অনলাইন ডেস্ক
অসামাজিক, আত্মহত্যাপ্রবণ এবং রগচটা হিসেবে দুর্নাম ছিল তার। আবার অনেকের চোখে তিনি ছিলেন এক পাগল-প্রতিভা। অস্ট্রিয়ান দার্শনিক লুডভিগ ভিটগেনস্টাইন (১৮৮৯—১৯৫১)। অনেকে বিশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক মনে করেন তাকে।
উড়োজাহাজ বিদ্যায় পড়াশোনা করতে গিয়ে তিনি গণিতের দর্শনে আকৃষ্ট হন এবং র্বাট্রান্ড রাসেলের ছাত্র হিসেবে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে পড়াশোনা করেন। জীবদ্দশায় একটিই বই লিখেছিলেন ট্র্যাকট্যাটাস লজিকো-ফিলোসফিকাস। এ বইয়ের বিষয়বস্তু, ভাষার সঙ্গে জগতের সম্পর্ক।
জন্মেছিলেন ধনী গৃহে। কিন্তু ঐশ্বর্যের প্রতি কখনও কোন আকর্ষণ বোধ করেন নি। জাঁকজমকপূর্ণ জীবন ও সম্পদশালীতার প্রতি এক সহজাত দার্শনিকসুলভ নিস্পৃহতা ছিল। পেশাগত প্রয়োজনে নয়, নিজের জীবনের অবিচ্ছেদ্য সংবেদী অংশ হিসেবে দর্শন চর্চা করতেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈনিক হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে বসে এ বইয়ের নোট নিয়েছিলেন। পরে যুদ্ধের ফাঁকে ছুটিতে বই লিখে শেষ করেন। দ্বিতীয় বই ফিলোসফিক্যাল ইনভেস্টিগেশনস বের হয় তার মৃত্যুর দুই বছর পর ১৯৫৩ সালে। ভিটগেনস্টাইন যুক্তিবিদ্যা, গণিত ও ভাষার দর্শন নিয়ে কাজ করেছেন।
যেখানে যুক্তি নেই বা যুক্তিসঙ্গত ভাষা নেই, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেন না, নিশ্চুপ থাকেন। তিনি মনে করেন যা অযৌক্তিক বা যুক্তির নীতি মানে না, সে সম্পর্কে কিছু বলা অর্থহীন। আর সেজন্যই তার চিন্তাভাবনাগুলো ভাষা ও দর্শন উভয় বিদ্যাকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছে।
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই দার্শনিকের পরিণত বয়সে লেখা ও মৃত্যুর পরে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘ফিলোসফিকাল ইনভেস্টিগেশনস’ দর্শনের একটি আকর গ্রন্থ হিসেবে সারা বিশ্বে সমাদৃত। এ যুগের উত্তর-আধুনিক দার্শনিক মহলের কেউ কেউ মনে করেন এ বই নতুন ভাবে ভাবতে শেখায়, নতুন পথের দিশা দেখায়। শুধু তাই নয়, তারা দাবী করেন -দর্শনের জগতে উত্তরাধুনিকতার সূচক গ্রন্থ হল এই ‘ফিলোসফিকাল ইনভেস্টিগেশনস’।
ভিটগেনস্টাইনের ভাষায়, ‘চিন্তার সঙ্গে ভাষার এবং ভাষার সঙ্গে জগতের সম্পর্ক রয়েছে। তাই চিন্তা প্রকাশের জন্য যৌক্তিক ভাষার নিয়ম ও ব্যবহার আবশ্যক। এই নিয়মকে তিনি ‘ভাষার যুক্তি বিজ্ঞান’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।’
আরও পড়ুন-অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ ইব্রাহিম: বাংলাদেশে ডায়াবেটিক চিকিৎসার সূচনা যার হাত ধরে
ভাষা প্রসঙ্গে ভিটগেনস্টাইন যা বলেছেন, তা পরবর্তী শতক জুড়ে নতুন নতুন প্রশ্ন ও চিন্তার ঝড় তুলেছে। বিশ্বের সকল দার্শনিকের মননে দিয়েছে এক আধুনিক অভিঘাত।
এই দার্শনিকের মতে, আমাদের ভাষা এক ধরনের বিশাল স্থানকে আহ্বান করে, যেখানে প্রতিটি সম্ভাব্য বক্তব্যের নিজস্ব জায়গা রয়েছে।
তিনি স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছেন যে, বিশ্বের বোধ বিশ্বের বাইরে থাকা আবশ্যক. পৃথিবীতে সবকিছু যেমন আছে তেমনই আছে, এবং সবকিছু যেমন ঘটে তেমনই ঘটে: এতে কোনো মূল্যই নেই।
সূত্র: দ্য কনভারসেশন.কম, গ্রন্থগত, উইকিপিডিয়া
Discussion about this post