ড. মিল্টন বিশ্বাস
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৯ সালের মে মাসে। এই হিসেবে তাঁর ২ বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে কোভিড-১৯ মহামারিতে শিক্ষা সংকটে ইউজিসির ভূমিকা এবং অন্যান্য তৎপরতার একটি চিত্র পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে করোনার কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলে একই বছর শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম।
সেই কার্যক্রমে নিবিড়ভাবে ইউজিসির সম্পৃক্ততা, শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ডেটা ক্রয়ের ব্যবস্থাকরণ ও গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা প্রবর্তনে উদ্যোগ নেওয়া এবং সর্বোপরি কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম তদন্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা ছিল উল্লেখযোগ্য। আরো ছিল যুগোপযোগী শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন। এছাড়া ছিল শিক্ষক ও গবেষকদের প্রকল্প অনুমোদন ও ফেলোশিপ প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পন্নকরণ। তবে যেকোনো সময়ের চেয়ে সুবর্ণ জয়ন্তীর বাংলাদেশে ইউজিসির দায়িত্ব ও কর্তব্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৪৯টি পাবলিক, ১০৭টি বেসরকারি এবং ৩টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার বিশাল দায়িত্ব এখন ইউজিসির কাঁধে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী এবং ১৫ হাজার শিক্ষক রয়েছেন।
এত দিন ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের মতো করে যোগ্যতা নির্ধারণ করে শিক্ষক নিয়োগ করে এসেছে। এতে দেখা গেছে অনেকক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের সুবিধামতো যোগ্যতা ঠিক করেছে। এমনকি কোনো কোনো উপাচার্য নিজের স্বজনদের নিয়োগ দিতে নিয়োগের যোগ্যতা শিথিল করছেন বলে ইউজিসির তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে। এসব কারণে অনেক সময় অযোগ্য প্রার্থীরাও শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন।
ওয়েবসাইটে বর্ণিত ইউজিসি’র ইতিহাস ও কার্যক্রম হলো এরকম- ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার গুরুত্বকে অনুধাবন করেছিলেন। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরবর্তীকালে ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ১০ এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিধিবদ্ধ হয়। সেই সময়ে ইউজিসির কার্যক্রম ছিল তৎকালীন ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা নিরূপণ। সময়ের সাথে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার পরিধি ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করায় বর্তমানে ইউজিসির কার্যক্রমগুলো হলো : সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান, উচ্চ স্তরের শিখন-শেখানো পদ্ধতির মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়তা প্রদান, সর্বোচ্চ উদ্ভাবনী গবেষণা ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করা, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সুশাসন সংক্রান্ত বিষয়সমূহের উন্নয়ন ঘটানো। এছাড়াও ইউজিসি উচ্চশিক্ষার নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে মান নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী সরকারকে পরামর্শ প্রদান করে থাকে।’
করোনাকালে শিক্ষায় ইউজিসির ভূমিকা :
করোনা মহামারির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে ২০২০ সালে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বল্পমূল্যে ডেটা প্যাক দেওয়ার জন্য মোবাইল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ইউজিসি যোগাযোগ করে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এক্ষেত্রে টেলিটক, রবি এবং গ্রামীণ ফোন এগিয়ে আসে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়।
যেমন রবি কোম্পানি থেকে তখন বলা হয়- ব্যবহারকারী এক মাসের জন্য ২২০ টাকায় ৩০ জিবি ডেটা পাবেন। এর মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জুম, টিমস, গুগল মিট, গুগল ক্লাসরুম, জিমেইল ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এই ডেটা প্যাক দিয়ে নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটার ব্যবহার করা যাবে না।
ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর কাজী শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমের প্রধান দুটি সমস্যা ডিভাইস ও ডেটা। ইউজিসি’র পদক্ষেপ ও দেশের মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর আকর্ষণীয় ডেটা অফারের মাধ্যমে দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। জাতীয় স্বার্থে এগিয়ে আসার জন্য তিনি কোম্পানিগুলোকে ধন্যবাদ জানান।
সংকটকালীন উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে ফোন কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ ছিল সময়ের দাবি। এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বর্তমান সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। শিক্ষার্থীরা অনলাইন শিক্ষায় আরো বেশি মনোযোগী হয়েছে।
