জহুরুল ইসলাম
মানবতার মহান নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক ও সাহসিকতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৩০২টি বেসরকারি কলেজকে সরকারিকরণের জন্য নির্বাচিত করে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুন আদেশ জারি করা হয়। একই দিনে নির্বাচিত কলেজগুলোর নিয়োগ ও অর্থ ব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এরপর শুরু হয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই।
প্রথম পর্যায়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ৮টি আঞ্চলিক পরিচালকের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি টিম নির্বাচিত প্রতিটি কলেজে সরেজমিনে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচলনা করে প্রতিটি কলেজের জন্য একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন মাউশি অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তারপরই নির্বাচিত কলেজগুলোর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য দানপত্র দলিল সম্পাদন করা হয়।
পরিদর্শনকালে প্রতিটি শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য ৫ সেট ব্যক্তিগত ফাইল তৈরি করে ২ সেট পরিদর্শন কর্মকর্তারা নিয়ে যান এবং বাকি ৩ সেট কলেজে সিলগালা করে রেখে যান। মৌখিকভাবে বলে যান যে, মাউশি অধিদপ্তর চাওয়ামাত্রই ২ সেট কাগজ পাঠাতে হবে।
দানপত্র দলিল সম্পাদন থেকে প্রায় এক বছর তিন মাস সময় পর ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ আগস্ট প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের আদেশ জারি করা হয়। একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমন্বিত পদ সৃজনের আদেশ জারি করে এবং সে অনুযায়ী ঢাকা জেলায় ৪টি কলেজকে পদ সৃজনের মডেল হিসেবে বিবেচনা করে পাইলটিং শুরু করে। এই পাইলটিংও আলোর মুখ দেখেনি।
ফের দ্বিতীয় ধাপে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার লক্ষ্যে মাউশি কৃর্তক প্রদত্ত কাগজপত্রের চাহিদাপত্রসহ ‘ক’,‘খ’ ও ‘গ’ কে তথ্য প্রদানের জন্য চার ধাপে কলেজগুলোকে ভাগ করে কাগজপত্র ও ২টি পেনড্রাইভে তথ্য ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ মে’র মধ্যে মধ্যে মাউশিতে জমা নেয়া হয়। এসব কাগজপত্র বিবেচনায় না নিয়ে ফের তৃতীয় ধাপে একই বছরের ২৪ জুন মূল কাগজপত্র দেখে যাচাই- বাছাই শুরু করেন।
অনভিজ্ঞ, আনাড়ী, প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া সর্ম্পকে নিয়ম কানুন না জানা ব্যক্তিদের দ্বারা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করানো হয়। মূল কাজপত্র দেখে যাচাই-বাছাই করে পদ সৃজনের ছকে মন্তব্যের ঘরে যে সব অযাচিত মন্তব্য লিখে পদসৃজনের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন। অযাচিত মন্তব্যের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নজরে আসায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে পূর্বে যারা অযাচিত মন্তব্য লিখেছেন তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ নভেম্বর থেকে পুনরায় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শুরু করেছে। করোনার জন্য কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
হঠাৎ চলতি বছরের ১ জুন যাচাই-বাছাই কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে পূর্বে যারা অযাচিত মন্তব্য লিখেছেন তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে অফিস আদেশ জারি করে। যারা মাউশিতে মাসের পর মাস সময় নিয়ে অযাচিত মন্তব্য লিখে পদসৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে, তাদেরকেই অন্তর্ভুক্ত করে চতুর্থ ধাপে আবার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে।
মাউশি অধিদপ্তরের কর্মকতার্দের অযাচিত মন্তব্যের কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি, যা সবই প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা:
১. নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মূল পত্রিকা নেই।
২. ডিজির প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মনোনয়নের পত্রাদেশের মূল কপি নেই এবং ফটোকপিও নেই।
৩. ডিজির প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মনোনয়নের পত্রাদেশের ফটোকপি আছে, কিন্তু মূল কপি নেই।
৪. নিয়োগের মূল্যায়ন শিট নেই, কিন্তু প্রার্থীর তালিকায় নির্বাচিত লেখা আছে।
৫. নিয়োগের মূল্যায়ন শিটে ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর ও সিল অস্পষ্ট।
৬. নিয়োগের মূল্যায়ন শিটে ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর থাকলেও সিল নেই।
৭. নিয়োগের মূল্যায়ন শিটে ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর সন্দেহজনক।
৮. মূল্যায়ন শিটে ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর ভিন্ন কালিতে।
৯. নিয়োগ কমিটি গঠন ভিন্ন কাগজে লেখা রেজুলেশন বহিতে নয়।
১০. নিয়োগ কমিটি কোন বিষয়ের তা উল্লেখ নেই।
১১. নিয়োগ ও যোগদান বিষয় অধিভুক্তির আগে।
১২. মূল্যায়ন শিটে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের স্বাক্ষর নেই।
১৩. নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পদ সংখ্যার উল্লেখ নেই।
