আমিনুল ইসলাম মল্লিক
গ্রামের পাড়ার মোড়, হাট-বাজার, চায়ের দোকান, নদীর পাড়, রাস্তাঘাট, শহরের অলিগলি এসব জায়গায় আড্ডা যেন নিয়মিত। মাঝে মাঝে পুলিশ সতর্ক করলেও পরোক্ষণেই আবার ভিড় বাড়িয়ে এ শ্রেণিটি।
বলতে বাধা নেই এ যেন ঈদের আনন্দ! সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর থেকেই এমন আড্ডা। বন্ধুরা মিলে এক সঙ্গে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা করছে বিভিন্ন আলাপ।
মাঝে মধ্যে আবার তারা চা বিস্কুটি খাচ্ছে। সিগারেট ফুঁকছে। মাস্ক মুখে থাকলেও লাগিয়ে রাখা হয়েছে থুতনির সঙ্গে। এ যেন নিজের সঙ্গে নিজেরই প্রতারণা। এদেরকে বোঝাতে গেলেও উল্টো বুঝিয়ে ছেড়ে দেয়।
অনেকেই এসব যুবকের আচরণে তিক্ত বিরক্ত। কে জানে কখন আবার কি করে বসে!
পুলিশ প্রশাসন, ইউপি চেয়ারম্যান, বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন সতর্ক করে মাইকিংও করছে বার বার। কিন্তু কে কার কথা শোনে। সবাই যেন শুনেও না শোনার ভান ধরে থাকছে। এদের বোঝাবে কে?
অনেক যুবক এই সুযোগে জুয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন। ঘোরাঘুরি ও আড্ডার ফাঁকে মিলিত হচ্ছেন নেট ও ভার্চুয়াল জুয়ায়।
তবে সেখানে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। গোল হয়ে বসে ৮/১০ করে বসে নিয়মিত জুয়া খেলছে। এগুলো দেখা যাচ্ছে চরাঞ্চলে। নদীর পাড়ে গ্রুপে গ্রুপে জুয়ার আসর বসানো হচ্ছে। প্রশাসন এসব বিষয় দেখেও দেখছেন না।
পাড়া মহল্লার মুরব্বিদেরকে এরা পাত্তাই দেয় না। মুরুব্বিরা বুঝাতে গেলে তাদেরকে বুঝিয়ে ছেড়ে দেয়।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ১০১জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুবক শ্রেণির। যাদের বয়স ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
যুবকবাদে আরেকটা শ্রেণি আছে যারা করোনা ভাইরাসকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। তারা বলছেন মৃত্যু আল্লাহ তায়ালার হাতে। যেদিন মৃত্যুর দিনক্ষণ লেখা আছে সে দিনই মৃত্য হবে। করোনাভাইরাসকে তারা যেন বিশ্বাসই করেন না। এদের প্রতি প্রশ্ন মৃত্যু স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু তো ছোঁয়াচে রোগ একজন আক্রান্ত হয়ে গেলে আরেকজনকে ছড়ায় এটি। এভাবে একজন দুজন করেই কিন্তু সারা বিশ্বে মানুষ মারা গেছেন লক্ষাধিক। আক্রান্তের সংখ্যাটাও ব্যাপক আকারে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান প্রদেশে প্রাণঘাতি করোনা আক্রমণ করে মানব শরীরে। শুরুতে কিন্তু এটি চীনেই ছিল। ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় চীন থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। বিশ্ব আজ হুমকির মুখে। যে হুমকিকে সামাল দিতে পারছে না বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রগুলো।
প্রায় ৪৩ দিন আগে করোনা বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে শনাক্ত হয়। দিন দিন এটি জ্যামিতিক হারে বাড়ছে।
মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ্য হচ্ছে। তাহলে কি আমাদেরকে সচেতন হওয়া জরুরি নয়? অবশ্যই জরুরি।
বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রিড়া মন্ত্রণালয় কি করছে? আসলে যুবক জন্য এই দুর্যোগ মুহূর্তে করণীয় কি?
চাইলে আপনারাও উদ্যোগ নিতে পারেন এইসব যুবকদের জন্য। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনগুলোর উদ্দ্যোগ নিতে পারেন এদের সচেতন করতে। পারেন বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এনজিও গুলো। পাড়ার মহাল্লায় গড়ে তোলা যেতে পারে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
যুবকরা যদি এখনই সচেতন হোন সতর্ক হোন কোনো মহামারি আমাদের দুর্বল করতে পারবে না। আমরা জয় করতে পারবো করোনা ভাইরাস তথা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে। কারণ যুবকরাই পারে জাতির নেতৃত্ব দিতে। পারে দুর্যোগ মোকাবেলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে। তাই বলবো, হে যুবক আসো করোনার বিরুদ্ধে ঐক্যমত গড়ে তুলি। নিজে বাঁচি মানুষকে বাঁচাই দেশকে বাঁচাই। ভালো থেকো বাংলাদেশ।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী।
Discussion about this post