মহামারির মধ্যে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নেবার জন্য দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম বেগবান করা এবং শিক্ষার্থীদের পাঠক্রমে বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ত করার জন্য উপাচার্যদেরকে ১৫ অক্টোবর(২০২০) আহ্বান জানায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। বলা হয়, শিক্ষার্থীদের বিনাসুদে স্মার্টফোন ও বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ প্রদানে ইউজিসি’র উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে বলা হয় ইউজিসি’র চাওয়া ভর্তি পরীক্ষা যেন কোনোক্রমে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, সমগ্র জাতি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা চাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দরকার। সেসময় বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা মোটেও সমীচীন হবে না। ইউজিসি’র পরামর্শ মোতাবেক গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য জগন্নাথ বিশ্বিবিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের নেতৃত্বে একত্রিত হয়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই এই ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা গ্রহণ করবে।
বিশ্ব র্যাংকিং-এ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান নিয়ে ভেবেছে ইউজিসি।ক্রমাগত নিম্নমুখী মান কীভাবে উন্নীত করা যায় তা নিয়ে তারা সচেষ্টও হয়েছেন।বিশ্ব র্যাংকিং-এ স্থান পাওয়ার বিষয় নিয়ে ড. কাজী শহীদুল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন বাস্তবায়নে ২১-সদস্য বিশিষ্ট তত্ত্বাবধান কমিটির প্রথম সভায় সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান জানান, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা ও বিশ্ব র্যাংকিং-এ স্থান পেতে ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল, সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও ইউনিভার্সিটি টিচার্চ টেনিং একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন ২০১৮-২০৩০ এ বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে ও বিশ্ব র্যাংকিং-এ স্থান পেতে এসব প্রতিষ্ঠান কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাঠামো ও স্থাপনের স্বরূপ নির্ধারণে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা এবং ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোর্স ও ল্যাব অ্যাক্রিডেটেড করার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। নিয়মিতভাবে ও পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলোর মান তদারকি করা হবে।
আসলে ‘‘স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন ২০১৮’’ ২০৩০ পর্যন্ত সময়ের প্রকল্প। এই সময়ে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন বাস্তবায়ন করতে হলে নিবিড়ভাবে এটি তত্ত্বাবধান ও তদারকি করা প্রয়োজন। এছাড়া স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়েও কৌশলগত পরিকল্পনা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান-এর আওতায় ২০২২ সালের মধ্যে উচ্চশিক্ষা খাতে জিডিপির বরাদ্দ ২ উন্নীত করা আবশ্যক। এছাড়া, স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানে ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের উচ্চশিক্ষা খাতে জিডিপির বরাদ্দ ৬ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইউজিসি’র বর্তমান চেয়ারম্যানের আমলে ১৯ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মধ্যে এক মতবিনিময় সভায় কমিশনের বিদ্যমান বিদেশি ডিগ্রির সমতাবিধান নীতিমালা যুগোপযোগী করার বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়। এরপর নীতিমালা যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন :
গত ২ বছরে দেশের ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করেছে ইউজিসি। ২০২০ সালের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাস হালনাগাদ করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের তাগাদা দেয় ইউজিসি। উল্লেখ্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে প্রোগ্রম অনুমোদনের শর্ত মোতাবেক প্রতিটি প্রোগ্রাম অনুমোদনের তারিখ থেকে প্রতি ০৪ বছর অন্তর অন্তর অনুমোদিত সিলেবাসসমূহ কমিশন প্রণীত স্ট্যান্ডার্ড সিলেবাসের গাইডলাইন অনুসরণে হালনাগাদ করার জন্য ২০১৯ সালে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উচ্চশিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনের ক্ষেত্রে আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম, বিষয়ে বৈচিত্র্য আনয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নবতর জ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচন অপরিহার্য উপাদান। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও গুণগত মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতকরণে জরুরি বলে কমিশন মনে করে। অনুমোদিত চলমান প্রোগ্রামসমূহ হালনাগাদ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এজন্যই আবশ্যক।