মারজান আক্তার, প্রদায়ক
প্রদর্শনী কক্ষে ঢুকতেই চোখে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত মুক্তিযুদ্ধের পোস্টার। সঙ্গে তার বিখ্যাত স্লোগান ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো’। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে নিহত হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আলোকচিত্র। আছে তাদের তথ্য তালিকা ও খেতাবের পরিচিতি। আছে বীর-প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত চবির প্রকৌশল দপ্তরের চেইনম্যান মোক্তার হোসেনের তৈলচিত্র। মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানের তথ্য ও তালিকার একত্রিত এই প্রদর্শনীতে আছে চবি উপাচার্য প্রফেসর এ.আর. মল্লিকের ২৪ মার্চের বক্তৃতার ছবিও।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যেই দলিল নিশ্চিত করেছিল আমাদের বিজয়, পাকিস্তানের সেই আত্মসমর্পণ দলিলও শোভা পাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে। শুধু এটিই নয়, এরকম আরও শতাধিক দলিলপত্র প্রদর্শিত হচ্ছে চবি জাদুঘরের প্রদর্শনী কক্ষে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরে চলছে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের দলিল প্রদর্শনী। এটি শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই প্রদর্শনীর আয়োজন। চবি বঙ্গবন্ধু চেয়ার ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের উদ্যোগে গত ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এই প্রদর্শনী।
বিভিন্ন ভাগে প্রদর্শন করা হচ্ছে এসব দলিল, আলোকচিত্র ও তথ্যগুলো। মুজিবনগর সরকারের নিউজ বুলেটিন ও প্রেস বিজ্ঞপ্তি ভাগে আছে রাও ফরমান আলির পরাজয়ের শেষ মুহূর্তের নোট। স্বাধীন বাংলা বেতার নামের ভাগটিতে আছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে তৎকালীন সেনাবাহিনীর মেজর ও পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথমে নিজে এবং পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ছাড়া এই ভাগে আছে বিভিন্ন কথিকা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদভিত্তিক বহুল প্রচারিত সাময়িকী ‘টাইম’-এর পাকিস্তানস অ্যাগোনি (Pakistans Agony) সাময়িকী মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বেশ পরিচিতি পায়। এই সাময়িকীসহ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রকাশিত জনপ্রিয় সাময়িকী ও পত্রিকার সংগ্রহ রয়েছে এই প্রদর্শনীতে। এ ছাড়া রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ও সংগঠনের প্রকাশনা, তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের প্রকাশনা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মার্কিন সিনেটের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের বক্তব্য, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রকাশনা, মুক্তিযুদ্ধে খেতাবেপ্রাপ্ত বীর সৈনিকদের তালিকা, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভাষণের পাণ্ডুলিপি ও মুক্তিযুদ্ধের বিখ্যাত কিছু আলোকচিত্র।
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত। সাধারণ দিনের চেয়ে এই প্রদর্শনী উপলক্ষে জাদুঘরে ঘুরতে ভিড় জমাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ চট্টগ্রামের মানুষ। প্রদর্শনী ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না ইসলাম বলেন, ‘এই প্রদর্শনীতে এমন সব দলিল রয়েছে, যা আমরা সচরাচর দেখি না। নতুন অনেক তথ্য পেয়েছি, যা আমি বই পড়ে পাইনি। আমার বেশ ভালো লেগেছে।’
গত ১ ডিসেম্বর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের সেমিনার কক্ষে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-উপাচার্য বেনু কুমার দে এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু চেয়ার ড. মুনতাসীর মামুন উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেন, এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রজন্মের সন্তানরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করবে। জাদুঘরের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একটি আর্কাইভ তৈরির পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
Discussion about this post