বিশেষ প্রতিবেদক
প্রাথমিকে দেশসেরা প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছেন নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্তিপুর ২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছা. ফাতেমা খাতুন।গত ১ নভেম্বর ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০১৯’ উপলক্ষে তাকে দেশের সেরা প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার পেছনে ফাতেমা খাতুনের রয়েছে অনেক শ্রম ও সাধনা, যা একদিনে সম্ভব হয়নি। শুধু শ্রেষ্ঠত্বের পদক পাওয়ার জন্য নয়, একজন শিক্ষক হিসেবে যা করণীয় তাই তিনি করেছেন। অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা ও উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেছেন বিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে। তিনি বিশ্বাস করেন আন্তরিক ও নিবেদিত হয়ে কাজ করলে সফলতা আসবেই।
ঝরে পড়া রোধ করতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের খাতা-কলম, চশমা ও চার্জার লাইটসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা করেছেন ফাতেমা খাতুন। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে প্রতি মাসে বেতনের ১০ শতাংশ টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ডে দেন। ভালো ফলাফলে শিখনফল অর্জনে সহায়ক কার্যাবলি হিসেবে স্থানীয় উদ্যোগে পাঁচজন প্যারাটিচারের ব্যবস্থাসহ শিক্ষার্থীদের কাছে বিদ্যালয় নিরাপদ ও আনন্দদায়ক করে তুলেছেন। বিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় স্থানীয় উদ্যোগে ২০১৮ সালে বায়োমেট্রিক হাজিরা ও ছয়টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন।
বিগত বছরগুলোতে- ছুটির মধ্যেও প্রতিদিন বিদ্যালয় সকাল ৭টা-৯টা পর্যন্ত প্রথম-পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য রাতে পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখতেন। করোনাভাইরাসের মধ্যে বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও অভিভাবকদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রেখেছেন। এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজখবর রেখেছেন।ছাত্র-ছাত্রীদের হাতের লেখা ভালো করার জন্য মায়েদেরও লেখা শেখানোর ব্যবস্থা করেছেন।
ফাতেমা খাতুন ১৯৯০ সালে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার বাগধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। গত ৩০ বছরের চাকরি জীবনে অনেক বিদ্যালয়বান্ধব কাজ করেছেন এই প্রধান শিক্ষিকা।
প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে তার ১৪ বছরের অর্জনের মধ্যে রয়েছে- ২০২০ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা, ২০১৯, ২০১৮, ২০১৭ ও ২০১৫ সালে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ঝরে পড়া রোধে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়, ২০১৯, ২০১৮, ২০১৬, ২০১৪, ২০১৩, ২০১২, ২০১০ ও ২০০৭ সালে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়, ২০১৯, ২০১৮, ২০১৭, ২০১৫, ২০০৯ ও ২০০৮ সালে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা, ২০১৬ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ এসএমসি এবং ২০১১ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষা পদক লাভ করেন।
দেশসেরা প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন বলেন, আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের সব সম্মানিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবক, সহকর্মীদের। সেই সঙ্গে কীর্ত্তিপুরবাসী, আমার বন্ধু-বান্ধব, নওগাঁবাসী এবং দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। একই সঙ্গে আমার প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আমার অকৃত্রিম স্নেহ ও ভালোবাসা। সবার প্রেরণা ও উৎসাহে আজ আমি দেশসেরা প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছি। আমার আজকের প্রাপ্তিতে সারাদেশ থেকে যারা আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তাদের সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
Discussion about this post