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিগত ০৭-০৫-২০২০, ২০-০৫-২০২০ এবং ১৭-০৮-২০২০ তারিখে কমিশন কর্তৃক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন এবং শিক্ষার্থী ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উক্ত নির্দেশনায় ল্যাবরেটরি ভিত্তিক সকল কোর্সের ব্যবহারিক ক্লাস এবং পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর পরই অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ করে সরাসরি শ্রেণিকক্ষে সম্পন্ন করতে হবে মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। কিন্তু নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রলম্বিত হওয়ায় এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ভবিষ্যত কর্মজীবনের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে সর্বশেষ সেমিস্টারের ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণের জন্য ২০২০ সালের নভেম্বরে ৭টি নির্দেশনা দেয় ইউজিসি।
বলা হয়- ওই নির্দেশনা শুধু অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের সর্বশেষ সেমিস্টারের ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে; এক দিনে ১টি প্রোগ্রামের ১ টির বেশি ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ করা যাবে না; স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্যবিধি ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা (যেমন: বাধ্যতামূলক ফেস মাস্ক পরিধান, শারীরিক দূরত্ব, ক্যাম্পাস ও ক্লাসে স্যানিটাইজার সরবরাহ নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি) কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে; প্রতি ক্লাসে একসাথে অনধিক ১০ (দশ) জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে; শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর কেবল আধা ঘণ্টা আগে ক্যাম্পাসে আগমন এবং তা শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে ক্যাম্পাস থেকে প্রস্থান নিশ্চিত করতে হবে; সংশ্লিষ্ট কোর্সের মৌখিক পরীক্ষা অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে; ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষার হলে প্রতিজন শিক্ষার্থীর মাঝে দূরত্ব থাকতে হবে ন্যূনতম ৬ (ছয়) ফুট। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও উক্ত দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে; এবং ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষার কারণে কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। এ ব্যাপারে কমিশন কোন দায়ভার গ্রহণ করবে না। উপরন্তু ০৭-০৫-২০২০ তারিখে জারিকৃত সাধারণ নির্দেশাবলি যথাযথ প্রতিপালন ও অনুসরণ নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষণের উদ্যোগ :
২০২০ সালের ৩ নভেম্বর প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে আইনানুযায়ী ন্যায্য হারে কোটা সংরক্ষণ করতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি অনুরোধ জানায় ইউজিসি। এর আগে, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানুয়ারি মাসে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে এক চিঠিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষিত করে মূলধারায় সম্পৃক্ত করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। ইউজিসি’র আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেনে নেয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং তারা সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হয়ে একটি সম্মানজনক জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে ‘‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’’- এর প্রতি সম্মান রেখে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোটা সংরক্ষণ ও অন্যান্য নিয়মকানুন শিথিল করা সাপেক্ষে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বহু প্রতীক্ষিত আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া ও সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে অবগত করার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।
বাজেট বরাদ্দ :
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ইউজিসি’র প্রত্যাশা প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, আমরা চাই, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার সুনিশিচত করবে। একারণে ২০২০ সালে মাস্টার রোল ও চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ বন্ধের আহ্বান জানানো হয় ইউজিসি থেকে।
লেখাবাহুল্য, ৪৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাদ্দের কারণে অনেক কাজ সম্পন্ন হয় না। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থের অপচয় করা হয়। এজন্যই ২০২০ সালে বাজেট পাশের পর অক্টোবর মাসে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মদক্ষতা যাচাই করে বাজেট বরাদ্দের কথা বলা হয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তরফ থেকে। একইসঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তুলতে গবেষণায় বরাদ্দের পরিমাণও বৃদ্ধি করা হবে বলে জানায় ইউজিসি। কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে বলা হয়, এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযোজ্য নয়।
