গত বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ হতে বিশ্বের দেশে দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো করোনা মহামারির কারণে বন্ধ হতে শুরু করে| দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের দেশেও সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে| গুটিকয়েক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইংরেজি শিক্ষা মাধ্যম স্কুলগুলো শুরু হতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিলেও পরবর্তীতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে থাকে| তবে সব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী ক্লাস রুমের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রয়েছে|
শিক্ষার্থীদের একটা গ্রহণযোগ্য অংশ যারা প্রধানত গ্রামে অবস্থান করছে ইন্টারনেট না থাকা, কিংবা যথাযথ ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির অভাব অথবা অনলাইন ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকার কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না|
প্রযুক্তির ঘাটতি ও সক্ষমতার অভাবে অনলাইন বা দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে আবার শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না| আবার ক্লাসরুম এবং দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে পাঠদানের উপযোগিতা ও সন্তুষ্টির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য থাকায় শিক্ষার্থীরা কতটুকু উপকৃত হচ্ছে সে বিষয়ে বিস্তর ভিন্নমত রয়েছে| সম্প্রতি আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর চালিত একটি বড় জরিপে (যেটির ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রকাশিত হয়নি) অনলাইনে চলমান শিক্ষা কার্যক্রম ক্লাস রুমের শিক্ষা কার্যক্রমের কতটা পরিপূরক হিসেবে গণ্য হতে পারে সে ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া গেছে|
উন্নত বিশ্বের শিক্ষা পদ্ধতি আগে থেকেই প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অনেকাংশে সুস্থভাবে চালিয়ে নিতে পারলেও অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণের সন্তুষ্টির ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের একই রকম নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে| অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কিন্টারগার্ডেনের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের শ্লথগতি ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, জরিপে এমনটিও মিলেছে| মাসের পর মাস ধরে ক্লাসের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকগুলো সর্বজনীন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে|
এখনো প্রতিটি দেশ করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে, কিছু কিছু দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিচ্ছে বা দিলেও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে পরক্ষণেই আবার বন্ধ করছে| সংকটের কথা চিন্তা করে অধিকাংশ দেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রেখেছে| কেউ কেউ আবার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে খুলতে চাইলেও পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় খুলতে পারছে না| করোনার প্রাদুর্ভাব এর মাত্রার তথ্য পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যতটা সহজ হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ বা খোলা রাখার ব্যাপারে, ঠিক ততটাই কঠিন হচ্ছে বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবে ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের সময়েও লকডাউন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে| নিম্ন ও মধ্যবিত্ত দেশগুলিতে এটি এখন একটি সাধারণ চর্চার বিষয়ে পরিণত হয়েছে|
ইউনিসেফ এর মতে বিশ্বের প্রায় ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী করোনা মহামারীর কারণে ক্ষতির শিকার হয়েছে| করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব ও লকডাউন এর কারণে প্রায় ১৬০ কোটি শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না| ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি, অপুষ্টি, পরিবারের আয় কমে যাওয়া বা বন্ধ হওয়া, স্থূলতা, শৃঙ্খলা বোধ ও খেলাধুলার অভাব, শিক্ষা হতে ঝরে পড়া, বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাসের জড়িয়ে পরা সহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা| এতদসত্ত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঢালাওভাবে খুলে দেওয়া না হলেও পাইলট প্রজেক্ট এর আওতায় খুলে দেওয়ার ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি|
এই সমস্যাগুলোর কিছু সমস্যা দৃশ্যমান হলেও,অধিকাংশ সমস্যা দৃষ্টির অগোচরে ঘটছে| এর অন্যতম হলো মানসিক স্বাস্থ্যের চরম অবনতি| উন্নত বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্যের এবং স্বাস্থ্যের চিকিৎসার সুযোগ দুটিকে আলাদা করা যায় না| কিন্তু আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের সুযোগ একেবারে নেই বললেই চলে| শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা বা উন্নতির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা স্টেকহোল্ডাররা কোন ধরনের কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছে বলে আমার জানা নেই| কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটি শুধুমাত্র ফোনের মাধ্যমে পরামর্শের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছে| প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হসপিটাল বা ক্লিনিকে রেখে মানসিক স্বাস্থ্য-চিকিৎসা দেওয়ার দায়ভার কি শুধুই পরিবারের?
