আ.ফ.ম. মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে যে-কজন সরকারি কর্মকর্তা লড়াই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম তাঁদের অন্যতম। বর্তমানে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন তিনি। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। এইসময় তিনি বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হয়ে সেক্টর ৮- এর সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১-এর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
৩৬৫ পৃষ্ঠায় ১৯৭১-২০০৮-এর স্মৃতিচারণে রচিত ‘জীবনের জয়রথ’। ইতিহাস ও উপন্যাসের মুদ্রিত চিত্ররূপ এই গ্রন্থ। এটিকে স্মৃতচারণভিত্তিক উপন্যাস বললে অত্যুক্তি হবে না। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় তথ্যভিত্তিক এই গ্রন্থে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস ও পরবর্তী সময়ের দুঃখ ও বেদনার কথা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায় উজ্জীবিত একজন সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা কীভাবে জনযুদ্ধে অংশ নিলেন, মুজিবনগর সরকার গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখলেন, মুক্তিযোদ্ধা হলেন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপাখ্যান এই গ্রন্থ। শুধু কি তাই, বাংলাদেশের স্বাধীনতাত্তোর রাজনীতি, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র ইত্যাদি বিষয় উপস্থাপন ও সুনিপুণ বিশ্লেষণ করেছেন। গ্রন্থের ১১০-১১১ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন আমাদের স্বাধীনতার পর বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারা ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিলেন। অতীতে পাকিস্তানকে দেয়া বিশ্ব ব্যাংকের ঋণের মধ্যে বাংলাদেশের প্রদেয় অংশ ফয়সালা করার উদ্দেশ্যে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সোজাসাপটা- আমাদের এখন জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ, পুনর্বাসন এবং দেশ পুনর্গঠনের জন্য সাহায্য চাই, কিন্তু কোনও মূল্যের বিনিময়ে নয়। পাকিস্তান আমলে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে নেয়া ঋণের অর্থ দ্বারা অর্জিত কোনও দৃশ্যমান সম্পদ যদি বের করা যায় তবে অবশ্যই আমরা এই ঋণের দায় স্বীকার করবো এবং এটি পরিশোধ করবো, অন্যথায় নয়। ‘যা ছিল বঙ্গবন্ধুর নীতি। ২০০৭ সালে সামরিক আবরণের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার স্বাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তিনি, যার কারণে তিনি কারাবরণ করেন। কারাবন্দী জীবনের দুঃসহচিত্র, বন্দি থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাথে একই কাঠগড়ায় বসার বিরল স্মৃতি, বঙ্গবন্ধু কন্যার অবিচল মনোবল, মানুষের প্রতি তাঁর আস্থা ও দায়বদ্ধতার চিত্র তুলে এনেছেন এই গ্রন্থে। আশা-আনন্দ, দুঃখ-বেদনা ও ইতিহাসের সঠিক উপস্থাপন ‘জীবনের জয়রথ’। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে শ্রাবণ প্রকাশনী। প্রচ্ছদ করেছেন রবীন আহসান। পেঙ্গুইন রেনডম হাউস ভারত কর্তৃক ‘CHARIOT OF LINE: Liberation War Politics and Sojourn in jail’ এর অনুবাদ ‘জীবনের জয়রথ, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি ও জেলজীবন।’ অনুবাদক তাহনিয়া রহমান চৌধুরী।
আলোচক ছড়াকার, প্রাবন্ধিক ও শিশুসাহিত্যিক।
Discussion about this post