আব্দুল কাইয়ুম
সম্প্রতি আমাদের দেশে এবং ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা যায় করোনার টিকা গ্রহণেরও পরও বেশ কিছু ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এটা আমাদের সচকিত করছে। কারণ, আমরা এটাই জেনে এসেছি যে টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে সুরক্ষা পাওয়া যায়। শরীরে কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এর এক-দুই মাস পর বুস্টার ডোজ নেওয়ার দিন দশেকের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়া যায়। তাহলে কেন টিকা গ্রহণের পরও কারও কারও করোনা হচ্ছে? এ প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক এবং বিশেষ অনুসন্ধানের দাবি রাখে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ২৩ মার্চ ২০২১ এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত লেখা ছাপা হয়েছে। এতে ডালাসের একটি হাসপাতালকর্মীদের ওপর পরিচালিত জরিপের উদাহরণ দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে পূর্ণ টিকা গ্রহণের পর ৮ হাজার ১২১ জনের মধ্যে ৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ায় টিকা গ্রহণের দুই সপ্তাহ বা তারও পর ১৪ হাজার ৯৯০ জন কর্মীর মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে ৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এসব জরিপ থেকে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন।
তাঁদের মধ্যে কতজন করোনায় আক্রান্ত হবেন, তা বলা মুশকিল, তবে সংখ্যাটা খুব বেশি হবে না।
আমাদের দেশে এখনো সুনির্দিষ্ট জরিপ হয়নি। করোনার টিকা সম্পর্কে আরও বিশদ জানার জন্য এ ধরনের জরিপ জরুরি।
আমরা জানি, যুক্তরাজ্য, আফ্রিকা প্রভৃতি দেশে করোনার নতুন ধরনের স্ট্রেইন এসেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশেও নতুন স্ট্রেইনে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এর ফলে করোনার সংক্রমণ আগের চেয়ে দ্রুততর ঘটছে এবং এ ধরনের স্ট্রেইনে রোগের তীব্রতাও অনেক বেশি। তাই অনেকের মনে প্রশ্ন, টিকা গ্রহণের পরও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার একটি কারণ কি এই নতুন নতুন স্ট্রেইন হতে পারে? এর আগে গবেষকেরা বলেছেন, করোনার টিকায় নতুন স্ট্রেইনগুলো থেকেও সুরক্ষা পাওয়া যায়। এই বক্তব্য এখনো ঠিক আছে বলে গবেষকেরা বলছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির (সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) একটি ছোট দল বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছে। সংস্থার একজন প্রতিনিধিত্বকারী মুখপাত্র ক্রিস্টেন নর্ডলান্ড জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের কারণে এ ধরনের করোনা হচ্ছে।
স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে আরও কিছুদিন
দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। সেই বিবেচনায় স্কুল–কলেজ আরও কিছুদিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে বুঝেশুনেই স্কুল-কলেজ খোলা ভালো। না হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তবে বন্ধের মধ্যেও যেন শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে পারে, সেই সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।
আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
Discussion about this post