নাসরীন আফরোজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী ১০টি বিশেষ উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোগ ‘শিক্ষা সহায়তা’। একটি জ্ঞানভিত্তিক সুষম সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের মূল চালিকাশক্তি হলো পরিকল্পিত ও সার্বজনীন শিক্ষা কাঠামো গড়ে তোলা। প্রধানমন্ত্রীর সার্বজনীন শিক্ষা পরিকাঠামো তৈরির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট গঠনের পটভূমি
২০ এপ্রিল, ২০১০ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে স্বহস্তে একটি লিখিত নির্দেশনা প্রদান করেন। এ নির্দেশনার মূল লক্ষ্য ছিল, বিনা বেতনে ষষ্ঠ থেকে স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া। প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা ও মননের আলোকে স্বাপ্নিক দূরদৃষ্টি হলো-ট্রাস্ট শিক্ষিত জাতি গঠনে সহায়ক হবে, দারিদ্র্যবিমোচনে ভূমিকা রাখবে। অর্থাৎ সরকারি উপবৃত্তি প্রাপ্তির ফলে দরিদ্র অথচ মেধাবী তরুণ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যেমন নির্বিঘ্ন হবে, তেমনি শিক্ষাজীবন শেষে স্বনির্ভর তরুণ জনগোষ্ঠী একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠনে নিজেদের নিয়োজিত করবে।
এ লক্ষ্যে ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের সম্ভাব্যতা পরীক্ষাপূর্বক প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ১৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১৭ আগস্ট, ২০১০ তারিখের প্রজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি উপকমিটি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (উন্নয়ন) আহ্বায়ক করে একটি টেকনিক্যাল উপকমিটি গঠন করা হয়। উভয় উপকমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩১ জানুয়ারি ২০১১ তারিখের পত্রে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন সম্পর্কিত প্রতিবেদন, নীতিমালা ও আইনের খসড়া পরিকল্পনা কমিশনে পেশ করা হয়।
পরবর্তী সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে সারসংক্ষেপের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সমীপে পেশ করা হয়। পরিকল্পনামন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড আইন, ২০১১-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়। ১১ মার্চ, ২০১২ তারিখে নবম জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট বিল, ২০১২ পাশ হয়। এ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী চিন্তা বিদ্যমান-সরকার বদল হলেও যাতে এ ট্রাস্ট ফান্ড বন্ধ না হয় এবং কার্যক্রম চলমান থাকে।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট স্থাপন
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১২-এর ৩(১) উপধারার বিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট নামে একটি ‘ট্রাস্ট’ স্থাপন করা হয়। এ আইনের ৭(১) উপধারার বিধান অনুযায়ী ৫ (পাঁচ) সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি ও ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। এ আইনের ৮(১) উপধারা অনুযায়ী ২৬ (ছাব্বিশ) সদস্যবিশিষ্ট একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি। আইন অনুযায়ী সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত এবং পদাধিকার বলে ট্রাস্টের সদস্য সচিব।
ট্রাস্ট তহবিল গঠন
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরে সিডমানি হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের স্থায়ী তহবিলে ১ হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয়। এ অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর হিসাবে জমা রাখা হয় এবং এ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তি, আর্থিক সহায়তা, অনুদান ও উচ্চশিক্ষায় ফেলোশিপ প্রদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের প্রধান কার্যাবলি
ক. ষষ্ঠ থেকে স্নাতক ও সমমান শ্রেণি পর্যন্ত দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিনা বেতনে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি ও উপবৃত্তি প্রদান;
খ. ট্রাস্ট ফান্ডের জন্য অর্থ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিনিয়োগ;
গ. সুবিধাভোগী নির্বাচনের মানদণ্ড নির্ধারণ এবং সুবিধাভোগী নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিটি গঠন;
ঘ. উপবৃত্তির হার ও পরিমাণ নির্ধারণ;
ঙ. ট্রাস্টের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও হেফাজতকরণ;
চ. বোর্ডের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের নিমিত্তে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণসহ যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ এবং এতদবিষয়ে কারিগরি কমিটি গঠন;
