয়োজনে মনে হয়নি বরং যৌনতা প্রকাশই মুখ্য মনে হয়েছে। এসব সিরিজ দর্শকের পছন্দ হয়নি বলে দর্শকই তা বর্জন করেছে। কারণ আমাদের সংস্কৃতি আর পাশ্চাত্য সংস্কৃতির পার্থক্য অনেক। আমরা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হাজার হাজার নরনারী দেখি। কিন্তু কোনো নারীকে সৈকতে বিকিনি পরা অবস্থায় দেখি না। গ্রীষ্মে বিদেশের রাস্তাঘাটে নারীদের যে পোশাকে দেখা যায় বাংলাদেশে সেভাবে দেখা যায় না। কারণ ওটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। আর তাই আমরা নববর্ষে নারী-পুরুষ সবাই বৈশাখী পোশাক পরে মেলায় হাজির হই, গেয়ে উঠি নববর্ষের গান, বাঙালির গান।
সুতরাং ৩৫ কোটি বাঙালি দর্শককে ধরার জন্য এসব সুড়সুড়িতে কাজ হবে না। আর সে জন্য ওয়েব সিরিজের এসব নোংরা কনটেন্টের বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার হয়েছেন। ইতিমধ্যে সবার দাবির মুখে এসব কনটেন্ট সরিয়েও ফেলা হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, ওয়েব সিরিজ, সিনেমা বা যে কোনো কিছু নির্মাণ ও প্রচার করার ক্ষেত্রে আমাদের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেছেন, যেসব সার্ভিস প্রোভাইডার এ ধরনের ওয়েব সিরিজ প্রচার করার সুযোগ করে দিয়েছে তাদের এই অবৈধ কাজের জন্য অবশ্যই আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ইতিমধ্যে ওয়েব সিরিজের নামে সেন্সরবিহীন আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ ভিডিও কনটেন্ট ওয়েবে প্রচারের অভিযোগে গ্রামীণফোন ও রবির কাছে সাত দিনের মধ্যে ব্যাখ্যাও চেয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। যা প্রশংসনীয়। আমরাও মনে করি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে যারা এসব আপত্তিকর কনটেন্ট প্রচারে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তাদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কারণ তাদের কাছে আমাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের চেয়ে ব্যবসাটাই বড় বলে মনে হয়।
এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের অভাব নেই। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, হইচই, ভিমিউ, ডিজনি প্লাস, উলু ইত্যাদি। আমরাও চাই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের আরও সমৃদ্ধি হোক। নতুন নতুন কনটেন্ট তৈরি হোক। মনে রাখতে হবে এটা বাংলাদেশ। আমাদের চেতনায় মহান মুক্তিযুদ্ধ।
আমাদের সম্পদ-আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি। ব্যক্তিগতভাবে ‘ইত্যাদি’র কারণে দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে দেখেছি আমাদের গ্রামীণ জীবন, মা-বাবা, ভাইবোনের পারিবারিক বন্ধন। যেখানে রয়েছে স্নেহ-মায়া-মমতা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনগাঁথা। রয়েছে প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য। রয়েছে নানান উৎসব। সেক্সকে পুঁজি না করে আমরা আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি-সবকিছুকে নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে তুলে ধরতে পারি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে। আর সেরকম মেধাবী নির্মাতা আমাদের আছে। তাহলে তো এই পক্ষ-বিপক্ষও থাকে না। কেউ রিট করতেও যাবেন না।
এ প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দিতে চাই, ইরানের বিশ্বখ্যাত পরিচালক আসগর ফরহাদির কাহিনি ও পরিচালনায় নির্মিত ছবি ‘এ সেপারেশন’-এর জন্য ২০১২ সালে এবং ‘দ্য সেলসম্যান’ ছবিটির জন্য ২০১৮ সালে তিনি দুবার একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। অথচ ছবি দুটির কোনটিতেই এ ধরনের কোনো অশ্লীল দৃশ্য নেই। নির্মিত হয়েছে ইরানি ভাষায়, ইরানি সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে।
আর ইরানি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক রায়কা জেহতাবছি, নারীদের প্রতি মাসের একটি বিশেষ সময়কে নিয়ে ২০১৮ সালে Period. End of Sentence নামে হিন্দি ভাষায় একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। যার জন্য একাডেমি পুরস্কারও পেয়েছেন। বলাবাহুল্য, এ ছবিতেও ছিল না কোনো অশ্লীল বা অশোভন দৃশ্য। আর আমরা নতুন নতুন ওয়েব প্ল্যাটফর্মে যেতে চাইছি নগ্নতাকে পুঁজি করে। যা অবশ্যই নিন্দনীয়।
পথ চলার শুরুতেই যদি আমরা এ ধরনের ভুল করে বসি তাহলে এমন নীতিমালা আসবে যে, ভবিষ্যতে এসব প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট নির্মাণও কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা বিশ্বাস করি, সেন্সর হচ্ছে শিল্পের অন্তরায়। আমাদের কৃতকর্মের জন্য সেই সেন্সরই আমাদের ওপর যেন না বর্তায়। উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যুগে হুজুগে এবং নানান সুযোগে অনেকেই এখন এই অসুস্থ সংস্কৃতির চর্চায় ব্যস্ত।
সংস্কৃতির প্রকৃতিকে বিকৃতির দিকে ঠেলে না দিয়ে তার সঠিক চর্চা করাই উত্তম। আমাদের সংস্কৃতি অনন্ত অক্ষয় সম্পদ এবং সামাজিকতা আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়। এই আত্মপরিচয়ের অহংকার আমাদের বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। আমাদের বর্তমান প্রজন্ম এবং আগামী প্রজন্ম এ প্রেরণায় নিজেকে সমৃদ্ধ করবে। এই প্রত্যাশা থাকল। [লেখাটি বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত]
লেখক: গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব
Discussion about this post