১৯৪৭ পরবর্তীকালে প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারে মন্দগতি এর মূল সমস্যা। ওই বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশিষ্ট একটি গ্রামের বিপরীতে ছিল বিদ্যালয়হীন ৪টি গ্রাম। স্কুল গৃহগুলি ছিল হীনাবস্থায়। বেশির ভাগ শিক্ষক ছিলেন প্রশিক্ষণহীন, তাঁরা বেতনও পেতেন অতি সামান্য। সরকারের উপর ন্যস্ত হলো একটি দুর্বহ কাজের ভার- এই হীনাবস্থা থেকে গোটা সেক্টরকে একটি মানসম্মত স্তরে তুলে আনা। কিন্তু সম্পদের স্বল্পতা, শিক্ষার বেলায় বিশেষত প্রাথমিক শিক্ষার বেলায়, চিরকালই ছিল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭২, বাংলাদেশের সত্যিকার স্বাধীনতা অর্জন কাল পর্যন্ত, প্রাথমিক শিক্ষা ও দেশের সাক্ষরতার স্তর, দুটিই ছিল এক দীর্ঘস্থায়ী জড়ত্বের শিকার।
১৯৭২-৭৩-এ ৩৬,০০০-এর অধিক সংখ্যক স্কুলের সরকারিকরণ এক নবপর্যায়ের সূচনা বলে গণ্য হয়। তবে এর ফলে বুনিয়াদী শিক্ষার সর্বজনীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে কোন অলৌকিক পরিবর্তন সাধিত হয় নি। কিন্তু ১৯৭৪-এর শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে লক্ষ্য অনেক বেশি স্পষ্ট ভাষায় সংজ্ঞায়িত হয়েছিল। সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে নতুন কৌশল প্রস্তাবিত হয়েছিল। ১৯৮১-র প্রাথমিক শিক্ষা আইনে (The Primary Education Act, 1981) মহকুমা পর্যায়ে ‘স্থানীয় শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ (Local Educational Authority) গঠনের ব্যবস্থা হয়। দুর্ভাগ্যবশত এ উদ্যোগটি ফলপ্রসূ হয় নি এবং হয় নি মূলত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে। এরপর এলো ১৯৯০-এর ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন’। এতে উক্ত আইনের উদ্দেশ্য পূরণে প্রয়োজনীয় আইনী ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা লাভ করে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় একটি সমন্বিত কর্মোদ্যোগের সূচনা হয়েছে, যার লক্ষ্য নিরক্ষতার উচ্ছেদ। এই উদ্যোগে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নে একই সঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। এসব প্রকল্পের আওতায় রয়েছে একদিকে আনুষ্ঠানিক অন্যদিকে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা এবং এ ক্ষেত্রে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাদানে বেসরকারি সংস্থাগুলি বড় ভূমিকা পালন করছে। সরকারিভাবে দাবি করা হচ্ছে, বর্তমানে (২০০১-২০০২) সাক্ষরতার হার ৫০% থেকে ৬০%-এর মাঝামাঝি কোন এক অবস্থানে। এ ছাড়া, জেলা পর্যায়ে সাক্ষরতা অভিযানের ফলে কয়েকটি জেলা পূর্ণ সাক্ষরতা অর্জন করেছে বলে অন্তত সরকারি দাবি।
মাধ্যমিক শিক্ষা ১৯৪৭ সালে মাধ্যমিক শিক্ষা পরিস্থিতি ছিল প্রাথমিক শিক্ষার অনুরূপ। অধিকাংশ স্কুল ছিল বেসরকারি সেক্টরে। প্রতি জেলা সদরে ছিল একটি করে জেলা স্কুল। উপনিবেশিক শাসকদের ধারণা ছিল জেলা স্কুলগুলি কাজ করবে বেসরকারি স্কুলসমূহের আদর্শ বা মডেল হিসেবে। যেমন প্রাথমিক শিক্ষার বেলায়, তেমনি মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রেও জড়িত না হওয়ার নীতি ছিল কার্যকর। প্রসঙ্গত, একই নীতির সম্প্রসারণ দেখা গিয়েছে কলেজ স্তরের শিক্ষার বেলায়।
