মো. আবুল বাশার হাওলাদার
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক মহাদুর্যোগে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এই প্যাকেজের আওতায় কি কি থাকবে তাও মোটামুটি বলা আছে। আজ দৈনিক শিক্ষায় দেখলাম, দিনমজুর ও মধ্যবিত্তদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমনন্ত্রী। তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপকে প্রাণভরে স্বাগত জানাই।
আমি বলছি শিক্ষকদের কথা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের কথা। অনেকে না জেনেশুনে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। শিক্ষকরা তো বেতন পাচ্ছেন আবার সহায়তা কিসের? বাংলাদেশে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নানা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী যারা চাকরি করেন তারা সবাই একই সুযোগ-সুবিধা পান না। একই প্রতিষ্ঠানেও সুবিধার ভিন্নতা আছে, আবার ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুবিধার বিশাল পার্থক্য রয়ে গেছে। এ বিষয়ে এখন কথা না বলে যেসব শিক্ষক-কর্মচারীর আর্থিক সহায়তা না হলেই নয় সেকথা বলছি।
আমি প্রথমে বলছি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কথা। অবসরের পর তারা আর বেতন পান না। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট নামে দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এ সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের এককালীন কিছু টাকা দেয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে যতটা সম্ভব জীবনযাপন করতে হয় বাকিটা সময়। অপ্রিয় হলেও সত্য এই টাকা পেতে ৩-৪ বছর সময় লেগে যায়। অনেকে জীবদ্দশায় পান না। রোগে-শোকে ভোগেন আর দারুণ অর্থকষ্টে জীবনাবসান ঘটে। অবসরপ্রাপ্ত সবাই এখন রাষ্ট্রের সিনিয়র নাগরিক। তাই তাদের দুঃখকষ্ট লাঘবে এই প্যাকেজ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করার দাবি করছি।
প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে এমপিওবিহীন। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ছাত্রদের টিউশন ফি থেকে বেতন পান। তাছাড়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, ইংলিশ ভার্শন স্কুল ও কলেজ, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও কলেজ, মাদরাসাসহ নানা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দ্বারা পরিচালিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের সহায়তা প্রদানের দাবি করছি।
এখন বলছি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারিদের কথা। তারা বেতনের একাংশ পান সরকারি বেতন হিসেবে। বাকি বেতন পান প্রতিষ্ঠান থেকে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে তারা বেতনের একাংশ পান। এখন প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত বেতন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের সহায়তা করার দাবি করছি। তাছাড়া সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু শিক্ষক-কর্মচারী আছেন যারা খণ্ডকালীন হিসেবে কর্মরত আছেন। তাদেরও আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।
অনেক শিক্ষক-কর্মচারীর ব্যাংক ঋণ, ক্রেডিট কার্ড ঋণসহ নানা ঋণ রয়েছে। এই ঋণ তাদের জন্য পরিশোধ করা সম্ভব নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এই ঋণ মওকুফ করার আবেদন করছি।
পরিশেষে বলছি , কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে চাই না; শিক্ষকরা কঠিন সময় পার করছেন। বলতে গেলে অধিকাংশ বর্তমনা ও সাবেক শিক্ষক-কর্মচারী দারুণ অর্থকষ্টে আছেন। তাই সহায়তা প্যাকেজে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করছি। মধ্যবিত্তদের তালিকায়ও যেন তাদের নাম থাকে।
লেখক : মো. আবুল বাশার হাওলাদার, সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]
Discussion about this post