শিক্ষার আলো ডেস্ক
মানদণ্ড হিসেবে আদর্শ শিক্ষকের যথাযথ উদাহরণ হলেন তিনি। জীবনের পুরোটা সময়ই যিনি কাটিয়েছেন প্রিয় শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে। কর্মজীবনে একদিনও নেননি কোনো ছুটি। তা অর্জিত হোক আর বাৎসরিক। কাটাননি অসুস্থতাজনিত ছুটিও। বলা হচ্ছে যশোরের সত্যজিত বিশ্বাসের কথা। আর মাধ্যমিকের এই শিক্ষক পুরো চাকরিজীবন কাটিয়েছেন গণিত আর বিজ্ঞান পড়িয়ে।
ব্যতিক্রমী আপাদমস্তক এই শিক্ষাগুরু আর কদিন বাদেই যাবেন অবসরে। রোদ কিংবা ঝড়-বৃষ্টি, যাই হোক না কেনো, স্কুলে আসেননি সত্যজিৎ বিশ্বাস, এমন রেকর্ড নেই। গেলো ৩৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে সরকার নির্ধারিত’র বাইরে ছুটি কাটাননি একটি দিনও।
সত্যজিত বিশ্বাস জানালেন, ১৯৮৪ সালে বিএসসি পাশের বছর দুয়েক পর সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন যশোরের অভয়নগরের ধোপাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। কর্মজীবনে কখনও ফাঁকি দেবেন না, এই ব্রত ছিল তার। সে অনুযায়ী কাজ করতে করতে স্কুলই হয়ে ওঠে তার জীবনের ধ্যান-জ্ঞান। বিয়ের দিন স্কুলে এসেছেন তিনি। ক্লাস নিয়েছেন যেদিন তার বাবা মারা গিয়েছিলেন সেদিনও।
সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, মাঝে মধ্যে মনে হয় শরীরটা একটু অসুস্থ কিন্তু যখন স্কুলে আসি তখন আমার আর তেমন কিছু মনে হয় না।
২০১৫ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক হন সত্যজিৎ। পদ বেড়েছে কিন্তু ক্লাস নেয়া কমাননি। নিয়মিত নেন নবম ও দশম শ্রেণির গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান এবং পদার্থবিজ্ঞান ক্লাস।
শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা গর্ববোধ করি স্যারের কাছ থেকে কিছুটা হলেও শিখতে পেরেছি। স্যার একদিন ক্লাসে এসে বললো আমি যেমন ক্লাস কামায় না দেয়ার জন্য পুরস্কৃত হচ্ছি, স্বীকৃতিস্বরুপ কিছু পাচ্ছি তোমরাও স্কুল কামায় করবে না। আমি নিজ থেকে তোমাদের স্বীকৃতি দেবো।
এমন একজন ব্যক্তিকে সহকর্মী হিসেবে পেয়ে গর্বিত অন্য শিক্ষকরাও। তারা বলছেন, সত্যজিত বিশ্বাস শিক্ষক সমাজের জন্য অনুকরণীয়।
আগামী ৯ অক্টোবর চাকরি জীবনের ইতি টানবেন শিক্ষার্থীদের প্রিয় সত্যজিত স্যার। এতদিন যে স্কুলের সাথে আত্মার সম্পর্ক, অবসরের পরদিন থেকে সেই স্কুলের করিডোরে আর হাঁটবেন না তিনি। এ কথা মনে আসতেই চোখ ছল ছল করে ওঠে তার। জানালেন, অবসরে গিয়েও বসে থাকবেন না তিনি।
শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাস দুই সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী গৃহিনী। ছেলে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতকোত্তর করে চাকরিজীবনে ঢোকার অপেক্ষায়। মেয়ে লেখাপড়া করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
Discussion about this post