শিশুদের প্রাথমিক বুনিয়াদি শিক্ষা (প্রি স্কুল) এবং বিশেষায়িত শিশু ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে| এই শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকেরা ব্যাপক উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে| তাদের দেখাশোনার জন্য চাকরিরত অভিভাবকেরা হয় চাকরি ছাড়ছেন নয় পেশা পরিবর্তন করছেন| সাধারণতঃ উন্নত বিশ্বের অভিভাবকেরা সন্তানদেরকে ডে-কেয়ার কেন্দ্রগুলিতে রেখে চাকুরীতে যান, কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে ডে-কেয়ার গুলো বন্ধ হওয়ায় অথবা গুটিকয়েক চালু থাকলেও তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ার সন্তান লালন পালন এবং তাদের মানসিক বিকাশের চরম সংকট দেখা দিচ্ছে|
অনেক শিক্ষার্থী বিনামূল্যে বা সুলভে স্কুলে পুষ্টিকর ভালো খাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে, যা শরীর গঠনে সরাসরি ভূমিকা রাখে| ফলে স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় কোটি কোটি শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় পুষ্টির অপূর্ণতা থেকে যাচ্ছে| উন্নত- অনুন্নত অনেক দেশেই এই ব্যবস্থা চালু আছে| যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বৎসর প্রায় তিন কোটি শিশু স্কুলের বিভিন্ন খাদ্য-কর্মসূচির উপর নির্ভর করে| আমাদের দেশেও খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচি সফলভাবে স্কুলগুলিতে চলমান ছিল| স্কুলগুলিতে খাদ্যের এই কর্মসূচি যে কোন উপায়ে অতি দ্রুত ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে| শিক্ষার্থীদের নিকট পুষ্টিকর বিস্কিট প্রদানের জন্য প্রয়োজনে প্রতি সপ্তাহে কিছু সময়ের জন্য অনতিবিলম্বে স্কুল গুলি খুলে দেওয়া উচিত| পাইলট প্রজেক্ট এর আওতায় হলেও শুরু করা উচিত| তাতে করে আরেকটা ফল পাওয়া যেতে পারে যে স্কুল থেকে ঝরে পরার হার কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব হবে|
কম বেশি প্রতিটি দেশেই প্রযুক্তির অভাব, ভালো বা পর্যাপ্ত ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ অনলাইনের পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বা পড়াশোনার বিভ্রাটে পরছে| এক জরিপে দেখা গেছে, এসব সমস্যা না থাকলে প্রতিটি শিক্ষার্থী ঘরে বসেই তাদের এসাইনমেন্ট জমা দিতে পারতো| শিক্ষা বা জ্ঞান অর্জনের জন্য লাইব্রেরী একটা বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে| এছাড়াও লাইব্রেরি পুরো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যথাযথ বই পাঠ করে জ্ঞান অর্জন করতে পারছে না| কোন কোন দেশে বিভিন্ন পাবলিশার্স তাদের ইলেকট্রনিক লাইব্রেরী শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের কাছে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে| উন্নত বিশ্বে এমনটি ঘটলেও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সেটা হচ্ছে না| আমাদের দেশে ইলেকট্রনিক লাইব্রেরি গুলোতে অতি উচ্চমূল্যের কারণে প্রবেশ ও তার চর্চার সুযোগ না থাকায় বা এমনকি ইন্টারনেট থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন হতে বঞ্চিত হচ্ছে|
এই মহামারিতে অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেকটা আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে| তাদের আর্থিক (অতীতের জিডিপির তুলনায় ৪ বা ৫ গুণ বেশি) প্রবৃদ্ধিও সবচেয়ে বেশি ঘটেছে| টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলো প্রতিটি দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখলেও করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদেরকে কতটা সুবিধা দিতে পেরেছে সে বিষয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে| সাধারণ মানুষদের জন্য ইন্টার্নেট কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি এবং সহজলভ্যতা কিছুটা নিশ্চিত করলেও শিক্ষার্থীদের জন্য তা অতি সহজলভ্য বা বিনামূল্যে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের কোন নির্দিষ্ট প্যাকেজ প্রদান করেনি|
অনলাইন ক্লাসের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার কিংবা ইলেকট্রনিক লাইব্রেরী বা বিভিন্ন অনলাইন শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের জন্য শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বা সুলভ মূল্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বে অনেক পদক্ষেপ নিতে দেখা গেলেও আমাদের দেশে টেলিকমিউনিকেশন্ কোম্পানি গুলো চোখে পড়ার মতো এরকম কোন পদক্ষেপ নেয়নি| উরুগুয়েতে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণাধীন টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি এন্টেল প্রতিমাসে শিক্ষার্থীদের কে ৫০ গিগাবাইট এবং শিক্ষকদেরকে ৪০ গিগাবাইট পর্যন্ত ইন্টারনেট বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে| আর্জেন্টিনাতেও ৫৮ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকগণ তিনটি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির মাধ্যমে বিনামূল্যে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম এবং এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারছেন|
