শিক্ষকের মর্যাদা
কাজী কাদের নেওয়াজ
বাদশাহ আলমগীর-
কুমারে তাঁহার পড়াইত এক
মৌলভী দিল্লীর।
একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশাহ- শাহজাদা এক পাত্র হস্তে
নিয়া
ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে
পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,
শিক্ষক শুধু নিজ হাত
দিয়া নিজেরি পায়ের ধুলি
ধুয়ে মুছে সব করিছেন
সাফ্ সঞ্চারি অঙ্গুলি।
শিক্ষক মৌলভী
ভাবিলেন আজি নিস্তার নাহি,
যায় বুঝি তার সবি।
দিল্লীপতির পুত্রের করে
লইয়াছে পানি চরণের পরে,
স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ
কে করেছে কোন্ কালে!
ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা
দেখা দিল তার ভালে।
হঠাৎ কি ভাবি উঠি
কহিলেন, আমি ভয় করি
না’ক, যায় যাবে
শির টুটি,
শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার
দিল্লীর পতি সে তো
কোন্ ছার,
ভয় করি না’ক,
ধারি না’ক ধার,
মনে আছে মোর বল,
বাদশাহ্ শুধালে শাস্ত্রের কথা
শুনাব অনর্গল।
যায় যাবে প্রাণ তাহে,
প্রাণের চেয়েও মান বড়,
আমি বোঝাব শাহানশাহে।
তার পরদিন প্রাতে
বাদশাহর দূত শিক্ষকে ডেকে
নিয়ে গেল কেল্লাতে।
খাস কামরাতে যবে
শিক্ষকে ডাকি বাদশা কহেন,
”শুনুন জনাব তবে,
পুত্র আমার আপনার কাছে
সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে?
বরং শিখেছে বেয়াদবি আর
গুরুজনে অবহেলা,
নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা
স্বয়ং সকাল বেলা”
শিক্ষক কন-”জাহপানা, আমি
বুঝিতে পারিনি হায়,
কি কথা বলিতে আজিকে
আমায় ডেকেছেন নিরালায়?”
বাদশাহ্ কহেন, ”সেদিন প্রভাতে দেখিলাম
আমি দাঁড়ায়ে তফাতে
নিজ হাতে যবে চরণ
আপনি করেন প্রক্ষালন,
পুত্র আমার জল ঢালি
শুধু ভিজাইছে ও চরণ।
নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া
সযতনে
ধুয়ে দিল না’ক
কেন সে চরণ, স্মরি
ব্যথা পাই মনে।”
উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি
দাঁড়ায়ে সগৌরবে
কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে
কহেন উচ্চরবে-
”আজ হতে চির-উন্নত
হল শিক্ষাগুরুর শির,
সত্যই তুমি মহান উদার
বাদশাহ্ আলমগীর।”
শিক্ষক
শিক্ষক
মানে
শেখা
নতুন
কিছু,
শিক্ষক
মানে
ছাত্রের পিছু
পিছু।
শিক্ষক
মানে
আদর
সোহাগ
শিক্ষক
মানে
বেত্রা
ঘাত।
শিক্ষক
মানে
আদব-কায়দা
শিক্ষক
মানে
নিয়ম
সর্বদা।
শিক্ষক
মানে
মানার
যোগ্যতা,
শিক্ষক
মানে
মনের
উদারতা।
শিক্ষক
মানে
ভয়ের
কিছু
শিক্ষক
মানে
হয়
না
নিচু।
শিক্ষক
তুমি
সত্যি
মহান
বিজয়
করিলা
সারা
জাহান
তোমারি
নিজস্ব
গুনেতে।
‘শিক্ষকের মর্যাদা’
সাদিয়া জাফর
পৃথিবী সমান সম্মান যদি তোমার চরণে ঢালি;
সমুদ্র হতে জলরাশি নিয়ে বানাই লিখার কালি;
তোমার এ ঋণ শোধ হবার নয়;
তোমার তারিফ জগত জুড়ে রয়।
শিক্ষা গুরু তোমার আলোয় আমরা আলো জ্বালি;
চির উজ্জ্বল ঊর্ধ্বে সবার তোমার তরে শ্রদ্ধার অঞ্জলি ।
সভ্য মানুষ সভ্য জাতি আজিকে চতুর্দিক;
হাতে খড়ি দিয়েছ বলে রয়েছে জাগরীক।
আঁধার যেখানে সেখানে জ্বালো;
দৃষ্টিহীনে ফুটাও আলো।
তোমার এ দান চির উন্নত উন্নত তোমার শির;
তোমার আঙিনায় জ্ঞান পিপাসুরা তুমি-ই মহাবীর।
একুশ মানে
আশরাফ চৌধুরী
একুশ মানে মিছিল জুড়ে বজ্র নিনাদ গলা,
একুশ হল ইচ্ছেমত মায়ের কথা বলা।
একুশ মানে সম্মুখপানে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষণ,
একুশ হল সবাই মিলে স্বদেশ গড়ার পণ।
একুশ মানে মায়ের কোলে আমার বাংলা ভাষা,
একুশ হল দেশের তরে সব হারানোর আশা।
একুশ মানে বাউল কবির নতুন বাধা গান,
একুশ হল শহিদ মিনার শূন্য দেহে প্রাণ।
একুশ মানে শান্ত দিঘীর দুইটি পাতিহাঁস,
একুশ হল রক্ত ঝরার দীর্ঘ ইতিহাস।
একুশ মানে বীর শহীদের রক্ত লালে লাল,
একুশ হল প্রতিবাদের সুদীপ্ত মশাল।
একুশ মানে স্বাধীনতার মহান উদ্বোধন,
একুশ হল পাকিস্তানের অরণ্যে রোদন।
একুশ মানে আমার মায়ের করুণ হাহাকার,
একুশ হল কেটে যাওয়া প্রথম অন্ধকার।
একুশ মানে কাল বোশেখির জোয়ার ভাঙ্গা নদী,
একুশ হল মুক্তিক্ষুধা চলছে নিরবধি।
একুশ মানে বাংলা মাকে চিনল বিশ্ব নিখিল,
একুশ হল লক্ষ্যপাণে চলছে বিশাল মিছিল।
একুশ মানে ফাগুন মাসে আগুন ঝরার দিন,
একুশ হল বায়ান্নের শুধতে হবে ঋণ।
ইংরেজী শিক্ষক, চট্টগ্রাম সরকারী বালক উচ্চবিদ্যালয
Discussion about this post