শিক্ষার আলো ডেস্ক
বিশ্বের শীর্ষ গবেষণা বিজ্ঞানীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি সম্প্রতি এলসেভিয়ার প্রকাশনার উপর ভিত্তি করে বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ গবেষণা বিজ্ঞানীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। উক্ত শীর্ষস্থানীয় গবেষণা বিজ্ঞানীদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল ভূঞা এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল হাসান সরকার।
যেখানে ১৯৬৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৬০ লাখ বিজ্ঞানীর প্রকাশনা, এইচ-ইনডেক্স, সাইটেশন ও অন্যান্য সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়। সম্প্রতি ২০২১ সালের অগাস্ট মাসে হালনাগাদ করে প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবেদনটি বিজ্ঞানীদের ২২টি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র এবং ১৭৬টি উপ-ক্ষেত্রে শ্রেণীবদ্ধ করে মোট ১,৮৬,১৭৮জন গবেষককে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই র্যাংঙ্কিংয়ের স্কোপাস ইন্ডেক্সড আর্টিকেলকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে।
ড. মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল ভূঞা ২০০৩ সালে চুয়েট থেকে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক (বি.এসসি.) এবং তিনি ২০০৮ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতকোত্তর (এম.এসসি.) ডিগ্রি অর্জন করেন।
এছাড়া ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি স্কুল থেকে ডিজেল ইঞ্জিনের বিকল্প জ্বালানি হিসাবে ২য় প্রজন্মের বায়োডিজেল বিশেষত নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণামূলক আগ্রহের মধ্যে তাপ স্থানান্তর বৃদ্ধি, তাপীয়-তরল, নবায়নযোগ্য শক্তি, বিকল্প জ্বালানি এবং শক্তি রূপান্তর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অন্যদিকে ড. সরকার চুয়েট থেকে ইবিএসসি এবং এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী অর্জন করেছেন। এছাড়া ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি, মেলবোর্ন থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। অধ্যাপক মোস্তফা কামাল ভূঞা এ পর্যন্ত শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক জার্নাল ও কনফারেন্সে ৭৬টিরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। ওয়েব অফ সায়েন্স তাঁর গবেষণা পেপার্সগুলোকে খুব বেশি উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত ক্যাটাগরিতে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। বিভিন্ন স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক জার্নাল এবং সম্মেলনে যৌথ পর্যালোচক হিসাবে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
অধ্যাপক মোস্তফা কামাল ভূঞার গবেষণার প্রভাব গুগল স্কলারে প্রদর্শিত হয়েছে; যেখানে এইচ-সূচকের সংখ্যা ২৫ এবং আই ১০-সূচকের সংখ্যা ৩৪ রয়েছে। গত ৩ বছর ধরে (২০১৮, ২০১৯, এবং ২০২০-এখন অবধি) গুগল স্কলারের ভিত্তিতে তিনি চুয়েটে সর্বাধিক উদ্ধৃতিধারক হিসাবে স্থান পেয়েছেন।
অধিকন্তু, গবেষণায় অবদান রাখায় তিনি চুয়েট থেকে ২০১৯ সালের জন্য সেরা গবেষণা প্রকাশনা পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। বর্তমানে চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপনার পাশাপাশি পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অন্যদিকে ড. মো. ইকবাল সরকারের গবেষণার বিষয়বস্তু মূলত ডেটা সাইন্স, মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং সাইবার সিকিউরিটি অ্যানালিটিক্স। ড. সরকারের গবেষণা কর্মগুলো এলসেভিয়ার, স্প্রিঞ্জার, এসিএম, আই.ই.ই.ই-এর বিভিন্ন স্বনামধন্য জার্নাল এবং কনফারেন্সে প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাঁর লেখা একটি বই “কন্টেক্সট-আওয়ার মেশিন লার্নিং অ্যান্ড মোবাইল ডেটা অ্যানালিটিকস”, স্প্রিঞ্জার ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। বইটি বর্তমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে ইন্ডাস্ট্রি এবং অ্যাক্যাডেমিয়া উভয়ক্ষেত্রেই গবেষণা এবং স্মার্ট অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন।
এই সফলতা অর্জন চুয়েটের শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল ভূঞা এবং ড. মো. ইকবাল হাসান সরকার নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত। নিশ্চয়ই বিশ্বের শীর্ষ ২% গবেষকদের তালিকায় আসার অর্জন বিশ্বের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনেক সম্মানের।
Discussion about this post