ছ. ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক ট্রাস্ট ফান্ড গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা;
জ. মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্রাস্ট ফান্ড সংক্রান্ত কাজে সম্পৃক্তকরণ;
ঝ. শিক্ষা কার্যক্রমে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সমাজের বিত্তশালীদের সম্পৃক্ত করা;
ঞ. শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধসহ সব পর্যায়ে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিকরণ; এবং
ট. স্নাতকোত্তর পর্যায়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য দেশের অভ্যন্তরে এমফিল ও পিএইচডি কোর্সে নিবন্ধিত বা গবেষণায় নিয়োজিত গবেষকদের ফেলোশিপ ও বৃত্তি প্রদান।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের কার্যক্রম ও ডিজিটালাইজেশন
রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে জনগণের দোরগোড়ায় সহজে, কম সময়ে, ঝামেলাহীনভাবে সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তি, আর্থিক সহায়তা, আর্থিক অনুদান এবং উচ্চশিক্ষা সহায়তার অর্থ প্রদান করা হয়; যার ফলে শিক্ষার্থীরা সহজে ও ঝামেলাহীনভাবে উপবৃত্তি, আর্থিক সহায়তা, আর্থিক অনুদান এবং উচ্চশিক্ষা সহায়তার অর্থ পেয়ে থাকে। ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (MIS)-এর আওতায় উপবৃত্তি প্রদানের লক্ষ্যে ট্রাস্ট থেকে ই-স্টাইপেন্ড সিস্টেম বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ পদ্ধতির ফলে দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত উপকারভোগীদের সুবিধাজনক সময় এবং স্থানে (গ্রাম, ইউনিয়ন) এবং পছন্দমতো ব্যাংকিং মাধ্যমে উপবৃত্তির অর্থ প্রদান নিশ্চিত হচ্ছে।
ক. উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে ষষ্ঠ থেকে স্নাতক ও সমমান শ্রেণি পর্যন্ত দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিনা বেতনে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি, উপবৃত্তি ও টিউশন ফি প্রদানের বিধান রয়েছে। উপবৃত্তি প্রদানের ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি, ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষার প্রসার, বাল্যবিবাহ রোধ, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মেয়েদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিসহ শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে ট্রাস্ট সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের দরিদ্র ও মেধাবী নির্বাচিত ৭৫ শতাংশ ছাত্রী ও ২৫ শতাংশ ছাত্রের মাঝে সর্বমোট ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬০৯ জন ছাত্রছাত্রীকে ৭৪৮,৪৯,৫৬,৫০০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব খাত থেকে সরাসরি G to P পদ্ধতি অনুসরণ করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে উপবৃত্তির অর্থ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বর্তমানে কাজ করে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট।
খ. দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণে আর্থিক সহায়তা প্রদান
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট উপবৃত্তি বিতরণের পাশাপাশি দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। এ লক্ষ্যে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণে আর্থিক সহায়তা প্রদান নির্দেশিকা-২০১৫ এর আলোকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির আর্থিক সহায়তা বাবদ শিক্ষার্থী প্রতি মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫ হাজার টাকা, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৮ হাজার এবং স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে ১০ হাজার টাকা হারে সর্বমোট ৯৭৬ জন ছাত্রছাত্রীকে ৩৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
গ. দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান নির্দেশিকা-২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণে গুরুতর আহত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদানের ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান নির্দেশিকা-২০১৫ এর আলোকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন আর্থিক অনুদান বাবদ মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত সর্বমোট ৩১ জন ছাত্রছাত্রীকে ৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
ঘ. এমফিল ও পিএইচডি কোর্সে ফেলোশিপ ও বৃত্তি প্রদান
