শাহরিয়ার মোহাম্মদ রোজেন ও নাজিফ মাহবুব
করোনা মহামারি থেকে যখন আমাদের মধ্যে মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছে কার্যকর ভ্যাকসিন, ঠিক তখনই বিশ্বজুড়ে একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনার নতুন ধরন। যুক্তরাজ্য, সাউথ আফ্রিকা, ব্রাজিলের পর আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নিউইয়র্কে মিউটেশনের ফলে করোনার নতুন ধরনের উদ্ভব ঘটেছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। কেবল যুক্তরাজ্যের নতুন ধরনটিই ছড়িয়ে গেছে বিশ্বের ৯০টির বেশি দেশে।
করোনাভাইরাস একটি এম-আরএনএ ভাইরাস এবং এটি স্বাভাবিক যে এখানে মিউটেশন হবে। যদিও অধিকাংশ মিউটেশনই উদ্বেগের কারণ হয় না; কিন্তু যখন স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন হয় এবং ভাইরাসের বিপজ্জনক চরিত্রগত পরিবর্তন হয়, তখন সেটি বিশাল উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমন বিপজ্জনক ধরনের প্রথম উদ্ভব ঘটে যুক্তরাজ্যে। যুক্তরাজ্যের নতুন ধরনের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি এবং ৩৫ শতাংশের অধিক প্রাণঘাতী।
নতুন ধরনগুলোর ওপর টিকার কার্যকারিতা
করোনার নতুন ধরনগুলোর ওপর বর্তমানে প্রাপ্ত টিকার কার্যকারিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এটি স্বস্তির বিষয় যে যুক্তরাজ্যের নতুন ধরনের ওপর বর্তমানে প্রাপ্ত সব ভ্যাকসিনই কার্যকর। কিন্তু বড় ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা বা ব্রাজিলে সৃষ্ট ধরনটি নিয়ে। ‘ই ৪৮৪ কে’ মিউটেশনের উপস্থিতির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রাপ্ত নতুন ধরনটির মাঝে ‘প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়ানোর কৌশল’ বিদ্যমান। এর ফলে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা ভাইরাসটিকে সহজে শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে পারে না।
সম্প্রতি একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল থেকে জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন ধরনের বিপক্ষে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন কার্যকর নয়। এ কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার তাদের জনগণকে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও ভারতে প্রাপ্ত নতুন ধরনটির ওপর বর্তমানে প্রাপ্ত টিকাগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে মন্তব্য করা কঠিন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এর ওপর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কম থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
নতুন ধরন প্রতিরোধে করণীয়
বাংলাদেশে করোনার বিপজ্জনক কোনো ধরনের উপস্থিতির প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। আমরা বাংলাদেশিরা যে ভ্যাকসিন পাচ্ছি, তা আমাদের দেশে সংক্রমিত করোনাভাইরাসের বিপক্ষে কার্যকর। তবে বাংলাদেশকে নতুন ধরনগুলোর অনুপ্রবেশ রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো চিহ্নিত করে সেসব দেশ থেকে যাঁরা বাংলাদেশে প্রবেশ করবেন, তাঁদের জন্য কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা জরুরি। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের উচিত বেশি পরিমাণে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা, যাতে বাংলাদেশে অন্য দেশ থেকে প্রবেশ করা ‘অধিক সংক্রমণক্ষম স্ট্রেইন’ দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়। বিশেষত কেউ যদি পুনরায় করোনায় আক্রান্ত হন অথবা টিকা নেওয়ার পর আক্রান্ত হন, তাহলে তাঁদের জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী সিকোয়েন্সিংয়ের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।
ডা. শাহরিয়ার মোহাম্মদ রোজেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কানাডায় কর্মরত সিনিয়র পলিসি বিশ্লেষক।
ডা. নাজিফ মাহবুব কানাডায় সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশনের গবেষণা ও নীতি বিশ্লেষক
Discussion about this post