জয়নুল হক
নতুন বছরে নতুন আশা নিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। আর এর সঙ্গে সঙ্গে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে র্যাগিং নামক অপসংস্কৃতি। র্যাগিং শব্দের অর্থ নাকি ‘পরিচয়পর্ব’। কিন্তু বাস্তবে পরিচয়পর্বের নামে চলে মানসিক নির্যাতন।
শারীরিক নির্যাতনের মধ্যে আছে কান ধরে ওঠবস করানো, রড দিয়ে পেটানো, পানিতে চুবানো, উঁচু ভবন থেকে লাফ দেয়ানো, সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা দেয়া, গাছে উঠানো, ভবনের কার্নিশ দিয়ে হাঁটানো, এমনকি দিগম্বর করা পর্যন্ত। আর মানসিক নির্যাতনের মধ্যে আছে গালিগালাজ করা, কুৎসা রটানো, নজরদারি করা এবং নিয়মিত খবরদারি করা।
এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী আতঙ্কে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়। কাউকে কাউকে ডাক্তারের শরণাপন্নও হতে হয়। বস্তুত, ক্যাম্পাসে আসা নবীনরা সর্বদাই র্যাগিংয়ের ভয়ে ভীত থাকে।
ক্যাম্পাসে দিন দিন র্যাগিং যন্ত্রণার মাত্রা বেড়ে চলেছে। সিনিয়ররা র্যাগিংকে ফান হিসেবেই মনে করেন। তারা মনে করেন, এর মাধ্যমে জুনিয়রদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। সখ্য গড়ে ওঠে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেখা হলে ভয়ে সালাম দিয়ে সম্মান দেখানো আর আড়ালে গিয়ে বকা দেয়া কখনও সম্মান হতে পারে না।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, এটাকেই অনেকে সম্মান ও শ্রদ্ধা বলে মনে করেন! আজ যে ছেলেটি র্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছে, সে নিশ্চয়ই আগামীতে এর চেয়ে বেশি মাত্রায় র্যাগিং করার পরিকল্পনা করবে। ফলে এ অপসংস্কৃতি বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।
অনেকেই ক্যাম্পাসে সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ককে ভাই-বোনের সম্পর্ক বলে থাকেন। যদি ভাই-বোনের সম্পর্কই মনে করেন, তাহলে তাদেরকে র্যাগিংয়ের নামে অশ্লীল কথাবার্তা বলতে বাধ্য করছেন কেন? প্রপোজ করানো, জোর করে গান গাওয়া, নৃত্য করানো ইত্যাদি কি শিক্ষার অংশ? এর মাধ্যমে তারা কী শিক্ষা দিচ্ছেন?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং নামক অপসংস্কৃতি মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। গত ১৯ জানুয়ারি যুগান্তর পত্রিকায় ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষককে ক্লাস থেকে বের করে নবীনদের র্যাগিং’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ঘটনাটি সত্যিই বেদনাদায়ক।
বিশ্ববিদ্যালয় হল মুক্ত জ্ঞানচর্চার জায়গা। সেখানে আমরা শুরুতেই কেন শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করছি? কেন তাদের চলাচলে হস্তক্ষেপ করছি? প্রকৃতপক্ষে এটা কখনই কাম্য নয়। মূলত প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় র্যাগিং নামক অপরাধ সংঘটিত হয়।
আমাদেরকে এ অপসংস্কৃতির চর্চা থেকে বেরিয়ে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমেই র্যাগিংমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সম্ভব।
জয়নুল হক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
Discussion about this post