নিউজ ডেস্ক
নানা রকম অনিয়মের অভিযোগে অবশেষে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কাজী নাসির উদ্দিনকে সোমবার অব্যাহতি দিয়েছেন প্রভাষক অধ্যাপক ড. রফিকউল্লাহ খান।
কাজী নাসির উদ্দিন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এ অব্যাহতিকে নিয়ম বহির্ভুত দাবি করে ওই রেজিস্ট্রার বলেন, নানা অনিয়ম দুর্নীতির পথকে সুগম এবং দেশসেরা প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট নয় ছয় করতেই এই অবৈধ অব্যাহতি।
নিয়ম অনুযায়ী, আগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হয়। পরবর্তীতে সেগুলো সিন্ডিকেটে পাস করানোর পর অব্যাহতি দিতে হয় বলে জানান ওই রেজিস্ট্রার।
নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূতভাবে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ, উন্নয়ন কাজে বাধা, সহকর্মীদের মানসিক চাপ প্রয়োগ, অসদাচরণ ও ব্যক্তিগত কাজে বাধ্য করা, নারী সহকর্মীদের পোশাকের বিষয়ে অশালীন মন্তব্য করা, উপাচার্যের অগোচরে নথিতে কারসাজি, ব্যক্তিগত কাজে অফিসের গাড়ি ব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা, সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করাসহ নানারকম অভিযোগ ওঠে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণের ও বেফাঁস কথাবার্তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হয় উপাচার্যকে। অবশেষে সব অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেয়। রেজিস্ট্রারের দুর্নীতির দুষ্টচক্রের লুটপাটের থাবা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচাতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। এতদিন উন্নয়নের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রেজিস্ট্রার। এখন বোনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের কতিপয় শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের উসকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা জানান, ‘রেজিস্ট্রার ও তার বোন অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক শুভ্রা মিলে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে হাতে রাখতেন। এখন তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর নামে এ প্রতিষ্ঠানে কোনো দুর্নীতি না হোক, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি না থাকুক, সেটাই আমাদের চাওয়া।’
এ বিষয়ে শেহাবির ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. রফিকুল্লাহ খান সোমবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে অব্যাহতির খবর নিশ্চিত করে বলেন, ‘গত রোববার রাত থেকেই তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত হয়তো কার্যকরী হয়ে গেছে।’
মোবাইল ফোনে ভিসির কাছে রেজিস্ট্রারের অব্যাহতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন থেকেই নেত্রকোনাবাসী বিরক্ত তার প্রতি। ইউজিসি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ আরও অনেকেই বিরক্ত নানা আচরণে। এই সব মিলিয়েই দেওয়া হয়েছে। আমি নিয়োগ দিয়েছি আমিই অব্যাহতি দিয়েছি।’
অব্যাহতিপত্রে কি লিখেছেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লিখিত অব্যাহতিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে আপনাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’
এভাবে দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এসে নেই নেত্রকোনা। সামনাসামনি কথা বলবো।’
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে অব্যাহতিপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কাজী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘টেন্ডার ড্রপ, ট্রেজারারকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্টটাইম কাজের সুযোগ, নিয়োগসহ নানা অনিয়ম করতে না দেওয়ায় এবং সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সকল তথ্য চলে যাবার ভয়ে আমাকে অব্যাহতি দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমত, গত বৃহস্পতিবার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ওদিনই আমাকে অব্যাহতি দিয়েছে। কারণ বেশ কিছু গোপনীয় বিষয় থাকে। এগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দিলে সে অনুযায়ী টেন্ডার সাবমিট করবে। একটি বড় অংকের লেনদেনের মাধ্যমে কাজ পাবে লিঁয়াজোকারী প্রতিষ্ঠান। কাজে নয় ছয় করে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটা লুটপাট হবে। আমি থাকলে সেটি করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সব তথ্য যাবে।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন ট্রেজারার সুব্রত কুমার আদিত্যকে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্টটাইম কাজ করতে চাইলে আমি সেটিতে রাজি হননি। কারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খর্ব করার আমার কোনো রাইটস নাই। এছাড়াও এডহক ভিত্তিতে প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেওয়াও একটি বিষয়। তিনি বিজ্ঞাপন অনুযায়ী দারোয়ান নিয়োগ দেন নাই। এর বাইরে অন্য চারজনকে নিয়োগ দিয়েছেন টাকা নিয়ে।’
কাজী নাসির উদ্দিন আরও বলেন, ‘এছাড়াও শিক্ষার্থী ভর্তির সময় শাহিন নামের এক শিক্ষককে দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করিয়েছেন। তার উপর রয়েছে নিয়োগের বিষয়। সব মিলিয়ে যা তা করলে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত চলে যায়। তিনি নেত্রকোনায় থাকেন না নিয়মিত। ট্রেজারারও কোনোদিন এসেছে বলে মনে হয়নি। ইচ্ছেমতো স্বার্থ কায়েম করতে না পেরে এটি করেছেন। যা নিয়ম বহির্ভুত।’
রেজিস্ট্রারের অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করলে ভিসি বলেন, ‘এসব তো বলবেই। টেন্ডার শুরু হয়েছে। আপনারা কাজ দেখতে পাবেন দ্রুতই। তবে এসে নিই পরে কথা বলবো। আমি এসে ফোন দিবো।’
Discussion about this post