নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনাকালীন সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে (পিটিআই) প্রশিক্ষণ নিয়েও ভাতা পাচ্ছিলেন না ২১ হাজারেরও বেশি শিক্ষক। গত বছরের জুলাইয়ে প্রশিক্ষণ শুরুর পর করোনার প্রকোপ বাড়লে পিটিআইগুলোতে সরাসরি প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আর এর পরিবর্তে অনলাইনে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো হয়। এ বছর জুনে প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে গেলেও তারা ভাতা পাচ্ছিলেন না। সশরীরে প্রশিক্ষণের বদলে অনলাইনে প্রশিক্ষণ নেওয়ায় ভাতা আটকে দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ ভাতা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আছমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বলা হয়, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় পিটিআইগুলোতে ডিপিএড প্রশিক্ষণার্থীদের অনলাইনে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলাকালে প্রশিক্ষণ ভাতা এবং অনলাইনভিত্তিক ডিপিএড প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য দুই শিফট বিশিষ্ট পিটিআইগুলোতে রাজস্ব খাতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসিক মূল বেতনের অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ টাকা প্রদানের জন্য বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনাকালে তিন মাস সরাসরি প্রশিক্ষণ দিয়ে পরে তাদের অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হয়। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ ভাতার পরিমাণ ৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি।
ডিপিএড প্রশিক্ষণ চলার সময় প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা করে ভাতা এবং কিট অ্যালাউন্স বাবদ এককালীন ১৮ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। গত ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রশিক্ষণার্থীরা তিন মাস ক্লাস করার পরপরই মহামারি করোনার কারণে সরাসরি আর ক্লাস করতে পারেননি।
শিক্ষকরা জানান, সরাসরি না পারলেও অনলাইনে তাদের নিয়মিত ক্লাস করতে হয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি সপ্তাহে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে তা পিটিআইয়ে গিয়ে জমা দিতে হয়েছে। অনলাইনে ক্লাস করা এবং নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে পিটিআইয়ে পৌঁছে দিতে হতো বলে পিটিআই কর্তৃপক্ষ তাদের প্রশিক্ষণ ভাতার পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল।
তবে অতিরিক্ত অর্থ দূরে থাক, নিয়মিত ভাতাই এখনও পাননি বলে সমকালের কাছে অভিযোগ করেছেন প্রশিক্ষণার্থীরা। তারা বলছেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন- এই ছয় মাসের ভাতা দেওয়া হলেও গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসের ভাতা তারা এখনও পাননি।
প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা জানান, করোনাজনিত পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য তাদের প্রত্যেককে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার স্মার্টফোন, পাঁচ হাজার টাকার ওয়াইফাই কানেকশন, ওয়াইফাইয়ের মাসিক বিল ৭০০ টাকা, সংস্থাপন খরচ বাবদ এক হাজার ৮০০, অ্যাসাইনমেন্ট খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৬০০, বিজ্ঞান ব্যবহারিক খরচ বাবদ ২০০, এক্সপ্রেসিভ আর্টের জন্য ২০০, বার্ষিক পরীক্ষার ফরম ফিলআপ বাবদ দুই হাজার ৮০০ টাকা ছাড়াও বার্ষিক পরীক্ষার সময় বাসা ভাড়া ও করোনার জন্য বাড়তি সুরক্ষা খরচ ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।
চট্টগ্রাম পিটিআইর ডিপিএড প্রশিক্ষণার্থী রাহুল চেীধুরি বলেন, অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিতে ঋণ করে স্মার্টফোন কিনেছি। ভাতা না পাওয়ায় এখনও তা পরিশোধ করতে পারিনি। ভাতা পেলে ঋণ শোধ হবে।
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) মহাপরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, কিছু জটিলতার কারণে শিক্ষকরা এতদিন প্রশিক্ষণ ভাতা পাননি।
বিধান ছিল ফেস টু ফেস প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। করোনা এসে যাওয়ায় প্রশিক্ষণ অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা করে দিয়েছে, করোনাকালে অনলাইনে প্রশিক্ষণ, সেমিনার করা যাবে। এখন অর্থছাড় হলো। খুব শিগগির শিক্ষকরা এ ভাতা পেয়ে যাবেন বলে জানান তিনি।
Discussion about this post