১৪. নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ২ জন নিয়োগের কথা উল্লেখ থাকলেও একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১টি পদের সংখ্যার উল্লেখ থাকলেও অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
১৫. নিয়োগপত্রে কোন স্তরের জন্য নিয়োগ তা উল্লেখ নেই।
১৬. নিয়োগপত্রে স্মারক নম্বর উল্লেখ নেই।
১৭. মূল্যায়ন শিট নেই, রেজুলেশন করে নির্বাচিত বলা হয়েছে।
১৮. নিয়োগ পরীক্ষা প্রতিযোগিতামূলক হয়নি।
১৯. সর্বশেষ অধিভুক্তির ফি জমা দেয়া থাকলেও অধিভুক্তি পায়নি।
২০. রেজুলেশনের ভাষা ঠিক নেই।
এই কলেজগুলো যখন বেসরকারি ছিল তখন এসব কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও প্রদানের সময় নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাই করেই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এমপিও দিয়েছে। এমপিওভুক্তির সময় তথ্য যাচাই বাছাইয়ের কাজগুলোও করেছেন মাউশি অধিদপ্তরে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এসব কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগের সময় নিয়োগ বোর্ডে মাউশির প্রতিনিধি হিসাবে স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেনও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। আবার বিভিন্ন সময় এসব কলেজগুলোতে পরিদর্শন ও নিরীক্ষার কাজগুলোও করেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সেসময় তাদের কর্মকাণ্ডে যেসব শিক্ষক-কর্মচারী বৈধ ছিল আত্তীকরণের কাজের সময় তাদের অধিকাংশই অবৈধ হয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষা ভবন ও শিক্ষা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের কাছে একজন মহাপরিচালক কতটা অসহায় তার প্রমাণ বর্তমান মহাপরিচালক মহোদয়। কারণ উনি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন মাউশি কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৩৫টি কলেজে সরজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিটি কলেজে পরিদর্শন প্রতিবেদন মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। আবার উনি যখন মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন, যখন আবার এসব কলেজের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করেন। মহাপরিচালক মহোদয় কলেজে কলেজে গিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদনে যা লিখেছেন সেটি যে সঠিক ছিল তা তিনি ঐ সিন্ডিকেটের কাছে বলতে পারেনি। অর্থাৎ মাউশিতে কর্মরত কর্মকর্তাদের নিজের কাজের প্রতি তাদের নিজের কোনো বিশ্বাস নেই। আবার তাদেরকে যাচাই-বাছাইয়ের কাজে অন্তর্ভুক্ত করে মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে এতে যারা আত্তীকৃত হবেন তাদের কাছে মাউশির কর্মকর্তাদের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরিচলনার জন্য ১৯৮০, ১৯৯৫ ও ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা জারি করা হলেও সুস্পষ্ট নিয়োগ কাঠামো নেই। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরের পূর্বে এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রেও নিয়োগ বোর্ডের ডিজি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মনোনয়নের পত্রাদেশের কপি বাধ্যতামূলক ছিল না। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে ডিজি প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য নির্ধারিত কলেজ থেকে নিতে হবে এমন কোনো সুস্পষ্ট বিধান ছিল না এবং কি মূল্যায়ন পরীক্ষায় লিখিত ও মৌখিক উভয়ই নিতে হবে কি না, কত নম্বরে পরীক্ষা হবে, নাকি মৌখিক পরীক্ষা নিয়েই নিয়োগ দেয়া যাবে এমন কোনো সুস্পষ্ট বিধি বিধান এখনও নেই।
২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে এন্ট্রি লেভেল শিক্ষক নিয়োগের প্রাক যোগ্যতা হলো এনটিআরসিএর সনদ থাকা। তারপর পরীক্ষা দিতে হয়। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর থেকে পুরো বাছাই প্রক্রিয়াটিই সম্পন্ন করে আসছে এনটিআরসিএ।
মাউশি অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা আত্তীকরণ প্রক্রিয়াকে প্রলম্বিত ও হয়রানিমূলক করার জন্য নানামুখী কূট-কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করেছে। যেমন- যারা ৭ম গ্রেডে কর্মরত আছেন তাদের অনেককেই ৯ম গ্রেডে পদসৃজনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সমন্বিত পদসৃজনের কথা লিখে পদসৃজনের প্রস্তাব প্রেরণ করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে ব্যক্তির নামে পদসৃজন করা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো কলেজেকে ২০১৮ বিধির ১৫ (২) (১) খ উপধারা মোতাবেক পদ সৃজনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বর্তমান কর্মরতদের মধ্যে যাদের বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদের নাম কর্তন করে পদসৃজনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যাতে করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং ক্ষুব্ধ হয়ে আত্তীকৃতরা আদালতে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং আত্তীকরণ প্রক্রিয়াটি আদালতের দোহাই দিয়ে বন্ধ করে রাখা যায়। প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তাতে চাকরি প্রার্থীরা আবেদন করেছেন। প্রতিষ্ঠান সিলেকশন দিয়ে চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দিয়েছে। চাকরিপ্রার্থী যোগদানপত্র পেশ করেছেন। প্রতিষ্ঠান বিধি-বিধান অনুযায়ী যোগদানপত্র গ্রহণ করে প্রার্থীকে এমপিওভুক্তির আবেদন মাউশি অধিদপ্তরে পাঠিয়েছে এবং তারা কাগজপত্র ও প্রাপ্যতা যাচাই-বাছাই করে এমপিওভুক্ত করেছে। ওই এমপিও কমিটির প্রধানও পদধিকার বলে মাউশির মহাপরিচালক এবং সব সিদ্ধান্তের দায় তারই। চাকরিপ্রার্থীর কাছে নিয়োগপত্র ও যোগদানপত্র এবং তার অর্জিত সনদ ব্যতিত অন্য কিছু সংরক্ষণ করার কথা নয় এবং তার বেশি সংরক্ষণ করার এখতিয়ার তার নেই। প্রতিষ্ঠান কোনো কারণে যা সংরক্ষণ করার কথা ছিল তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই কারণে ব্যক্তিকে আত্তীকরণ বঞ্চিত করা যাবে না।