আট বছর ব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষার পক্ষে ওকালতির শুরু সার্জেন্ট কমিটির রিপোর্ট (১৯৪৪) থেকেই বা তারও পূর্ব থেকে। পরবর্তী সময়ে সকল পর্যালোচনায় ধারণাটি জোরালো সমর্থন লাভ করেছে, বিশেষত কুদরাত-এ-খুদা কমিশন নামে সমধিক পরিচিত ১৯৭৪-এর শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে। ধারণাটি বর্তমানে নীতিগতভাবে সমর্থিত, যদিও এর বাস্তবায়ন শুরু হয় নি। যদি এর বাস্তবায়ন ঘটে, তবে মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গেই অঙ্গাঙ্গী জড়িত কাঠামোগত সমস্যাটি জটিলতর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৯৪৭-এর পূর্বে ও পরবর্তী সময়ে দীর্ঘকাল মাধ্যমিক শিক্ষা প্রসারের গতি প্রাথমিক শিক্ষার তুলনায় দ্রুততর ছিল। প্রাথমিক স্তরে পড়ুয়াদের ঝরে পড়ার হার অত্যধিক হওয়া উল্লিখিত তারতম্যের অন্যতম কারণ।
ব্যবস্থাপনার দিকে স্বাধীনতা-উত্তর কালে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো মাধ্যমিক শিক্ষাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুক্ত করা। এ বিষয়ে প্রথম প্রস্তাব হয়েছিল স্যাডলার কমিশন-এর সুপারিশে (১৯১৭-১৯)। তবে অবিভক্ত বাংলায় এ-প্রস্তাব কার্যকর হয় নি। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানাভুক্ত ঢাকা মিউনিসিপ্যাল এলাকা।
ইস্ট বেঙ্গল সেকেন্ডারি এডুকেশন বোর্ড গঠিত হলে (East Bengal Secondary Education Board) বোর্ড মাধ্যমিক স্কুলগুলির অধিভুক্তি ও পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়। পরবর্তী পদক্ষেপ হলো ১৯৫৪ সালে স্কুল টেক্সট বুক বোর্ড গঠন। আরও পরে দেশের ছয়টি প্রশাসনিক বিভাগের জন্য বোর্ডটিকে ছয়টি ভাগে বিভাজন করে প্রতিটি বিভাগের জন্য একজন বিভাগ প্রধান করা হয়। সার্বিক ব্যবস্থাপনার, নামে মাত্র হলেও, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ আজও অব্যাহত আছে। সরকারের অর্থায়ন পদ্ধতির ও নীতির ফলাফল হয়েছে নেতিবাচক; স্থানীয় সমাজ নিজেদের গড়া প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। নীতিগতভাবে বিকেন্দ্রীকরণ গৃহীত হয়েছে, তবে প্রাথমিক শিক্ষার মতো অতোটা দৃঢ়তার সঙ্গে নয়। উভয় ক্ষেত্রেই এ নীতির অগ্রগতির তালমাত্রা বাঁধা রয়েছে প্রস্তাবিত ত্রি-স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের তালমাত্রার সঙ্গে। স্কুলের অনুমোদন, পাঠ্য পুস্তকের যোগান, পরিদর্শন এবং সর্বোপরি দুটি পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা, ১০ম শ্রেণির পর মাধ্যমিক, ১২শ শ্রেণির পর উচ্চমাধ্যমিক, এই দায়িত্ব ভাগ করে নেয় ৬টি বোর্ড।
প্রচলিত ব্যবস্থায়, এই পর্যায়ে দুটি পাবলিক পরীক্ষা, বিশেষত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও, ভবিষ্যৎ শিক্ষার গতি নির্ধারণ করছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার গুরুত্বই বেশি। কারণ এটা হলো উচ্চশিক্ষার প্রবেশদ্বার।
মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থাপনা ও মান, দুটি প্রসঙ্গেই তীব্র সমালোচনা হয়েছে। বিস্তর সংখ্যায় আছে বেসরকারি স্কুল, যেখানে আছে উপযুক্ত শিক্ষক মন্ডলীর অভাব। এগুলির সরকারিকরণের কোন পরিকল্পনা নেই। বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রে এই নীতি ফলপ্রসূ না হওয়াও স্কুলের ক্ষেত্রে সরকারের এই অনীহা বোধগম্য। বেসরকারি স্কুল (ও কলেজ) শিক্ষকদের অব্যাহত দাবি, সরকারি স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের সমান বেতন স্কেল, এ দাবি আংশিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের নীতি হলো সাধারণভাবে শিক্ষামানের মানোন্নয়নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বিশেষত বিজ্ঞান শিক্ষার প্রবর্তন ও উন্নয়ন লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ। স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার মূল দুর্বলতাগুলি দিনে দিনে স্পষ্টতর হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বিফলতার উচ্চহার থেকে ধরা পড়েছে শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণ, উভয়ক্ষেত্রেই যোগ্যতার অভাব। স্বভাবতই, বিদ্যমান পরিস্থিতি জন্ম দিয়েছে সকল পর্যায়ে ও সকল মহলে, সরকারি মহলেও, এক গুরুতর দুশ্চিন্তার।