বাজেট সম্পর্কে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা খুবই দরকার। আর্থিক কাজে ভুলের কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখাতে এক পয়সা পর্যন্ত ছাড় দেওয়া যাবে না। তবে বাজেটে বরাদ্দকৃত টাকা যাতে অলসভাবে পড়ে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে তিনি পরামর্শ দেন। তিনি সকলকে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের আইন-কানুন মেনে এবং ইউজিসি’র অনুমোদন নিয়ে দাপ্তরিক কাজ সম্পাদন করার অনুরোধ করেন।
ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. আবু তাহেরও বলেন, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ যাতে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হয়, শিক্ষায় গুণগতমান বজায় রেখে এগিয়ে যায় এবং বিশ্ব র্যাংকিং এ সম্মানজনক স্থান করে নিতে পারে সেজন্য গবেষণায় বরাদ্ধ বৃদ্ধি করা হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামীর বাজেট বরাদ্দ বিষয়ে তিনি বলেন, কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বাজেট বরাদ্দের কথা ভাবছে কমিশন। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মদক্ষতা কমে গেলে সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিচে নেমে যায়। মনে রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন মানে যথেচ্ছার নয়। আর্থিক বিষয়ের জন্য অবশ্যই ইউজিসি’র অনুমোদন নিতে হবে। সিনেট-সিন্ডিকেটে অর্থ সংক্রান্ত বিষয় পাশ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারের আর্থিক বিধি-বিধান ও পে-স্কেল অনুসরণ করতে হবে।
তবে একথা ঠিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। স্ট্রাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন ইন বাংলাদেশ-২০৩০ এ শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্ধ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। তবে খাতওয়ারি বরাদ্দকৃত টাকা প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করাও দরকার।
এর আগে ১৮ অক্টোবর (২০২০) ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেছিলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়ম সহ্য করা হবে না। আর্থিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সকলকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং বিদ্যমান আর্থিক নিয়মাবলি শতভাগ অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইচ্ছেমতো আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে উপাচার্য যদি আর্থিক বিষয়ে আউট অব লাইন করেন, কোষাধ্যক্ষ এবং অর্থ হিসাব বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব প্রথমে বিষয়টি তাঁকে অবহিত করা।
এরপরও উপাচার্য যদি কোনো অনিয়ম করেন, তাহলে এর দায়ভার তাঁকেই (উপাচার্য) নিতে হবে। যদি বিশেষ প্রয়োজন হয় কিংবা কাজটি করার ক্ষেত্রে কোষাধ্যক্ষ এবং অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালকের ওপর চাপ থাকে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ইউজিসি’র পরামর্শ ও অনুমোদন নিয়ে কাজটি সম্পাদন করতে পারেন। বাজেট এবং আর্থিক বিষয় যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, শুধু বাজেট তৈরি করলেই হবে না, বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নে এক খাতের বরাদ্দকৃত অর্থ আরেক খাতে ব্যয় অগ্রহণযোগ্য। আর্থিক বিষয়ে পূর্ণ নিয়মের মধ্যে চলতে হবে। এ খাতে ঊনিশ-বিশ হওয়া যাবে না। প্রতিটি খাতের ব্যয় সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।
বাজেট বাস্তবায়নে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এবং অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালককে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছেন তিনি। পাবলিক বিশ্ববিধ্যালয়ের আর্থিক স্বাধীনতা বিষয়ে তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক স্বাধীনতা আর আর্থিক স্বাধীনতা এক নয়। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব আইন, নীতিমালা ও বিধি-বিধান রয়েছে। এগুলো পূর্ণমাত্রায় মেনে চলতে হবে। অর্থ হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। এখাতে শৃঙ্খলা না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় সুন্দরভাবে পরিচালনা করা যাবে না।
বর্তমান চেয়ারম্যান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পসমূহ সময়মতো শেষ করার বিষয়ে সর্বদা সচেতন। যেমন, ২০২০ সালের মার্চ মাসে তিনি ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি প্রকল্পের মেয়াদ কোনোভাবেই বৃদ্ধি করা হবে না বলে জানান। ঢাকার কেরানীগঞ্জে ২০.১৫ একর জায়গায় ৪১,৩৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ আগামী ২০২১ সালে শেষ হবে। একনেকে ২০১৭ সালে প্রকল্পটির ব্যয় অনুমোদিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৮,২০০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, দেশের মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন, আধুনিকীকরণ এবং ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য শেখ হাসিনা সরকার ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। এছাড়া, উচ্চশিক্ষাস্তরে মাদ্রাসার ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য আধুনিক শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা এর অন্যতম লক্ষ্য।
