এন আই আহমেদ সৈকত
একটি যুবশক্তি সমাজ এবং রাষ্ট্র পরিবর্তনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সমাজ পরিবর্তনের জন্য চাই গতি, শক্তি ও প্রগতি। যারা পুরোনো ধ্যান-ধারণা নিয়ে চলে এবং কূপমণ্ডূকতার আশ্রয় নেয়, তাদের দিয়ে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই কালে কালে যুবকরাই উড়িয়েছে পরিবর্তনের বৈজয়ন্তী। ইতিহাসের পাতায় লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, বিশ্বে বিভিন্ন বিপ্লবের কারিগর যুবশক্তি যা এর যথার্থতা প্রমাণ করে।
বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং বঙ্গবন্ধুর অপর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী উভয়ে মিলে ‘ইয়াং বাংলা প্ল্যাটফর্ম’-এর মাধ্যমে সারা বাংলার যুব সমাজকে নতুন নতুন কর্মসংস্থান, সৃষ্টিশীল উদ্ভাবনী দিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করে চলেছেন। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আমরা শুধু যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই না, চাই তারা নিজ উদ্যোগে কিছু করুক। যুব সমাজের প্রচেষ্টা বদলে দিতে পারে বিশ্ব। যুবশক্তি অপার সম্ভাবনাময়। যুবশক্তির সম্পৃক্ততা ছাড়া বিশ্বের কোথাও কখনও কোনো সংগ্রাম, সংস্কার বা বিপ্লব সম্ভব হয়নি। ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলালে ভেসে উঠবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এ দেশের যুব সমাজই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যুবশক্তির এই গুরুত্ব স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের চারটি জিনিসের প্রয়োজন তা হচ্ছে নেতৃত্ব, ম্যানিফেস্টো বা আদর্শ, নিঃস্বার্থ কর্মী এবং সংগঠন। এই প্রয়োজনীয়তা থেকে তিনি যুব শক্তির গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক যুব কনভেনশনের মাধ্যমে দেশের প্রথম এবং সর্ববৃহৎ যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনির হাত ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব থেকে প্রিয় রাজনৈতিক শিষ্য। শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন সৃষ্টিশীল মানুষ। শেখ মনি মনেপ্রাণে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গঠন করতে চেয়েছিলেন। শেখ ফজলুল হক মনি মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন স্বাধীনতা-পরবর্তী অস্থির যুব সমাজকে সৃজনশীল খাতে প্রবাহিত করতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত সমাজ অর্থাৎ সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা অর্থাৎ সব ধর্মের মানুষের স্ব স্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকার তথা জাতীয় মূলনীতিকে সামনে রেখে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা সম্প্র্রসারণ, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং যুব সমাজের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার।
স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যুবকদের উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে ১৯৭৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ওয়াদা কর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবি। যুবলীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে চার দফা মূলনীতি : বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত সমাজ অর্থাৎ সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা- সব ধর্মের মানুষের স্ব স্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকারের মতো বিষয়গুলোকে সংগঠনটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সুশৃঙ্খল সংগঠন গড়ে তোলাই যুবলীগের উদ্দেশ্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুবলীগের নেতা কর্মীরা দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করে।
সময়ের হাত ধরে আজ যুবলীগের দায়িত্বে শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে। সর্বশেষ যুবলীগের সপ্তম কাউন্সিল ২৩ নভেম্বর (২০১৯) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ ফজলুল হক মনির জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ ফজলে শামস্ পরশ। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল। পিতার আদর্শিক চেতনায় যুবলীগ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দেশপ্রেম ও সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষায় মানবিক যুবলীগের সুখ্যাতি অর্জনে সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ কাজ করছেন। সব বিতর্ক পেছনে ফেলে জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে শেখ মনির প্রতিষ্ঠিত যুবলীগ অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছে। বলা চলে শেখ ফজলে শামস্ পরশের নেতৃত্বে এবার যুবলীগের নতুন যাত্রা শুরু।
যে যুবলীগ এখন ‘মানবিক যুবলীগ’। এই যাত্রায় পরশের পাশে তারুণ্যনির্ভর ত্যাগীরা যুবলীগকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেল। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নতুন এ নেতৃত্ব যুবলীগকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যুবলীগ কর্মীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর চেতনা ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে নানামুখী কার্যক্রম শুরু করে। করোনা মহামারিতে পুরো দেশের মানুষ যখন ঘরবন্দি ঠিক তখন মানবিক যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ এবং সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিলেন, সর্বস্ব নিয়ে অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে। শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনা মেনে তৃণমূল থেকে শুরু করে সব সাংগঠনিক পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা এ সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম থেকে শুরু করে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে অসহায়ের পাশে দাঁড়ান। কোনো কোনো জায়গায় রান্না করা খাবারও পথচারী ও উদ্বাস্তুদের মাঝে বিতরণ করতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের দাফনে যখন পরিবার থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজন পর্যন্ত পিছুপা তখন যুবলীগের নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসতে দেখা গেছে।
মুজিববর্ষের কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘গাছ লাগাই, জীবন বাঁচাই’- স্লোগানকে সামনে রেখে সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করছে যুবলীগ। সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে একটি করে ফলদ-বনজ ও ঔষধি- এ তিন গাছ রোপণ করছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন একটি মানুষও গৃহহীণ থাকবে না। এজন্য তিনি বিশ্বের নজিরবিহীন এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। এর ধারাবাহিকতায় যুবলীগও গৃহহীণ মানুষকে ঘর করে দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাস্তে হাতে মাঠে নেমে পড়তে দেখা গেছে যুবলীগের নেতাকর্মীদের। ধানকাটা শেষে মাড়াই করে কৃষকের গোলায় ধান তুলে দিয়ে আসতে দেখা গেছে যুবলীগের নেতাকর্মীদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আস্থা নিয়ে এ দু’জনকে যুবলীগের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তা পূরণে তারা শতভাগ সফল হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস, যার স্বাক্ষর তারা এরই মধ্যে রেখেছেন। এ মুহূর্তে যে কোনো সমীকরণে পরশ-নিখিল নেতৃত্বে যুবলীগ তার চিরায়ত জনকল্যাণমূলক রাজনৈতিক ধারায় রয়েছে, এটা দৃঢ়ভাবে বলা যায়। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ শুরু থেকেই সব বাধা চূর্ণ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের জন্য যুব সমাজকে সংগঠিত করার দায়িত্ব পালনে যত্নবান ছিল।
লেখক-উপ-তথ্য ও যোগাযোগ (আইটি) বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
Discussion about this post