১৯৫৯-এর কমিশনের প্রস্তাবানুযায়ী, ৮ম শ্রেণির পর পৃথক ধারার শিক্ষাক্রম প্রবর্তিত হয়েছিল। অভিন্ন ধারার মাধ্যমিক শিক্ষার প্রথাগত ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েছিল। দৃশ্যত, মাধ্যমিক শিক্ষার স্বয়ম্ভরতা উপেক্ষিত হলো, বা সম্ভবত যে আট বছরব্যাপী প্রাথমিক স্তর প্রস্তাবেই ছিল, বাস্তবে পরিণত হয় নি, সেটাই অধিকাংশ পড়ুয়ার জন্য প্রান্তিক শিক্ষা ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু কোন স্পষ্ট ও বিস্তারিত শিক্ষানীতি ঘোষিত হয় নি, বিভিন্ন ধারার প্রবর্তনে এক খন্ডিত পাঠক্রম থেকে উদ্ভূত হলো এক শ্রেণির শিক্ষিতের, যারা প্রকৃত শিক্ষার অনেক মৌলিক বিষয়ে তেমন কিছুই শেখেনি।
বাংলাদেশ পর্যায়ে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম কমিটি’ (National Carriculaum Committee, 1976-78) এই ত্রুটির সংশোধনের লক্ষ্যে একটি অভিন্ন ধারার মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করেছিল। এর বাস্তবায়নে একটা অসুবিধা দেখা দিল গ্রাম ভিত্তিক স্কুলে বিজ্ঞান শিক্ষা প্রবর্তন করা। বিজ্ঞান, গণিত ও ইংরেজির পঠন-পাঠন গ্রামের অধিকাংশ স্কুলে যোগ্যতার সঙ্গে সম্পন্ন হয় না। এর ফলে পরবর্তী স্তর, উচ্চশিক্ষার ওপর পড়ে এর ক্ষতিকর প্রভাব। অতীতে অনেক শিক্ষা-সংস্কারমূলক চিন্তা বিফল হয়েছে দুটি কারণে: কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারের সংকল্পে দৃঢ়তার অভাব ও সম্পদের অপ্রতুলতা। কিভাবে আট বছরব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের পর, অভ্যন্তরীণ ও আন্ত-প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় সাধিত হবে, তা এ মুহূর্তে অনুমান সাপেক্ষ। এক্ষণে, কোথাও মাধ্যমিকের শেষ দুবছর স্কুলের কাজ, কোথাও তা ৪ বৎসরের কলেজে নিম্নস্তরের কাজ, অথবা এ দুটি শ্রেণি নিয়েই চালু রয়েছে ইন্টারমিডিয়েট কলেজ। এই ইন্টারমিডিয়েটকে স্যাডলার কমিশন দেখেছিল একটা মধ্যবর্তী স্যান্ডউইচ কোর্স হিসেবে, যা ম্যাট্রিকুলেশন/এনট্রান্স পর্ব শেষ করার পর ভালো ছাত্রদের জন্য, ডিগ্রি অভিসারীদের জন্য প্রস্ত্ততির কাল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, অধিকাংশ ছাত্রের জন্য ম্যাট্রিকুলেশন প্রান্তিক পরীক্ষা নয়। পরবর্তী সময়ের চিন্তায় এই মধ্যবর্তী স্তরটি ১১শ-১২শ শ্রেণি মাধ্যমিকেরই অংশ বিবেচিত হয়েছে। নতুন নামে এর পরিচয় উচ্চমাধ্যমিক। এখন যেটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তা হলো শিক্ষা-কাঠামোর পুনর্বিন্যাস হলে বর্তমান ডিগ্রি কলেজের নিচের দুটি ক্লাস উঠে যাবে, স্কুলের হবে ঊর্ধ্বমুখী উন্নয়ন, ১১শ-১২শ শ্রেণির সমন্বয়ে। স্কুলের প্রাথমিক অংশটি উঠে যাবে। আর এই যোগ-বিয়োগ কর্মের সঙ্গেই জড়িত থাকবে আরও একটি মাত্রা শিক্ষকমন্ডলীর পুনর্গঠন।
