নিজস্ব প্রতিবেদক
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর ভাতার তহবিল ঘাটতিতে সংকট বাড়ছে। অবসর ভাতার টাকা না পাওয়ায় গরিব অনেক শিক্ষক অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
২০১৮ সালে অবসরে গিয়ে এখনও টাকা তুলতে পারেননি এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২২ হাজার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী জানান, এখন পর্যন্ত ২২ হাজার ৪৩৩ শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন জমা আছে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ প্রাপ্য অর্থের তথ্য জানতে এই ভবনে আসছেন। কিন্তু তহবিল সংকটের কারণে আমরা চাহিদামতো সুবিধা দিতে পারছি না। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষকের সংখ্যা আড়াই বছরে প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার কমেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি জানান, আবেদনকারীর সংখ্যাটা ছিল প্রায় ৪৬ হাজার। শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্টের কথা অবগত হয়ে পরপর তিন অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোর্ডকে এক হাজার ৩১৭ কোটি টাকা প্রদান করেছেন। এ কারণেই অল্পসময়ে ভুক্তভোগীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
তিনি আরও জানান, এই সমস্যা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুজিববর্ষে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় ১২ হাজার শিক্ষককে আমরা অবসরের অর্থ পরিশোধ করতে চাই। এজন্য সম্পূরক বাজেট থেকে এক হাজার কোটি টাকা চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
অবসর বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে ২২ হাজার ৪৩৩ শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন জমা আছে। এসব আবেদনের বিপরীতে প্রাপ্য পরিশোধে প্রয়োজন দুই হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে প্রতিমাসে গড়ে ৮৩৩টি আবেদন এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এসব আবেদন নিষ্পত্তিতে প্রতি মাসে দরকার ১০৫ কোটি টাকা।
তারা আরও জানান, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবসর ভাতার আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বর্তমানে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত জমা হওয়া আবেদনের অবসর সুবিধার টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আবেদনের নিরীক্ষা শেষ হয়েছে। এরপর বোর্ডসভায় অনুমোদন নিয়ে চেক পাঠানো হবে। নভেম্বরের মধ্যে আবেদনকারীরা অর্থ পেয়ে যাবেন।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী ৬৫০ কোটি টাকার অনুদান দেন। এর মধ্যে ৫০০ কোটিই দেন স্থায়ী তহবিল হিসেবে। পাশাপাশি ২০১৭ সালে ১০০ কোটি ও ২০১৮ সালে ৫৩২ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী। থোক বরাদ্দের টাকায় শিক্ষকদের সুবিধা দেয়া হয়। যে কারণে আবেদনকারী অর্ধেকে নেমে আসে। আর স্থায়ী তহবিল এফডিআর করা হয়। বর্তমানে ৬১০ কোটি টাকার এফডিআর করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আরও ৩৫ কোটি টাকা স্থায়ী তহবিল হিসেবে দেয়া হয়। এ অর্থও শিগগির এফডিআর করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা দেয়া শুরু হয়। আইন অনুযায়ী শিক্ষকরা প্রতিমাসে এমপিও বা বেতন থেকে চাঁদা দেবেন। শুরুতে এটা ৪ শতাংশ ছিল। পরে এটা ৬ শতাংশ করা হয়। পাশাপাশি প্রতিবছর এই খাতে সরকারি অনুদানও আসার কথা ছিল। কিন্তু শুরু থেকেই এই অবসর সুবিধা বোর্ড চরম অবহেলিত। ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই বোর্ডের এফডিআর ছিল মাত্র ৮৯ কোটি টাকা।
Discussion about this post