নিজস্ব প্রতিবেদক
বেসরকারি আমলে চাকরিকাল গণনা করে ২০১৩-২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অধিগ্রহণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টাইমস্কেল দেয়া হয়েছিল। তবে, সম্মতি না নিয়ে হিসাবরক্ষণ অফিসগুলো থেকে শিক্ষকদের এভাবে টাইমস্কেল দেয়াকে বিধিবহির্ভূত বলছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তাই, এসব শিক্ষকদের টাইমস্কেল বাবদ দেয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরতের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সব ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস, ডিস্ট্রিক্ট একাউন্টস অন্ড ফিনান্স অফিসার, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এবং উপ মহানিয়ন্ত্রককে এ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
যদিও বেসরকারি আমলের চাকরিকাল গণনা করে টাইমস্কেল পাওয়া শিক্ষকরা বলছেন, আদালত থেকে স্থগিতাদেশ থাকলেও তাদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যা আদালতের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন। তাই, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, বেসরকারি আমলে চাকরিকাল গণনা করে ২০১৩-২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অধিগ্রহণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষককে টাইমস্কেল দেয়ার বিষয়টি হিসাব মহানিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নজরে আসে। এসব শিক্ষকের টাইমস্কেল গণনার বিষয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চায় হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়।
গত ১২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বিষয়টি বিধিবহির্ভুত বলে জড়িত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। একই সাথে বেসরকারি আমলে চাকরিকাল গণনা করে অধিগ্রহণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টাইমস্কেল বাবদ নেয়া টাকা ফেরতের নির্দেশ দেয়া হয়।
বিধিবহির্ভূতভাবে নেয়া টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ জারির পর শিক্ষকরা আদালতের দ্বারস্থ হন। তারা জানান, অর্থমন্ত্রণালয়ের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট মামলার শুনানি শেষে হাইকোর্ট তা স্থগিত করে দিয়েছে।
এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, জাতীয়করণের আগের চাকরিকাল গণনা করে শিক্ষকদের টাইমেস্কেল দেয়ার কোন সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি।
সবশেষে মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সব ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস, ডিস্ট্রিক্ট একাউন্টস অন্ড ফিনান্স অফিসার, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এবং উপ মহানিয়ন্ত্রককে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, গত ১২ আগস্ট অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা চিঠিতে ২০১৩-২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অধিগ্রহণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে টাইমস্কেল দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়া গেছে। যাতে এ বাবদ দেয়া টাকা ফেরত নেয়ার নির্দেশনা আছে। তাই, অর্থ মন্ত্রণালয় নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে চিঠিতে।
অধিগ্রহণকৃত স্কুলগুলোর শিক্ষকরা বলছেন, কেনই বা টাইমস্কেল দিল কেনই বা তা ফেরত নিচ্ছে? টাকা কি বেতন থেকে কেটে নিবে? টাকাতো বেতনের সাথে খরচ করে ফেলেছি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও অধিগ্রহণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনসুর আলী বলেন, সব সহকারী শিক্ষক ও বেশিরভাগ প্রধান শিক্ষককে আগেই টাইমস্কেল দেয়া হয়েছিল। যে গেজেট অনুসারে আমাদের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়েছে তার আলোকেই শিক্ষকরা টাইমস্কেল পেয়েছেন। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে। টাকা ফেরতের নির্দেশ দেয়া হলে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালতের আদেশে তা স্থাগিত করা হয়েছে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে টাইমস্কেল দেয়ার কোন সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। আগেই পর্যালোচনা করে শিক্ষকদের টাইমস্কেল দেয়া উচিত ছিল। তা না করায় শিক্ষকরা বিপদে পড়ছেন। এখন টাইমস্কেল পাওয়া অধিগ্রহণকৃত স্কুল শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যা আদালতের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবেলা করবো। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হবে। আমরা আবারও আদালতের দ্বারস্থ হবো।
Discussion about this post