এম এ খালেক
অগ্নিঝরা মার্চ মাস বাংলাদেশের জনগণের জীবনে সবসময়ই এক নতুন দ্যোতনা নিয়ে হাজির হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণের অনেক অর্জন এ ফাগুন মাসেই হয়েছিল। তাই ফাগুন মাস বা বসন্ত ঋতু আমাদের নানাভাবে উদ্বেলিত করে; কিন্তু এবারের মার্চ মাস আমাদের জীবনে একটি ভিন্ন মাত্রা নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশিদের জীবনে আর কখনোই মার্চ মাস এতটা তাৎপর্য নিয়ে আসবে কিনা সন্দেহ আছে। মূলত তিনটি কারণে এবারের মার্চ মাস আমাদের জাতীয় জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তাদের এক সভায় বাংলাদেশকে চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশ করেছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে কিনা তা নিয়ে যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল, তা দূর হলো। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে অনেকেই বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্তি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তারা মনে করেছিলেন, বাংলাদেশ যদি করোনা পরিস্থিতি সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে না পারে, তাহলে হয়তো উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উন্নীতকরণ বিলম্বিত হতে পারে। উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে নেপাল উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণের প্রাথমিক শর্ত পরিপালন করলেও দেশটি ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি সামাল দিতে না পারার কারণে আবারও স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে নেমে গেছে।
বাংলাদেশ যদি করোনাকালীন অর্থনৈতিক গতিধারা ঠিক রাখতে না পারত, তাহলে আমাদের কপালেও নেপালের মতো বিব্রতকর অভিজ্ঞতার কালিমা লেপন হতে পারত। কোনো দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণের জন্য তিনটি শর্ত পরিপালন করতে হয়। এগুলো হচ্ছে-প্রথমত, বিগত তিন বছরে দেশটির জনগণের মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় ১ হাজার ২২২ মার্কিন ডলার হতে হয়। দ্বিতীয়ত, মানবসম্পদ সূচক ৬৬ বা তার বেশি হতে হয়। তৃতীয়ত, আর্থিক ভঙ্গুরতা সূচক ৩২ বা তার কম হতে হয়। বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে এ তিনটি শর্তই পূরণ করেছে। কাজেই বাংলাদেশের সামনে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আর কোনো সমস্যাই রইল না। আগেকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিল। এখন তা ২ বছর পিছিয়ে ২০২৬ সাল নির্ধারণ করা হয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হবে বাংলাদেশের জন্য একটি বিরল অর্জন। এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি সফল বাস্তবায়নও বটে। কারণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক চক্রের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে বাংলাদেশিদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে কাজে লাগানো। মনে আছে, স্বাধীনতা অর্জনের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বা ‘বটম লেস বাস্কেট’ বলে উপহাস করেছিলেন। তারা ভাবতেন, বাংলাদেশ ৬ মাসও তার স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে পারবে না। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দুজন অর্থনীতিবিদ ‘বাংলাদেশ : এ টেস্ট কেস’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। এ বইতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ যদি ভবিষ্যতে অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকতে পারে, তাহলে যে কোনো দেশই টিকে থাকতে পারবে। সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত সেসব ব্যক্তির ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণ করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। এমনকি করোনাকালীন বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে। স্বাথীনতা-উত্তর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে বড় অর্জন। উল্লেখ্য, ষাটের দশকে বিশ্ব অর্থনীতিবিদরা স্বল্পোন্নত দেশের ধারণাটি প্রকাশ করেন। সে সময় বিশ্বের সব দেশকে অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে একটি হলো উন্নয়নশীল দেশ এবং অন্যটি উন্নত দেশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আবার দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। যেসব দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে তুলনামূলকভাবে কম শক্তিশালী, তাদের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭১ সালে প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা প্রণয়নের বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল-যাতে এসব দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হিসাবে গড়ে তোলার জন্য উন্নত দেশগুলো নানা ধরনের প্রণোদনামূলক সুবিধা দিয়ে থাকে। যেমন-উন্নত দেশের বাজারে স্বল্পোন্নত দেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়া আরও কিছু সুবিধা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
বাংলাদেশ ১৯৭৬ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর কাছ থেকে শুল্কমুক্ত জিএসপি সুবিধা পেয়ে আসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া জিএসপি সুবিধা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোটা সুবিধা বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে ব্যাপক অবদান রাখে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সবসময়ই সহায়ক ভূমিকা পালন করে চলেছে। ২০০৫ সালে বিশ্বব্যাপী মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু হওয়ার পর এক পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দেওয়া কোটা সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সীমিত পরিসরে জিএসপি সুবিধা প্রদান করে; কিন্তু নানা অজুহাতে সেই জিএসপি সুবিধাও এখন স্থগিত রয়েছে। এ অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে।
বাংলাদেশ ২০২৬ সালে চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া জিএসপি সুবিধা আপনাআপনি চলে যাবে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিবেচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে দেওয়া জিএসপি সুবিধা ২০২৬ সালের পরও তিন বছর অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি বেসরকারি সংস্থার প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর তার মারাত্মক বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হবে। জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহৃত হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করবে। কানাডা ১৮ শতাংশ, জাপান ১১ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়া ১২ শতাংশ, ভারত ১০ শতাংশ এবং চীন ১৩ শতাংশ শুল্কারোপ করবে। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য মূলত এসব দেশের ওপর নির্ভর করেই আবর্তিত হচ্ছে।
