বিশেষ প্রতিবেদক
চলতি অর্থবছরে দুই হাজার ৬১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। প্রায় ১০ বছর পর এ জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তবে এখনো অন্তত সাত হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিভুক্ত হতে পারেনি। পাশাপাশি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি রয়েছে।
সবমিলিয়ে আগামী বাজেটে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। অবশ্য শিক্ষায় করোনার ঝুঁকি প্রশমনে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ দরকার বলে মত শিক্ষাবিদের। সেজন্য আগামী বাজেটের ১৫ শতাংশ এ খাতে বরাদ্দ করার আহবান জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ‘শিক্ষায় করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি। নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা এ পরিস্থিতিতে মানবেতর জীবন যাপন করছে। পাশাপাশি এমপিওভুক্ত করতে বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া মুজিববর্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা আসবে বলে আশা আমাদের।’
জানা গেছে, বাজেটে বরাদ্দ ছাড়াও চিকিৎসা ভাতা, বাড়িভাড়া, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, উচ্চতর বেতন গ্রেড প্রদানের মতো আরও কিছু দাবি রয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। তবে শিক্ষাব্যবস্থাই জাতীয়করণের জোরালো দাবি তুলেছেন শিক্ষকরা। আগামী বাজেটেই এসব দাবি পর্যায়ক্রমে হলেও প্রতিফলন দেখতে চান তাঁরা।
আর নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলা মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত করা আমাদের একমাত্র দাবি। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দকৃত টাকার পুরোটা ব্যয় হয়নি। অথচ শর্ত শিথিল করলে আরো কিছু প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা যেত। আগামী বাজেটে সব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ থাকবে বলে বিশ্বাস করি।’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর বাজেটের আগে শিক্ষকরা দাবিদাওয়া নিয়ে সরব থাকেন। তবে এবার করোনাভাইরাসের কারণে তা দেখা যায়নি। তবে শিক্ষকরা অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব আছেন। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁদের দাবিদাওয়াসংবলিত স্মারকলিপি পৌঁছে দিচ্ছেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রীসহ অন্যান্য নীতিনির্ধারকদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। আগামী অর্থবছর থেকেই সরকারি শিক্ষকদের মতো বেতন-ভাতা চাই আমরা ।’
বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফোরামের আহবায়ক নেকবর হোসাইন বলেন, ‘দীর্ঘ ২৮ বছরেও এমপিও নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত না থাকায় আমরা সুবিধাবঞ্চিত। অর্থাৎ এমপিওভুক্ত কলেজে চাকরি করলেও বেতন-ভাতা পাই না সরকার থেকে। এমপিও নীতিমালা সংশোধনসহ আগামী বাজেটেই প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চাই।’
জানা যায়, চলতি অর্থবছরে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী নীতিগত অনুমোদন দেয়ার পর ৩১১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ শেষ না হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির কাজ শিক্ষা মন্ত্রণালয় শেষ করতে পারেনি।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোকে প্রাথমিকের সমান মর্যাদায় জাতীয়করণ করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি এস এম জয়নুল আবেদীন জেহাদী বলেন, ‘জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত চলতি বাজেটের বরাদ্দ ৩১১ কোটি টাকা সমন্বয় করে শিক্ষকদের বেতন দিতে হবে। আগামী বাজেটে জাতীয়করণের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে। ২০১৮ সালের নীতিমালা জারি হওয়ার আগে ২০১৪ সালে শূন্যপদে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকের বিদ্যমান নিয়মে বেতন ভাতা দিতে হবে।
এদিকে শিক্ষা খাতে করোনার প্রভাব ও সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ দরকার বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। সম্প্রতি গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে ঝরে পড়া, শিশু শ্রম বৃদ্ধি, বাল্যবিবাহ, প্রসূতি মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এছাড়া শিক্ষকরা বিপদে পড়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এসব থেকে উত্তরণে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকে বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। সবার আগে বাজেটে শিক্ষার জন্য বড় বিনিয়োগ করা দরকার।’ এসময় তিনি বাজেটে এ খাতে ১৫ শতাংশ বরাদ্দের আহবান জানান।
Discussion about this post