করোনাভাইরাস এর এই অতিমারির কারণে আমাদের দেশে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে নিয়মিত দাঁড়িয়েছে সরকারের পাশাপাশি অনেক দাতব্য ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান| এমনকি ব্যক্তিগতভাবে অনেকে অসাধারণ উপায়ে অনেক মানুষকে সহযোগিতা করেছেন| কিন্তু শিক্ষার সাথে যুক্ত শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ গঠনে সরকারের কিছুটা ভূমিকা থাকলেও বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে এগিয়ে আসেনি| ব্যক্তিগত পর্যায়ে সহযোগীতা বাস্তবে অপ্রত্যাশিত হওয়ায় সেটা ঘটেনি| ফলে টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি গুলোর একটা বড় সুযোগ ছিল শিক্ষার সাথে যুক্ত সবাইকে বা বিশেষ করে পশ্চাৎপদ গোষ্ঠী বা শ্রেণীকে সরাসরি সহযোগিতা করা| তাদের লভ্যাংশের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এই খাতে ব্যয় হলে তা সার্বিকভাবে শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারতো|
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে যেটা দেখেছি শিক্ষার্থীদের একটা গ্রহণযোগ্য অংশ যারা প্রধানত গ্রামে অবস্থান করছে ইন্টারনেট না থাকা, কিংবা যথাযথ ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির অভাব অথবা অনলাইন ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকার কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না| প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এবং অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এই ধরনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে| হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অন্যান্য সকল বিভাগে এভাবেই শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধান করা যাবে যদি সবাই আমরা সচেতন ও সচেষ্ট থাকি| সম্প্রতি অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নেট কানেক্টিভিটি এবং ডিভাইসের অপ্রতুলতা বড় রকমের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিচ্ছে|
স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে আমাদের দেশে অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষা দানের কর্মসূচি খুব একটা এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি উপরোক্ত প্রতিবন্ধকতাগুলোর অতিমাত্রায় ব্যাপকতার কারণে| তবে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবন্ধকতাগুলো সমাধানের জন্য উপরোক্ত কৌশল খুব একটা কাজে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করিনা| ফলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান গুলোর সরাসরি ও সমন্বিত সহযোগিতা একান্ত দরকার|
বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট সরবরাহ, কানেকটিভিটির প্রসার, অন্যান্য সহায়ক বই গুলো সহ শ্রেণীর নির্ধারিত বইগুলোর ইলেকট্রনিক ভার্সনের ব্যবস্থা করা, প্রয়োজনীয় ডিভাইস সরবরাহ করা, মানসিক স্বাস্থ্যের কার্যকরী চিকিৎসাসেবা দেওয়া, প্রতিটি শ্রেণি এবং কোর্সের ডামি বা এনিমেটেড শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ডেমো ক্লাসের ব্যবস্থা করা, রাষ্ট্রায়ত্ত শিক্ষা টেলিভিশন ও রেডিও চালু করা, মহামারি বিলম্বিত হয়ে বছরের পর বছর চলতে পারে-এটা ধরে নিয়ে ব্লেন্ডেড মিক্সড পদ্ধতিতে-অনলাইন এবং শ্রেণিকক্ষের শিক্ষাদানের পদ্ধতি গ্রহণ করা, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস এর উপর সরাসরি পরীক্ষা নেওয়া, শিক্ষার সাথে যুক্ত সবাইকে অতি দ্রুত টিকার আওতায় নিয়ে আসা, পাইলট পদ্ধতিতে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে লব্ধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া| শিক্ষার সংকট কিছুটা হলেও দ্রুত কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এরকম নানা উদ্যোগ, কৌশল ও পরিকল্পনা নেওয়া এবং তা বাস্তবায়ন করা অতীব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে|
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ফলিত পরিসংখ্যান আই এস আর টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সভাপতি, আই এস আর টি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নির্বাহী কমিটি।
Discussion about this post