মুসলমানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি মকতব ও মাদ্রাসা এবং হিন্দুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলি পাঠশালা নামে পরিচিত ছিল। মুসলিমদের অনেক প্রতিষ্ঠানে কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। আবার অনেকগুলিতে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য আরবি ভাষাকে উৎসাহিত করা হতো। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে আরবি শিক্ষার পাশাপাশি ব্যকরণ, সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব ও আইন শিক্ষা প্রদান করা হতো। হিন্দুদের স্থানীয় পাঠশালাগুলিতে ধর্ম শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃত ও বাংলা শিক্ষা দেওয়া হতো। তাই, স্বদেশী ভাষার এ বিদ্যালয়গুলিতে কদাচিৎ মুসলমানগণ শিক্ষা গ্রহণ করতেন। মধ্যযুগে রাষ্ট্রভাষা ছিল ফারসি। তাই জীবিকা নির্বাহের তাগিদে হিন্দু-মুসলমান উভয়েই ফারসি ভাষা শিখতেন।
গৌড়, পান্ডুয়া, সোনারগাঁও, ঢাকা, মুর্শিদাবাদ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং রংপুরে শিক্ষা কেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছিল। এসব স্থানে দেশ-বিদেশের পন্ডিত ব্যক্তিগণ শিক্ষকতা কাজে নিয়োজিত ছিলেন। মুসলমান শাসকগণ স্থানীয় প্রতিভাবানদের সম্মান প্রদর্শন করতেন এবং প্রতিবেশী দেশসমূহ থেকেও প্রথিতযশা ব্যক্তিদেরকে তাদের দরবারে আনার জন্য চেষ্টার কোন ত্রুটি করতেন না। পাঠশালার অনুকরণে মকতবসমূহ গড়ে উঠত যেখানে মুসলিম ছাত্রদের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হতো।
মধ্যযুগে হিন্দুদের শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র ছিল নবদ্বীপ। এখানে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল হতে শিক্ষার্থীদের আগমন ঘটত। নবদ্বীপ ব্যতীত সপ্তগ্রাম, সিলেট এবং চট্টগ্রামেও সংস্কৃত ও ফারসি ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হতো। ছাত্র ও ধার্মিক ব্যক্তিগণ তাদের শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের চাহিদা চরিতার্থ করার জন্য এসব স্থানে সমবেত হতেন।
এভাবে মধ্যযুগীয় বাংলায় যে সনাতনি শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশ ঘটেছিল, তা মুসলিম শাসনের পর থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে। ক্ষমতা দখলের পর উপনিবেশিক শাসকগণ বেশ কিছু সময়ের জন্য প্রাচ্যদেশীয় ভাষা শিক্ষা চালু রেখেছিলেন। কারণ, প্রশাসনিক কার্য নির্বাহের জন্য ফারসি, সংস্কৃত ও আরবি ভাষায় পারদর্শী লোকের তাদের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সনাতনি শিক্ষা ক্রমশই বিলুপ্ত হচ্ছিল এবং একটি ধীর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঊনিশ শতকের মাঝামাঝিতে উক্ত সনাতনি শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তে উপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
উপনিবেশিক যুগ ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকার ভারতের অধিবাসীদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারকে তাদের দায়িত্ব বা আইনগত বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে মনে করত না। ১৮১৩ সালে কোম্পানির সনদ নবায়নকালে ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বার্ষিক এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হলে এ ধারার মধ্যে একটা পরিবর্তন সূচিত হয়। এর ফলে শিক্ষা সংক্রান্ত অনুদান বিতরণের জন্য একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৮২৩ সালে কলকাতায় একটি ‘জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইন্সট্রাকশন’ গঠিত হয়। এ কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যগণ পাশ্চাত্য শিক্ষার পরিবর্তে প্রাচ্যশিক্ষার পক্ষে মতামত প্রদান করে এবং সংস্কৃত ও আরবি শিক্ষার জন্য এর তহবিল ব্যয় করে। ইংরেজি গ্রন্থসমূহ প্রাচ্য ভাষায় অনুবাদ করার জন্য এ তহবিলের একটি অংশ ব্যয় হয় এবং ইংরেজি ভাষায় গ্রন্থ রচনা করার জন্য উৎসাহ প্রদান করার সিদ্ধান্ত হয়।