২৯৯টি কলেজের সব মূল কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাইয়ের বাহানা ও দীর্ঘসূত্রিতার জন্য ছাত্র-ছাত্রী, সাধারণ জনগণ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্মচারীসহ সবাই সরকারিকরণের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় চার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী সরকারিকরণের সুযোগ সুবিধা না পেয়েই অবসরে চলে গেছেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে জেলা পর্যায়ে সরকারিকৃত কলেজসমূহকে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের তারিখ থেকে সরকারিকরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ৩০২টি কলেজের মধ্যে ৩টি কলেজকে ২০০০ বিধির আলোকে সরকারিকরণ করা হয়েছে এবং এরপরও ১৭টি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজকে ২০০০ বিধির আলোকে সরকারিকরণ করা হয়েছে।
সরকারি কলেজবিহীন উপজেলা সদরে একটি করে কালেজ সরকারিকরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তিন ধাপে ৩০২টি কলেজকে নির্বাচিত করেন। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ আগস্ট জারিকৃত চিঠির স্মারক নং- ০৩.০০১.০০০.০০.০০.০১.২০১৬-৬৩। সে আলোক ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ আগস্ট এসব কলেজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, অর্থ ব্যয় ও নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০ এপ্রিল দানপত্র দলিল সম্পাদনের নির্দেশনার অফিস আদেশ মোতাবেক একই বছরের ৩০ জুনের মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির বিরোধিতা ও আপত্তির মুখে প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের আদেশ জারি বিলম্বিত হয়। এই বিলম্বিত হওয়ার মধ্যেই অজ্ঞাত কারণে ও বিশেষ ক্ষমতায় প্রভাবে ৩০২টি কলেজ থেকে ৩টি কলেজ সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও অ-শিক্ষক কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০০০ দ্বারা সরকারিকরণের আদেশ জারি করা হয়েছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। আর বাকি ২৯৯টি কলেজ এক বছর তিন মাস সময় অপচয় করে সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮ মোতাবেক এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের পদসৃজনই হয়নি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দাবিসমূহ:
১. প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর পরিদর্শনের সময় কর্মরত সব শিক্ষক-কর্মচারীকে আগামী ৩০ আগস্ট ২০২০-এর মধ্যে আত্তীকরণ করতে হবে।
২. প্রাতিষ্ঠানিক ত্রুটিজনিত কারণে কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে আত্তীকরণ বঞ্চিত করা যাবে না।
৩. আত্তীকরণের কাজে রেসরকারি কলেজের নিয়োগ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তি যারা পূর্বে আত্তীকৃত হয়েছেন তাদেরকে এবং বর্তমানে যারা আত্তীকৃত হতে যাচ্ছেন তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪. যোগদানের তারিখ থেকে চাকরি শতভাগ গণনা করে কার্যকর চাকরিকাল নির্ধারণ এবং পদোন্নতিসহ সকল ক্ষেত্রেই তা কার্যকর করতে হবে।
৫. বেসরকারি আমলে প্রদত্ত কল্যাণ তাহবিল ও অবসর সুবিধার চাঁদার টাকা এমপিও বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে সুবিধাসহ ফেরত দিতে হবে।
৬. এনাম কমিটির সুপারিশ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ শিক্ষক পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পদ ও পদসোপান তৈরি করে পদোন্নতি দিতে হবে।
৭. সরকারি চাকরি নীতিমালা অনুসরণপূর্বক আত্তীকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি বদলিযোগ্য করতে হবে।
৮. সদ্য সরকারিকৃত কলেজসমূহ থেকে সংযুক্তি আদেশপ্রাপ্ত সকল শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৯. আত্তীকৃত শিক্ষকদের স্বতন্ত্রভাবে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. শিক্ষা বোর্ডসহ শিক্ষা প্রশাসনের সকল অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের পদসমূহে আনুপাতিক হারে আত্তীকৃতদেরকে পদায়ন করতে হবে।
১১. শিক্ষকদের ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স (Warrant of Precedence)- এ অবস্থান নির্ধারণ করতে হবে।
১২. শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু করতে হবে।
লেখক : জহুরুল ইসলাম, সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটি, সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস)।
Discussion about this post