বর্তমানে মাধ্যমিক শিক্ষার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমতা, যথাযথ মান ও সচলতা বজায় রাখার জন্য সাধারণ মাধ্যমিক শিক্ষা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং মাদ্রাসা শিক্ষাকে (দাখিল, আলিম পর্যায়) একটি একক পদ্ধতির আওতায় আনয়ন। পাকিস্তান আমলের চারটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডকে পুনর্বিন্যস্ত করে বর্তমানে সারা দেশে সাতটি শিক্ষা বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ইসলামী শিক্ষা এবং কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের আওতায় বৃত্তিমূলক শিক্ষা নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে। এছাড়া ২০১০ সালে অনুমোদিত নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত এক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ পরিকল্পনার আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে পর্যায়ক্রমে অষ্টমশ্রেণি পর্যন্ত এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠদানের ব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের শিক্ষার স্তর তিনটি। প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও উচ্চ শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ পাঁচ বছর, সেকেন্ডারি শিক্ষার মেয়াদ সাত বছর। এ পর্যায়ে রয়েছে তিন বছরের জুনিয়র সেকেন্ডারি, দুই বছরের সেকেন্ডারি এবং দুই বছরের উচ্চ মাধ্যমিক বা হাইয়ার সেকেন্ডারি শিক্ষাকোর্স। অর্থাৎ ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত জুনিয়র সেকেন্ডারি পর্যায়ের ছাত্ররা সমাপনি পরীক্ষার মাধ্যমে সেকেন্ডারি পর্যায়ে উত্তীর্ণ হবে।
উচ্চ শিক্ষা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের পূর্ব খন্ডে (পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান) যে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যাত্রাশুরু, উনিশ শতকে তার গোড়াপত্তন ঘটে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত সকল কলেজে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবর্তিত পাঠ্যক্রম অনুসৃত হয়েছে, ছাত্ররা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবর্তিত পরীক্ষায় বসেছে এবং তার দেওয়া ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। পূর্ব পাকিস্তানের ভৌগোলিক সীমানায় যে একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পড়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তার কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল ঢাকা পৌরসভার সীমানার মধ্যে। এর বাইরে সারা দেশের সম্পূর্ণ উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাই যুক্ত ছিল যে বৃহত্তর ব্যবস্থার সঙ্গে, তার শীর্ষ অবস্থানে ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
দেশ বিভাগের কারণে এই অধিভুক্তির দায়িত্ব পালনকারীর ব্যাপক ভূমিকা বর্তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর। ঢাকার সমস্যা ছিল অনেক। জন্ম থেকেই ঢাকা একটি এককেন্দ্রিক (Unitary) ও শিক্ষাপ্রদায়ী (Teaching) বিশ্ববিদ্যালয় পরিচয় নিয়ে চলেছে। এর দূরবর্তী মডেল ছিল অক্সফোর্ড ও কেম্ব্রিজ। এর আবাসিক হলগুলি ছিল অক্সফোর্ড-কেম্ব্রিজের কলেজের অনুকৃতি। এর ৩ বছরব্যাপী অনার্স কোর্সও ওই দুটি মডেল থেকে ধার করা। এর টিউটোরিয়াল ব্যবস্থাও ছিল ওদের প্রচলিত টিউটোরিয়ালের ছকে তৈরি। সংক্ষেপে, শিক্ষাগত ও কাঠামোগত, উভয়তেই, অর্ধশতাধিক বছর পূর্বেকার লন্ডনের মডেলে গঠিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকার পার্থক্য ছিল স্পষ্ট। এখন ঢাকার সমস্যা হলো দুটি ব্যবস্থার মধ্যে সামঞ্জস্যবিধান করা। বাস্তব বিবেচনায় কলেজগুলিকে তাদের পূর্ব প্রচলিত কোর্স নিয়ে চলতে দেওয়া ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আর কোন বিকল্পপন্থা ছিল না। কলেজে বজায় রইল ২ বছর মেয়াদী পাস ও অনার্স কোর্স। বিশ্ববিদ্যালয়ে বহাল রইল ৩ বছর মেয়াদী অনার্স কোর্স।
Discussion about this post