এসময় খ্রিস্টান মিশনারিদের কাছ থেকে শিক্ষা এক নতুন অনুপ্রেরণা লাভ করে। প্রাথমিক মিশনারিদের বাস্তব অভিজ্ঞতা তাদেরকে শীঘ্রই দৃঢ় প্রত্যয়ী করে তোলে যে, ধর্মান্তরিতকরণের গুরুত্বপূর্ণ পন্থা হিসেবে অবশ্যই স্কুল চালু করতে হবে। ড্যানিশ মিশনারিগণ (১৭০৬-৯২) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সদয় তত্ত্বাবধান ও সহানুভূতিপূর্ণ সহায়তা লাভ করেছিলেন। বাংলায় শ্রীরামপুরের মিশনারিদের প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছিল এবং তারা একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতেন, যদি শ্রীরামপুর ও চুঁচুড়ার ওলন্দাজগণ তাদেরকে রক্ষা না করতেন। এদের কার্যকলাপ প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে নিয়মিত ও নির্ধারিত সময়ে পাঠদান, একটি বিস্তারিত পাঠক্রম এবং সুস্পষ্ট শ্রেণি প্রথা প্রবর্তনের মাধ্যমে নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করে। দেশীয় বিভিন্ন ভাষায় বই-পুস্তক ছাপিয়ে মিশনারিগণ ভারতীয় ভাষাসমূহের উন্নয়নে প্রেরণা যোগায়। দেশীয় ভাষাসমূহ চর্চার সাথে সাথে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য বিষয়সমূহের শিক্ষাদান চলতে থাকে। এভাবেই ভারতে ইংরেজি শিক্ষার পথ সুগম হয়।
মিশনারিগণ ছাড়াও রাজা রামমোহন রায়ের মতো কিছু জ্ঞানদীপ্ত ভারতীয় ছিলেন যাঁরা উপলব্ধি করেছিলেন যে, ভারতীয়দেরকে ইংরেজি শিক্ষা দিতেই হবে। গভর্নর জেনারেলকে প্রদত্ত তাঁর ঐতিহাসিক স্মারকলিপিতে তিনি জোরালো সুপারিশ করেন যে, কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বাতিল করতে হবে এবং ব্রিটিশ সরকারের উচিত গণিত, প্রাকৃতিক দর্শন, রসায়ন, অঙ্গব্যবচ্ছেদ বিদ্যা এবং অন্যান্য উপকারী বিজ্ঞান বিষয়সমূহ নিয়ে অধিকতর উদার ও জ্ঞানদীপ্ত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
জেনারেল কমিটির মধ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যপন্থীদের উত্তপ্ত বিতর্কই বিষয়টির প্রকৃতিতে একটি পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়। অধিকতর সংস্কার মনোভাবাপন্ন তরুণ সদস্যগণ প্রাচ্য-শিক্ষার পৃষ্ঠপোষকতার নীতি সম্পর্কে আপত্তি জানান এবং ইংরেজির মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের পক্ষে সমর্থন জ্ঞাপন করেন। ১৮৩৫ সালের শিক্ষা সংক্রান্ত মেকলের বিবরণী দ্বারা ইংরেজি শিক্ষার পক্ষে এ বিতর্ক সম্পর্কে চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তাঁর সুপারিশমালা বেন্টিঙ্কের অনুমোদন লাভ করে।
ভারতে ইংরেজি শিক্ষা প্রসারের পেছনে অন্যান্য আরও কয়েকটি কারণ বেশ সহায়ক ছিল। উদাহরণস্বরূপ The Freedom of Press Act, ১৮৩৫ ইংরেজি ভাষায় বইয়ের মুদ্রণ, প্রকাশনা ও প্রাপ্যতাকে উৎসাহিত করে এবং এভাবে পরোক্ষভাবে শিক্ষা প্রসারের পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। কয়েক বছর পরে সরকারি দলিল-পত্রের ভাষা হিসেবে ফারসির বিলুপ্তি এবং এর পরিবর্তে ইংরেজি ও ভারতীয় ভাষার প্রবর্তনও উক্ত প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে। চূড়ান্তভাবে, সকল সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে ইংরেজি জ্ঞানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে ১৮৪৪ সালের ১০ অক্টোবর লর্ড হার্ডিঞ্জ-এর সিদ্ধান্ত ঘোষণা ভারতে ইংরেজি শিক্ষার চাহিদাকে জোরদার করে তোলে।