অনিয়ম ঠেকাতে কঠোর ইউজিসি :
বর্তমান চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় ইউজিসি গত ২ বছরে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্ত করে অন্তত চার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়মের পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য সবসময়ই সচেষ্ট থাকতে দেখা গেছে ইউজিসিকে। বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট যাতে না হয় সেজন্য সক্রিয় রয়েছে এই কর্তৃপক্ষ।
পত্রিকায় প্রকাশিত সূত্র অনুসারে প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ এ সম্পর্কে বলেছেন- ‘তদন্ত করে দোষী সাব্যস্ত হবার পরেও উপাচার্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়াটা হতাশাজনক। এটি একটি ভুল বার্তা এবং এক প্রকার দায়মুক্তি দেওয়া। এর ফলে অন্য শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকরা মনে করবেন যে, অন্যায় করার পর তাঁরাও বিনা শাস্তিতে ছাড় পাবেন।’ আসলে তদন্তের পরে যদি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে দোষীরা আবারও এ ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ পেতেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম কিংবা আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বিধি বহির্ভূত তহবিল তছরূপ, জনবল নিয়োগে ইউজিসির নির্দেশিকা লঙ্ঘন, ক্ষমতার অপব্যবহার প্রভৃতি প্রমাণ পাওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেই ইউজিসি দায়িত্ব শেষ করে নি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদেরকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা ঠিক নয় বলে সুপারিশও করেছে। ইউজিসি’র এ পর্যন্ত কোনো তদন্তে ‘একতরফা ও পক্ষপাতদুষ্ট’ হিসেবে চিহ্নিত হয়নি। বরং সম্মানিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও মনগড়া’ প্রতিবেদন উপস্থাপন সবসময়ই বর্জন করেছে।
শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির যুগোপযোগী নীতিমালা :
ড. কাজী শহীদুল্লাহ আমলের অন্যতম কাজ হলো নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন। শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যদের নিয়োগ দেওয়ার জন্যই ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিয়েছে ইউজিসি। কাজটি করতে অনেক পর্যবেক্ষণ, রীতি-নীতি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয়েছে। ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নয়নের যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণের নির্দেশিকায়’ শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিভিন্ন নিয়মকানুন রয়েছে। এতে শিক্ষকদের পদোন্নয়নের (আপগ্রেডেশন) নিয়মকানুনও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এটি অনুমোদন দিয়েছে। এখন কেবল বাস্তবায়নের অপেক্ষা।
এত দিন ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের মতো করে যোগ্যতা নির্ধারণ করে শিক্ষক নিয়োগ করে এসেছে। এতে দেখা গেছে অনেকক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের সুবিধামতো যোগ্যতা ঠিক করেছে। এমনকি কোনো কোনো উপাচার্য নিজের স্বজনদের নিয়োগ দিতে নিয়োগের যোগ্যতা শিথিল করছেন বলে ইউজিসির তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে। এসব কারণে অনেক সময় অযোগ্য প্রার্থীরাও শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। নীতিমালার উল্লেখযোগ্য দিক হলো অধ্যাপক পদের নিয়োগ। এটি যেন সস্তা না হয় এজন্য আগের নিয়ম কিছুটা পাল্টেছে। অধ্যাপক পদে (গ্রেড-৩) নিয়োগে সহযোগী অধ্যাপক পদে ন্যূনতম ১০ বছরসহ ২২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এখানেও এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা ছাড় পাবেন। আর মোট ১২টি প্রকাশনা থাকতে হবে। সামগ্রিকভাবে এই নির্দেশিকা বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের উচ্চশিক্ষা সমৃদ্ধ হবে।
উপসংহার :
২০১৯ সালের মে মাস থেকে প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ’র দায়িত্বকাল অতিবাহিত হচ্ছে। এ সময় ইউজিসি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আদর্শ তীর্থস্থল হয়ে উঠেছে।এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে কোনো সংকটে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের দিকে চেয়ে থাকে।ইউজিসি’র দিক-নির্দেশনা নিয়ে সেই অনুযায়ী প্রশাসন পরিচালিত হয়।অপরদিকে ইউজিসি’র তৎপরতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে অনিয়ম কমে এসেছে। বরং গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্ঞান-অন্বেষী অধ্যাপকরা সেদিকে মনোযোগী হয়েছেন।আসা করা যায়, প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ’র আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা বিশ্ব র্যাংকিং-এ এগিয়ে যাবে।
লেখক : ইউজিসি পোস্ট ডক ফেলো এবং বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
Discussion about this post