মো. রহমত উল্লাহ্
গত ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের একটি নতুন ভবন। ভবনটির নাম রাখা হয়েছে ‘৭ মার্চ ভবন’। বীর বাঙালি জাতির ও স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত লাখো জনতার সামনে জাতির উদ্দেশে দেয়া বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সে ভাষণই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষণা এবং যুদ্ধজয়ের দিক নির্দেশনা ও চূড়ান্ত অনুপ্রেরণা।
তখন থেকেই ‘৭ই মার্চের ভাষণ’ হিসেবে পরিচিত সেই ভাষণ। সেই ভাষণের আর কোন নাম পরিচয় নেই। ৭ই মার্চ বলতে বাঙালি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের সেই ভাষণের দিনই জানে, বোঝে ও লেখে। তখন থেকে এ পর্যন্ত ৭ই মার্চই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, ব্যানারে, পোস্টারে, পুস্তকে, আলোচনায় লিখিত ও উচ্চারিত। ৭ই মার্চ নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক গান, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পুস্তক ও গবেষণা বই। সেসবের কোথাও “৭ই মার্চ”কে ‘৭ মার্চ’ লেখা বা বলা হয়নি। ৭ই মার্চ বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের কোন সাধারণ তারিখ নয়। এটি গণমানুষের হৃদয়ের গভীরে প্রোত্থিত ও মুখে উচ্চারিত একটি ঐতিহাসিক দিবস। তাই “৭ই মার্চ”কে ৭ মার্চ লেখা বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতির সামিল।
যেহেতু ৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখে রেইসকোর্স ময়দানে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটি “৭ই মার্চ” এর ভাষণ হিসেবে সর্বজনবিদিত, লিখিত, উচ্চারিত ও স্বীকৃত; সেহেতু সেই ভাষণের নামে ঢাবি’র রোকেয়া হলে নবনির্মিত ভবনটির নাম ‘৭ মার্চ ভবন’ না রেখে ‘৭ই মার্চ ভবন’ রাখাই অধিক ইতিহাসনির্ভর ও যুক্তিযুক্ত। কেননা, ‘৭ মার্চ’ এবং “৭ই মার্চ” এক কথা নয়। ৭ মার্চ একটি তারিখ। যা বার বার আসবে। কিন্তু এই বাংলায় সেই ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মার্চ আর কোনদিন আসবে না। আমাদের সেই “৭ই মার্চ” কোন তারিখ নয়, সেটি একটি ঐতিহাসিক ভাষণের নাম-পরিচয়। যে ভাষণ এখন বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল।
লেখক : অধ্যক্ষ
Discussion about this post