অনুমান করা হচ্ছে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠে আসার পর তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যেতে পারে ৪৮৪ কোটি ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার বা ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। বস্ত্র রপ্তানি কমে যেতে পারে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ মার্কিন ডলার বা ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হ্রাস পেতে পারে ১৬ কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলার বা ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। মাছ ও হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি কমে যেতে পারে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বা ১৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
অঞ্চল ও দেশভিত্তিক রপ্তানি কমে যেতে পারে-ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৫২৮ দশমিক ১৫ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৬ দশমিক ২৮ শতাংশ; কানাডা ৫৩ কোটি ৬১ লাখ মার্কিন ডলার বা ৪২ দশমিক ০৫ শতাংশ; জাপানে ৩৮ দশমিক ৮১ কোটি মার্কিন ডলার বা ৩দশমিক ৫৩ শতাংশ; দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮ দশমিক ৭৭ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং চীনে রপ্তানি কমতে পারে ৭ দশমিক ৬৫ কোটি মার্কিন ডলার বা ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। বাংলাদেশের রপ্তানি তালিকার সিংহভাগজুড়ে থাকা তৈরি পোশাক রপ্তানি হ্রাস পেতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে ৪৮৪ দশমিক ৪২ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ; কানাডা ৪৬ দশমিক ৮১ কোটি মার্কিন ডলার বা ৪২ দশমিক ৮২ শতাংশ; জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের ক্ষেত্রে এটি হ্রাস পেতে পারে যথাক্রমে ৩১ দশমিক ০২ কোটি মার্কিন ডলার বা ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ, ৭ দশমিক ৪০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৩২ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং ২ দশমিক ১০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।
বর্তমানে বিশ্বে মোট ৪৭টি স্বল্পোন্নত দেশ রয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর স্বল্পোন্নত দেশের সংখ্যা ৪৬-এ নেমে আসবে। ১৯৭১ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৬টি দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হতে সক্ষম হয়েছে। কয়েক বছর আগে প্রতিবেশী নেপাল উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক তালিকায় উত্তীর্ণ হলেও তারা ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি সামাল দিতে না পারার কারণে আবারও স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় নেমে এসেছে। যেসব দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তার মধ্যে মালদ্বীপ (২০১১) বাতসোয়ানা (১৯৯৪), ইকোইটোরিয়াল গিনি (২০১৭), সামোয়া (২০১৭), কেইপ ভার্দে (২০০৭) এবং ভানুয়াতু (২০২০)।
আরও কয়েকটি দেশ উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও চূড়ান্ত তালিকায় উঠে আসতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ধরনের দেশের মধ্যে নেপালের নাম আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। যেসব শর্ত পরিপালন করলে একটি দেশকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তার সবই বাংলাদেশ পূরণ করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার ফলে আগামীতে বেশকিছু সুবিধা হারাবে। যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে সবসময় শঙ্কার মধ্যে থাকেন, তাদের জন্য উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তিকরণ নিঃসন্দেহে বিস্ময়ের ব্যাপার। তারা এমনও বলতে শুরু করেছেন-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাবে এবং আরও কিছু সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। কাজেই উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তিকরণ হিতে বিপরীত হতে পারে।
কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশ ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ সঠিক নেতৃত্ব পেলে যে কোনো অসাধ্য সাধন করতে পারে। অনেকের নিশ্চয়ই মনে আছে, যখন ১৯৯১ সালে দেশ থেকে ওয়েটব্লু চামড়া রপ্তানি বন্ধ করে ফিনিশড লেদার রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তখন অনেকেই ‘গেলো গেলো’ রব তুলেছিলেন। তারা বলেছিলেন, চামড়া শিল্প এবার নিশ্চিতভাবেই ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু না, তা হয়নি; বরং বাংলাদেশের ফিনিশড লেদার গুডস এখন বিশ্ব বাজারে স্থান করে নিয়েছে। একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোটা সুবিধা প্রত্যাহারের পর অনেকেই বলেছিলেন, এবার নিশ্চিতভাবেই তৈরি পোশাক শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসবে; কিন্তু সেই শঙ্কাও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হওয়ার পর যারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন, তাদের সেই শঙ্কাও অমূলক প্রতীয়মান হবে। বাংলাদেশ বর্তমানে যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করে চলেছে, তা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ এখন যে কোনো অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম। তাই বলে আমাদের চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি কখনোই দিনের পর দিন অন্যের করুণাপ্রত্যাশী হয়ে থাকতে পারে না। উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হতে পারা বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল অর্জন। এটি একদিনে বা এমনি এমনি আসেনি। আগামীতে এ অর্জন ধরে রাখার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে হবে। বাংলাদেশ কখনোই মাথানত করে বাঁচবে না। এটি কোনো জাতির জন্যই কাম্য হতে পারে না। এখন আমাদের নতুন নতুন কৌশল প্রণয়ন করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করতে হবে। জাতি হিসাবে আমাদের অনেক অর্জন আছে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে যে কোনো অসাধ্য সাধন সম্ভব। আগামীতে আমাদের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা চালাতে হবে। কোনো কারণেই হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।
এ ব্যাপারে একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদের মন্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে। আমি তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? তিনি বললেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বিস্ময়কর অর্জন। বাংলাদেশ আগামীতে কিছু বিশেষ সুবিধা হারাতে পারে; কিন্তু সুবিধাপ্রাপ্তির আশায় আমরা চিরদিন অন্যের গলগ্রহ হয়ে থাকতে পারি না। আমাদের এখন চেষ্টা করতে হবে কীভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং অর্থনৈতিক জোটের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করা যায়।
এমএ খালেক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিষয়ক কলাম লেখক
Discussion about this post