নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয়করণ করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এখনও যারা যোগ্যতা অর্জন করেননি, তাদের চাকরি থাকবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সমস্যার সমাধান না হতেই কেউ অবসরে গেলে পেনশন-গ্র্যাচুয়িটি পাবেন কিনা বা এতদিন ধরে নেওয়া বেতন ফেরত দিতে হবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার তিনটি ধাপে নিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৬ হাজার ১৯৩টি জাতীয়করণ করে। এসব বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা ছিল না। জাতীয়করণের পর শিক্ষক আত্তীকরণের সময় এসব শিক্ষকের তিন বছরের মধ্যে সিইন-এড কোর্স সম্পন্ন করে এইচএসসি সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এসব শিক্ষকের একটি অংশ কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। যোগ্যতা অর্জন না করেই অনেকে অবসরেও গেছেন। অবসরে যাওয়া শিক্ষকরা পেনশন-গ্র্যাচুয়িটি পাচ্ছেন না। এই বিষয়টি সামনে আসার পর প্রশ্ন উঠেছে, কর্মরত যারা এখনও যোগ্যতা অর্জন করেননি, তাদের চাকরি থাকবে কিনা?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘যেসব শিক্ষকের কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা নেই, তাদের তিন বছরের মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। যারা তিন বছরের মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করেননি, তাদের শিক্ষক হিসেবে থাকার কথা নয়। অনেকেই রয়ে গেছে, যারা যোগ্যতা অর্জন করেননি। শুধু তারা নন, যারা বেতন-ভাতা দিচ্ছেন তারাও বিপদে পড়বেন। অডিটে আপত্তি আসবে যে তিন বছরের মধ্যে যোগ্যতা অর্জনের কথা বলা ছিল, তা না করলে কীভাবে বেতন দেওয়া হলো।’
এসব শিক্ষকের যোগ্যতা অর্জনে আরও সময় দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘তাদের তো চাকরি থাকার কথা নয়। এ জন্যই তথ্যগুলো চাচ্ছি, সমস্যার সমাধান করতে।’
এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যদি শর্ত শিথিল করে আরও যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষকদের সিইন-এড (সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন) কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। ১৯৮৫ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে সবার নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণ করা ছিল শুধু মাধ্যমিক পাস। ওই বিধিমালা অনুযায়ী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। ১৯৯১ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয় নারীদের মাধ্যমিক (এসএসসি) এবং পুরুষদের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি)।
কয়েক দফায় নিয়োগ যোগ্যতা বাড়ানোর পর সরকার নিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে। এরপর শিক্ষকদের শর্ত দেওয়া হয় তিন বছরের মধ্যে এসএসসি বা সিইন-এড সার্টিফিকেট কোর্স পাস করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালের পর আরও দুই দফায় নিয়োগ যোগ্যতা বাড়ানো হয়। ২০১৩ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী নারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি ও পুরুষদের জন্য স্নাতক করা হয়। সর্বশেষ নিয়োগবিধি-২০১৯ অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যোগ্যতাবিহীন শিক্ষকদের জন্য চাকরির ধারাবাহিকতা রক্ষায় যদি শর্ত শিথিলের সুযোগ দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে যেসব শিক্ষক যোগ্যতা অর্জন করেননি তাদের এইচএসসি পাস করতে হবে অথবা সিইন-এড সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।
এদিকে শিক্ষকদের নিয়োগ যোগ্যতার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ কোর্সও উন্নয়ন করা হয়েছে। সিইন-এড সার্টিফিকেট কোর্সের পরিবর্তে এইচএসসি পাস শিক্ষকদের জন্য রয়েছে ডিপি-এড (ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন) সার্টিফিকেট কোর্স। বর্তমানে বেশিরভাগ প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে সিইন-এড সার্টিফিকেট কোর্স চালু নেই। বর্তমানে ময়মনসিংহ, পাবনা, ফরিদপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও খাগড়াছড়িসহ আরও কয়েকটি জায়গায় এই কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর প্রধান ক্যাম্পাস থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন করার ব্যবস্থা রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে যোগ্যতাবিহীন এসব শিক্ষকের শর্ত শিথিল করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাসেম বলেন, ‘মানবিক কারণে শর্ত শিথিল করে কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জন করার সুযোগ দেওয়া উচিত। দীর্ঘদিন তারা বিনা বেতনে চাকরি করেছেন। যদি শর্ত শিথিল করা না হয়, তাহলে সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী তাদের চাকরি থাকবে না। তাই তাদের জন্য শর্ত শিথিল করা প্রয়োজন।‘
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব এবং সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি তাদের আরও সময় দেওয়া উচিত মানবিক বিবেচনায়।’
Discussion about this post