শিক্ষার আলো ডেস্ক
নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার বাসিন্দা মোজ্জাফর হোসেন। দিনমজুর হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতেন কোনো মতে। তবে ৮ বছর আগে শরীরের ওপর গাছ পরে ভেঙে যায় তার মেরুদণ্ড। অচল হয়ে পরে তার দুটো পা। চলা ফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। এর ফলে চরম আর্থিক অনটনে স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হতো মোজ্জাফরকে। দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে হাত পাততে হতো মানুষের কাছে।
তিন বছর আগে রাজশাহীতে চিকিৎসা নিতে এসে পরিচয় হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গোলাম কিররিয়া ফেরদৌসের সঙ্গে। পরিচয়ের পর কেটে যায় দুই বছর। এরপর যখন তিনি জানতে পারেন, মোজ্জাফর আর চলাফেরা করতে পারেন না। তখন তার অসহায়ত্ব দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাকে দেওয়া হয় একটি হুইল চেয়ারও।
তবে হুইল চেয়ার টেনে নিয়ে যেতে কষ্ট হতো মোজ্জাফরের। তার এই কষ্টের কথা শুনে অসহায় মোজ্জাফরকে একটি ট্রাই সাইকেলের ব্যবস্থা করে দিতে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করেন রাবি অধ্যাপক ড. গোলাম কিররিয়া ফেরদৌস। পরে রাজশাহী বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-সচিব সৈয়দ মোস্তাক হাসানের সহযোগিতায় ও রাজশাহী প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে মোজ্জাফরকে একটি ট্রাই সাইকেলের ব্যবস্থা করে দেন তিনি।
আর এই ট্রাইসাইকেল পেয়ে আবেগ আপ্লুত মোজ্জাফর হোসেন বলেন, ‘৮ বছর আগে গাছ কাটতে গিয়ে গাছটি আমার শরীরের ওপর পরে আমার মেরুদন্ডটি ভেঙ্গে যায়। অনেক চিকিৎসা নিলেও আমার দুটি পা আর সচল হয়নি। আমার একটা ছেলে ও একটা মেয়ে। মেয়েটাকে বিয়ে দিলেও তার বিয়ের টাকা আমি শোধ করতে পারিনি। আর ছেলে আমাকে দেখে না। রাজশাহীতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে স্যারের সঙ্গে আমার পরিচয়। স্যার নানাভাবে আমাকে সাহায্য করে যাচ্ছেন। তিনি আমাকে আর্থিক সাহায্য করার পাশাপাশি একটা হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেন। পরে আবার স্যারের সহযোগিতায় সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আমাকে একটা ট্রাই সাইকেল দিয়েছেন। এটা দিয়ে আমি এখন ভালোভাবেই চলাফেরা করতে পারবো।’
মোজ্জাফর আরো বলেন, ‘স্যারের সহযোগিতায় খুব শিগগিরই আমি গ্রামের বাজারে একটা দোকান দিবো। আশা করি, সংসার চালাতে আমার আর কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।’
রাবি অধ্যাপক ড. গোলাম কিররিয়া ফেরদৌস বলেন, তার অসহায়ত্ব দেখে আমি তাকে ২ বার সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। প্রথমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাকে একটি হুইল চেয়ার দেই। পরে আত্রাই উপজেলার ইউএনওর মাধ্যমে তাকে একটি ট্রাই সাইকেল দেওয়া হয়। এটি তেমন কার্যকর হয়নি। এখন কয়েকমাস ধরে সে আবার সহযোগিতা চাচ্ছিলো। এইবার সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তখন সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করি রাজশাহীর সমাজসেবা পরিচালক মোস্তাক হাসানের কাছ থেকে। তিনি সমাজকল্যাণ বিভাগেরই ছাত্র। তাকে বলার পরই তিনি সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করেন।
এই বিষয়ে রাজশাহী সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসান বলেন, ‘স্যার আমার কাছে যখন এই বিষয়টি নিয়ে আসছেন, আমি ওনাকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করেছি। সমাজ সেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে আমি একটি ট্রাই সাইকেলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আশা করছি তিনি এখন ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারবেন।’
Discussion about this post