তারিফুল হক
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর টেবিলে রাখা খাতায় লেখা ছিল– ‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। আমার মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ।’ স্পষ্টত তাঁর আত্মহননের পথ বেছে নেওয়ার কারণ হতাশা।
একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ৪২। ২০২১ সালে এ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি– ১০১। গত বছর দেশে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৫৩২ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে স্কুল পর্যায়ে ৩৪০, কলেজে ৪৪৬ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৪ জন মাদ্রাসার। গবেষকদের মতে, আত্মহত্যার পেছনে ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা, পরীক্ষার ফল নিয়ে হতাশা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে না নিতে পারাসহ নানা কারণ রয়েছে। এর ফলে তারা হতাশ হয়ে পড়েন এবং আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
আত্মহত্যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হয়তো সমস্যাটি থেকে পালাতে পারেন। কিন্তু যে বাবা-মা সন্তানকে হারান, তারাই বোঝেন এর যন্ত্রণা। এ সিদ্ধান্ত অনেক পরিবারকে শেষ করে দেয়। সুতরাং আত্মহত্যা কোনো সমাধানের পথ নয়।
জীবনে চলার পথে কখনও খুব ভালো সময় আসবে; আবার কখনও খুব খারাপ সময়। সেই খারাপ সময়টা কাটিয়ে উঠেই এগিয়ে যেতে হবে। পরিবার বা খুব কাছের বন্ধুকে নিজের কষ্টের কথা জানানো উচিত। অথবা এমন কাউকে জানানো উচিত, যে সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারবে। দুঃসময় কাটিয়ে উঠে জীবনকে খুব সুন্দর করে উপভোগ করা উচিত।
আমাদের চারপাশে অনেকেই আছেন, যারা হতাশাগ্রস্ত। অনেকেরটা চোখে পড়ে; অনেকেরটা পড়ে না। যাদের হতাশা চোখে পড়ে, আমাদের উচিত তাদের সঙ্গে কথা বলা; এর পেছনের কারণ জানার চেষ্টা করা। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন থাকা জরুরি। কর্মস্থল, বিশেষত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের আয়োজন থাকা দরকার। ভীষণ প্রতিযোগিতাময় এ সমাজ ব্যবস্থায় বিষয়টার গুরুত্ব বোঝা যায় উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে। সেখানে প্রতিযোগিতার পথ যেমন স্বচ্ছ এবং অনেকাংশেই পক্ষপাতমুক্ত, তেমনি এতে পিছিয়ে পড়াদের রক্ষায়ও ব্যবস্থা থাকে।
আমি মনে করি, যদি কখনও কারও নিজেকে শেষ করার চিন্তা আসে তাহলে তার বাবা-মায়ের কথা ভাবা উচিত। মরে গেলে কারও কোনো কিছু হবে না। সবকিছু নিজের নিয়মে চলবে। কিন্তু বাবা-মা? তাদের কী হবে? জীবন তো একটাই। একে আত্মহত্যার মাধ্যমে শেষ করে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। বেঁচে থেকেই সমাধানের পথ খোঁজা প্রয়োজন। আসুন, সবাই হাসিখুশি থাকি আর আমাদের জীবনকে উপভোগ করি। কেটে যাবে আঁধার, ফুটবে আলো; গেছে দিন খারাপ; আগামীটা হবে ভালো।
লেখক- শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Discussion about this post