শিক্ষার আলো ডেস্ক
করোনাকালীন আইসিইউতে মারা যাওয়া কোভিড আক্রান্ত প্রতি দুইজনের জনের একজন ডায়াবেটিকস রোগী। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ার’র জার্নালে প্রকাশিত ‘ডায়াবেটিকস অ্যান্ড মেটাবলিক সিনড্রোম: ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড রিভিউস’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
চট্টগ্রামের প্রধান দুটি কোভিড হাসপাতাল- চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আইসিইউ’তে এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ভর্তি হওয়া রোগীদের ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ রোগীই ছিলেন ডায়াবেটিকস রোগী। চটগ্রামে ডায়াবেটিকস রোগীদের আইসিউতে ভর্তির হার বিশ্বের অন্যান্য শহর যেমন- চীনের উহান, আমেরিকার নিউইয়র্ক এবং ইতালির চেয়ে বেশি।
গবেষণায় দেখা যায়, চট্টগ্রামে আইসিইউতে ভর্তি হওয়া ডায়াবেটিকস রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার ৬০ দশমিক ২ শতাংশ । অন্যদিকে, আইসিইউতে ভর্তি হওয়া ডায়াবেটিকস নেই এমন রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৪ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছিলেন। এছাড়া অন্যান্য সমস্যার মধ্যে হৃদরোগে ১৭ শতাংশ, শ্বাসকষ্ট ৭দশমিক ৯ শতাংশ, এবং কিডনির সমস্যা ৩ দশমিক ৪ শতাংশ রোগী রয়েছেন। অধিকাংশ রোগী শাসকষ্ট, জ্বর , কফ জনিত সমস্যা নিয়ে আইসিউতে ভর্তি হন। ডায়াবেটিকস আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী ৫১ বছরের উপরের এবং ৮৪ দশমিক ১ শতাংশই ছিল পুরুষ। যে সকল রোগীদের ডায়াবেটিকস অনিয়ন্ত্ৰত এবং ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল, তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার তুলনামূলক ভাবে বেশি দেখা যায়।
গবেষকরা জানান, আন্তর্জাতিকভাবেও ডায়াবেটিকসকে করোনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। পৃথিবীতে প্রতি ১০ জনের একজন ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে প্রায় এক কোটি লোক ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত। চট্টগ্রামে রয়েছে প্রায় ১০ লাখ। পৃথিবীতে ডায়াবেটিকসে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ অষ্টম।
ডায়াবেটিকসের তীব্রতার কারণে কোভিডের সঙ্গে ডায়াবেটিকসের সম্পর্ক, প্রতিক্রিয়া, সুস্থ হতে জটিলতা ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গবেষণা আরও জরুরি বলে মনে করছেন গবেষকরা।
গবেষণা কাজে অংশ নেওয়া সিডনির চিলড্রেন্স ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. অয়ন সাহা বাংলানিউজকে বলেন, যারা ডায়াবেটিকস অনিয়ন্ত্রিত, ইন্সুলিন নিতে হয় তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যে সকল ডায়াবেটিকস রোগীরা ৫০ বছরের উপরে, ডায়াবেটিকসের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট জটিলতা ভুগছেন। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) করোনা সংক্রান্ত নির্দেশনা কঠোর ভাবে মেনে চলা উচিত।
চট্টগ্রামের ডিজিজ বায়োলজি অ্যান্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপের তত্ত্বাবধানে গবেষণা তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ও করোনা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. এইচএম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের করোনা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. তারেকুল কাদের।
সৌজন্যে-বাংলানিউজ২৪.কম
Discussion about this post