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে এমফিল ও পিএইচডি কোর্সে ফেলোশিপ ও বৃত্তি প্রদানের প্রণীত নির্দেশিকা-২০১৭ অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকে এমফিল কোর্সে মাসিক ১০ হাজার টাকা এবং পিএইচডি কোর্সে মাসিক ১৫ হাজার টাকা করে ফেলোশিপ ও বৃত্তি প্রদান হচ্ছে। এমফিল/পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হওয়া যে কোনো গবেষক গবেষণাকর্ম সম্পাদনে ওই ফেলোশিপ ও বৃত্তি পেতে পারেন। এ পর্যন্ত ১৫ জন এমফিল গবেষককে সর্বমোট ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং ১৪ জন পিএইচডি গবেষককে সর্বমোট ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ফেলোশিপ ও বৃত্তি বাবদ প্রদান করা হয়েছে।
ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা
ক. শিক্ষার মানোন্নয়নে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ ও এর বাস্তবায়ন এবং শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ;
খ. নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আত্মপ্রত্যয়ী নারী জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ;
গ. শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে তারুণ্যের শক্তিকে ইতিবাচক কাজে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ;
ঘ. সার্বজনীন শিক্ষা পরিকাঠামোর আওতায় সুবিধাবঞ্চিত সব শ্রেণির শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে সব ধরনের শিক্ষা সহায়তা/উপবৃত্তি প্রদানের কার্যক্রমকে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে সফল করার লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ।
শিক্ষা সুযোগ নয়; শিক্ষা সার্বজনীন মানবাধিকারের অংশ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন বলেই অর্থের অভাবে যেন কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন থমকে না যায়-সেজন্য শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট গঠনের স্বপ্ন দেখেছেন। তার সুচিন্তিত নির্দেশনার আলোকে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক পর্যায়ের সব উপবৃত্তি কার্যক্রম সমন্বিত ও একীভূতরূপে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীনও এ কার্যক্রম থেমে থাকেনি। গত ১৪ মে, ২০২০ তারিখে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০১৯ সালের স্নাতক পর্যায়ের উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতিতে উপবৃত্তি বিতরণ করেন। ২০২০ সালের উপবৃত্তি প্রদানের লক্ষ্যে ই-স্টাইপেন্ড সফটওয়্যার ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের (ষষ্ঠ-দ্বাদশ) শিক্ষার্থীদের G to P পদ্ধতিতে উপবৃত্তি প্রদানের জন্য গৃহীত নিবন্ধন কার্যক্রম বর্তমানে চলমান। মহামারি আমাদের কোনো কার্যক্রমকেই বাধাগ্রস্ত করতে সক্ষম হবে না-এ অঙ্গীকার সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট কাজ করে চলেছে।
একজন সরকারপ্রধান কতটা মানবদরদি ও শিক্ষানুরাগী হলে মেধাবী অথচ দারিদ্র্যের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত তারুণ্যকে শিক্ষার মূলধারায় টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট হতে পারেন-তার বাস্তব ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট। সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবনঘেঁষা প্রত্যন্ত শ্যামনগর উপজেলার মাধবী রানী মণ্ডল শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের উপবৃত্তি পেয়ে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত। আজ তিনি খুলনা বেতারের একজন তালিকাভুক্ত লোকসংগীত শিল্পী। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সিলেটের রহিমা আক্তার মনি সুস্থ দেহে আবারও শিক্ষাজীবনে ফিরে গেছেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের অনুদান পেয়ে। সাতক্ষীরার মাধবী রানী মণ্ডল কিংবা সিলেটের রহিমা আক্তার মনির মতো অসংখ্য শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন চলমান রয়েছে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের কল্যাণে।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট সার্বজনীন শিক্ষা অধিকার পরিকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করে চলেছে। সে দিন দূরে নয়; যেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প-২০৪১ সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হবে। একটি শিক্ষিত অনুসন্ধিৎসু তরুণ জনগোষ্ঠী পালটে দেবে পৃথিবীর বুকে লাল-সবুজের পতাকাতলে গর্বিত সোনার বাংলাকে; সার্থক রূপায়ণের মাধ্যমে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে। ২০৩৫ সালে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে নেবে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’-এ লক্ষ্য সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় শিক্ষার আলোকবর্তিকা চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট।
নাসরীন আফরোজ : ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট
Discussion about this post