অধ্যক্ষ আবুল বাশার হাওলাদার
করোনার মহাতাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে প্রায় ৪ মাস। ঝরে পড়ার আশঙ্কায় প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষক। এর মধ্যে ৯৭ শতাংশ বেসরকারি শিক্ষক। এমনিতেই শিক্ষকদের বেতন কম, তারপর এই মহাসংকটে আরও কঠিন অবস্থার মুখোমুখি শিক্ষকসমাজ। শিক্ষকদের অন্তরে বঞ্চনার আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে; ১০০০ টাকা বাড়িভাড়া, ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতাসহ নানা অপ্রাপ্তির কষ্টে। বৈষম্যে জর্জরিত বেসরকারি শিক্ষকদের প্রাণের দাবি শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণ অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পরও অধরাই রয়ে গেল। এই লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে নতুন সমীকরণ শুরু হলো ১৪ জুলাই ২০২০ থেকে।
সবাই প্রশ্ন করতে পারেন এই তারিখে শুরু হলো কেন? আসলে নব্বইয়ের দশক থেকেই শিক্ষকরা এবং শিক্ষক সংগঠনগুলো নানাভাবে শিক্ষা সরকারিকরণের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরছেন এবং আন্দোলন করে আসছেন।
বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় এবং সরকারিকরণে আরও কত টাকা প্রয়োজন এর একটি সঠিক হিসেবে বের করতে হবে।
এজন্য প্রথমে প্রয়োজন শিক্ষক সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়া। যদিও এটি একটি কঠিন কাজ, তবুও থেমে থাকা যাবে না। ঐক্যবদ্ধ সংগঠনগুলোর মাধ্যমে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সঠিক হিসেব বের করে সরকারের আর্থিক সক্ষমতা নিরূপণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে হতে হবে।
এই প্রচেষ্টা কেউ এককভাবে করলে সফলকাম হওয়া যাবে না। অপ্রিয় হলেও সত্য, শিক্ষক সংগঠনগুলোর মধ্যে মতানৈক্য বিদ্যমান রয়েছে। এই মতানৈক্য নিয়েই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে, শিক্ষকদের প্রাণের দাবি শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা জানি, বর্তমান সরকার শিক্ষকবান্ধব সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বমানের আধুনিক শিক্ষা প্রবর্তনে বদ্ধ পরিকর। আর এজন্য শিক্ষাক্ষেত্রে সকল বৈষম্য দূর করার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণ করা। আর এই মানসে শিক্ষক নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে সকল ভেদাভেদ ভুলে সরকারিকরণের মঞ্চে; দাঁড়াতে হবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। কেউ একক নেতৃত্বের বাহবা চাইলে সেটা ভুল হবে। কেউ কাউকে পছন্দ-অপছন্দ করতে পারেন এবং এটাই স্বাভাবিক। তারপরও অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে সকলকেই উদারচিত্তের অধিকারী হতে হবে।
আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। এদেশের বঞ্চিত-অবহেলিত শিক্ষকদের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেদের সবটুকু বিলিয়ে দিই। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এই প্রয়াস সফল করে তুলি। আবারও জোর দিয়ে বলছি, আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে সরকারিকরণ আমাদের হাতের মুঠোয়। সাংগঠনিকভাবে কে ছোট কে বড় একথা বলার সময় এখন নয়। সকলকেই এখন প্রয়োজন।
বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন এজন্য যে কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত আছে। সবাইকে ধন্যবাদ।
লেখক : অধ্যক্ষ আবুল বাশার হাওলাদার, সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন।
Discussion about this post