৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও পেনশনের টাকা পাননি কিশোরগঞ্জের কালটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সানাউল করীম। অর্থের অভাবে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় গত সপ্তাহে মারা যান তিনি। এক বছর অবসর পরবর্তী ছুটি (পিআরএল) কাটানোর দীর্ঘ ৬ মাস পর তার মৃত্যুর খবরে তড়িঘড়ি করে ফাইল পাঠানো হয়েছে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসারের কার্যালয়ে। সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কামরুল হাসান দ্রুত পেনশন ফাইল নিষ্পত্তির কথা বলে ঘুষ নেন বলে দাবি শিক্ষকের পরিবারের।
ওই শিক্ষকের স্ত্রী ও কন্যার দাবি, পেনশনের টাকা না পাওয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত শিক্ষক সানাউল করীম উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা নিতে পারেননি। এ কারণে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে বাড়িতে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। ১২ নভেম্বর রাতে তাকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ভোর ৪টার দিকে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে ভর্তির পর ভোর ৫টায় সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি । পরিবারের অভিযোগ, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চণ্ডিপাশা ইউনিয়নের চিলা কারা গ্রামের সানাউল করীম পার্শ্ববর্তী কালটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসরে যান। চলতি বছরের ২০ মে তার পিআরএলও শেষ হয়। নিয়মানুযায়ী পিআরএল শুরু থেকেই পেনশন ফাইল প্রস্তুতির কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু তা শেষ হলেও পেনশন ফাইল প্রস্তুতির কাজ শুরু না হওয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত শিক্ষক দিশেহারা হয়ে পড়েন।
তার চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিপুল অঙ্কের টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় দ্রুত পেনশন ফাইল নিষ্পত্তির জন্য কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কামরুল হাসানের কথামতো ধার-দেনা করে তার হাতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষও তুলে দেন তিনি। এর পরও আরও টাকার জন্য টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করে ফাইলটি আটকে রাখেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে হৃদরোগে আক্রান্ত শিক্ষক সানাউল করীম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার মৃত্যুর খবরে দীর্ঘদিন পর তড়িঘড়ি করে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ফিক্সেশন রিভাইজের জন্য জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসারের কার্যালয়ে পেনশন ফাইল পাঠায় ওই অফিস সহকারী কামরুল হাসান।
তার দাবি, নানা জটিলতার কারণে ফাইলটি চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করা যাচ্ছিল না। চলতি সপ্তাহে ফাইলটি জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ সময় ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে নীরব থাকেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এনামূল হক খান দাবি করেন, তিনি সময়মতো ওই পেনশন ফাইলে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। এতদিন আটকে রাখা এবং ঘুষ নেয়ার বিষয়টি তিনি অবগত ছিলেন না।
শিক্ষক সানাউল করীমের কলেজ পড়ুয়া কন্যা স্মৃতি আক্তার জানান, কেন জানি অফিস সহকারী কামরুল হাসান ঘুষের ওই ৫০ হাজার টাকা থেকে ১৯ নভেম্বর ২০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে রোববার আবার অফিসে গিয়ে খোঁজ নিতে বলেছেন তাকে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক জানান, এ ঘটনা নজিরবিহীন। আজকাল কয়েক দিনের মধ্যেই পেনশন কেস নিষ্পত্তি করা হয়। এ সময় ৫০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ এবং দীর্ঘদিন ফাইল আটকে রাখার বিষয় তদন্ত করে জড়িত অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পেনশন ফাইল নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবেন বলেও জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
সূত্র : যুগান্তর
Discussion about this post