নিউজ ডেস্ক
হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকার পরও প্রায় ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষকের টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার নির্দেশ বহাল রাখায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি একটি আদালত অবমাননার নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, উপ-সচিব রওনক আফরোজা সুমা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন এবং হিসাব মহা-নিয়ন্ত্রক মো. জহিরুল ইসলামকে এ নোটিশ পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) প্রায় অর্ধ লক্ষ শিক্ষকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সেলিনা আকতার এ নোটিশ প্রেরণ করেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালে প্রায় ৩৭ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি শিক্ষক মহাসমাবেশে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৭৭২ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণকৃত প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি শর্তাদি নির্ধারণ বিধিমালা এসআরও নং- ৩১৫ আইন ২০১৩ প্রণয়নপূর্বক গেজেট প্রকাশ করেন। এরপর থেকে ওই বিধিমালার ২ (গ) নং বিধিতে ৫০ শতাংশ বেসরকারি চাকরি কার্যকর ধরে শিক্ষকদের বেতন, ভাতা, টাইম স্কেল, জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতিসহ সকল প্রকার সুবিধাদি ভোগ করে আসছেন।
এতে আরও বলা হয়, উপরোক্ত গেজেটের আলোকেই শিক্ষকরা টাইম স্কেল পেয়ে আসছেন। অথচ এর মধ্যে চলতি বছরের ১২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয় একটি আদেশ জারি করে। ওই আদেশের মাধ্যমে ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষকের ক্ষেত্রে টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির পক্ষে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহীর গাঙ্গোপাড়া বাগমারার প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান সহ অন্যান্য শিক্ষকরা বাদী হয়ে এ রিট দায়ের করেন। গত ৩১ আগস্ট ওই রিটের শুনানি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশটি ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এরপর হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি গত ৮ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় সহ মামলার সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের পাঠানো হয়। কিন্তু এরপরও গত ২৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে পুনরায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষকের ক্ষেত্রে টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার জন্য হিসাব মহা-নিয়ন্ত্রককে নির্দেশ প্রদান করা হয়। পরে আদালতের রায় বাস্তবায়ন চেয়ে বিবাদীদের আদালত অবমাননার বিষয়ে এ নোটিশ প্রেরণ করা হলো।
তাই নোটিশে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বাস্তবায়ন চাওয়া হয়েছে। অন্যথায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, একজন সরকারি চাকরিজীবী তার চাকরি জীবনে মোট তিনটি টাইম স্কেল (সরকারি বেতন স্কেল) পেয়ে থাকেন। তাই আমাদের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়ায় আমরাও সরকারি বেতনভুক্ত হই এবং প্রতিষ্ঠান সরকারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে টাইম স্কেল তথা সরকারি বেতনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই টাইম স্কেল পাওয়ার ফলে আমাদের বেতন একধাপ বৃদ্ধি পায়। অথচ প্রায় ৮ বছর পর এসে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০১৩ থেকে এখন পর্যন্ত টাইম স্কেলের ফলে আমাদের যে অতিরিক্ত বেতন বৃদ্ধি পেয়েছিলো, তা ফেরত চেয়ে নোটিশ দিয়েছে। আর এ কারণেই আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সে নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলাম। সে রিটের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় গত ১ অক্টোবর এবং আজ এ বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হলো।
Discussion about this post