মশিউর রহমান
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে হয়তো সব শিক্ষার্থী সমানভাবে শেখার সুযোগ পায়নি। সে কারণেই সরকার অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যাতে শিক্ষার্থীর শিখনফলের সবলতা বা দুর্বলতা চিহ্নিত করে পরবর্তী ক্লাসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। ১ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম চলবে। কিন্ত পরিতাপের বিষয় অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শুরু হওয়ার সাথে সাথে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একরকম পেরেশানি, এটা কীভাবে করবো? কি হবে? আমার সন্তান অন্যের চেয়ে কম নম্বর পেয়ে যায় নাকি? ইত্যাদি হতাশা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মহল্লার ফটোকপি, কম্পিউটারের দোকানগুলোতে ভিড় লেগে আছে অ্যাসাইনমেন্টের কভার পেজ তৈরি, রং বেরংয়ের কলম, আবার কখনো অন্যেরটা ফটোকপি অর্থাৎ এক তেলেসমাতি কারবার! কম্পিউটারের দোকান থেকে ছাপানো কভারপেজে তো নিজের স্বকীয়তা ও সৃষ্টিশীলতা প্রকাশ পাবে না। বরং শিক্ষার্থী নিজে মনের মাধুরী মিশিয়ে, নিজের কভারপেজ নিজে তৈরি করবে। এতে তার নিজস্ব রুচিবোধ ও স্বকীয়তা প্রকাশ পাবে।
যারা অভিভাবক তাদের মনে রাখতে হবে, করোনা পরিস্থিতিতে ক্লাস, পরীক্ষা যথাযথভাবে নেওয়া সম্ভব না বিধায়ই, অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর সবলতা, দুর্বলতা চিহ্নিত করতেই এই ব্যবস্থা। যাতে পরবর্তী শ্রেণিতে ওই শিক্ষার্থীর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। অ্যাসাইনমেন্টে হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীর সৃষ্টিশীল প্রতিভা বিকাশের একটা মাধ্যম। একটি পাঠ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা, অনুশীলনের মাধ্যমে শুধুমাত্র পাঠ্যবইয়ের সহায়তায় সে তার মেধা ও মননশীলতাকে উপস্থাপন করবে। এখানে যদি অভিভাবক, প্রাইভেট টিউটর কিংবা কোচিং সেন্টারের বড় ভাইয়েরা সাহায্য করে কিংবা অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে দেয়, তাতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর প্রতিভার বিকাশ ঘটলো না। শিক্ষার্থীকে শিক্ষক যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারলেন না, ফলে যথাযথ ব্যবস্থাও নিতে পারলেন না। তার মানে ক্ষতি হল আমার সন্তানেরই।
একজন আদর্শ অভিভাবকের চাওয়া শিক্ষক তার সন্তান সম্পর্কে যথাযথ ধারণা পাক, যাতে তাকে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারেন। কাজেই অভিভাবকদের উচিত হবে শিক্ষার্থী যাতে নিজের প্রচেষ্টায়, নিজে মেধা খাটিয়ে অ্যাসাইনমেন্টে তৈরি করে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ বা জমা দেওয়ার কাজে শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ে না পাঠানোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। অভিভাবক অথবা অন্য কাউকে পাঠিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ করবেন অথবা ইন্টারনেট থেকেও অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করা যাবে। আবার অভিভাবক বা অন্য কাউকে পাঠিয়ে নির্ধারিত তারিখে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ কিংবা জমা দেওয়া কোনো কাজেই বিদ্যালয় আসবে না। আমাদের শিক্ষার্থীরা, আমাদের সন্তান। আমাদের সন্তানেরা সুস্থ থাকুক, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোক— এই প্রত্যাশা রইলো।
লেখক: সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি), আছমত আলী খান (এ.কে) ইনস্টিটিউশন, বরিশাল।
Discussion about this post