১৮৫৪ সালের চার্লস উড-এর ‘education despatch’ প্রত্যেক প্রদেশে শিক্ষা প্রশাসন পরিচালনার জন্য আলাদা ডিপার্টমেন্ট সৃষ্টি, ১৮৫৭ সালে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ও ‘Grants-in-Aid’ প্রথা প্রবর্তনের প্রস্তাব দেয় এবং এ প্রতিবেদন সরকারের ভবিষ্যৎ শিক্ষা নীতির মূল উপাদান উপস্থাপন করে। নব প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের শিক্ষা দানের ভূমিকা পালন করা হতে দূরে ছিল। এ সময়ে তাদের কার্যক্রম পরীক্ষা পরিচালনা, অধিভুক্তির জন্য অনুমোদন এবং ডিগ্রি ও সনদপত্র প্রদান করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের প্রতিষ্ঠা কলেজ শিক্ষার দ্রুত সম্প্রসারণে তেমন সুফল বয়ে না আনলেও নতুন শিক্ষায় শিক্ষিতগণ বিশেষ পান্ডিত্য প্রদর্শন করেন।
১৮৮২ সালের ভারতীয় শিক্ষা কমিশন ভারতের শিক্ষা সম্পর্কে প্রতিবেদন পেশকালে বিদ্রুপাত্মকভাবে অভিমত প্রকাশ করে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি উচ্চাশার গ্রহণযোগ্য উদ্দেশ্যে পরিণত এবং সরকারি চাকুরিতে সম্মানজনক অবস্থান ও শিক্ষিত পেশার একটি পাসপোর্ট হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। প্রবেশিকা পরীক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির উপর প্রভূত নিয়ন্ত্রণক্ষমতা প্রয়োগ করত। এখন স্বল্প অভিজ্ঞ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ শিক্ষার মাধ্যম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাসমূহ সম্পর্কে বক্তব্য প্রদান করলে এর ফলাফল যথার্থভাবেই হবে দুর্ভাগ্যজনক। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি, তাদের দিক থেকে মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে যথেষ্ট আগ্রহী হলেও সে প্রতিষ্ঠানগুলি জীবনের প্রয়োজনানুযায়ী তাদের ছাত্রদেরকে তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। ফলে নতুন ব্যবস্থা মাথাভারী হয়ে ওঠে। জনসাধারণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা এবং এর সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যবস্থাগ্রহণ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত- এ মর্মে কমিশন সুপারিশ করে। কমিশন কেতাবি মর্যাদার জন্য উগ্র প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে সতর্ক এবং ভীষণভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ছাত্রদের একাংশকে অধিকতর বাস্তবধর্মী বিষয়ের দিকে মনোযোগী করার প্রস্তাব করে। কমিশন বাণিজ্য, কৃষি ও প্রায়োগিক বিদ্যা সম্বলিত বিকল্প পাঠ্যক্রম বিবেচনার জন্য পেশ করে। কিন্তু তা খুবই অল্প সংখ্যক ছাত্রদের আকর্ষণ করে। যদিও প্রায়োগিক শিক্ষা সাধারণ জনগণের জনপ্রিয়তা লাভ করে, তবু সরকার এ বিষয়ে নির্লিপ্ত থাকে।
ঊনিশ শতকের শেষ দশকসমূহে প্রাথমিক শিক্ষা অবহেলা ও অযত্নের শিকার হয় এবং মাধ্যমিক শিক্ষা যথার্থ তত্ত্বাবধানের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেসরকারি উদ্যোগের অবাধ স্বাধীনতায় অপরিকল্পিতভাবে বহু উচ্চবিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় গড়ে ওঠে। এগুলির মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার কেন্দ্র না হয়ে শিক্ষাদান প্রতিষ্ঠানে (Coaching Institutions) পরিণত হয়েছে। সরকার অবাধ নীতি (Laissez-faire) গ্রহণ করায় এসকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল অতি সামান্য।
ঊনিশ শতকের শেষার্ধে জাতীয়তাবাদের প্রবল জোয়ারের প্রেক্ষাপটে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, কতিপয় মুসলিম সংস্থা এবং অন্যান্য উপদলসমূহ ব্রিটিশদের শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। তারা এর পরিবর্তে শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ভারতীয় ভাষাসমূহ ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক আন্তরিক প্রচেষ্টার দাবি জানায়। ১৮৯৯ সালে ভাইসরয়ের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য লর্ড কার্জন যখন ভারতে আসেন, তখন তিনি অনতিবিলম্বে জনগণের অনুভূতি উপলব্ধি করেন এবং দেশে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ পরীক্ষায় দেখা যায় যে, প্রতি পাঁচটি গ্রামের চারটিতেই কোন স্কুল ছিল না। প্রতি চারজন বালকের মধ্যে তিনজনই কোনরূপ শিক্ষা ছাড়া বেড়ে ওঠে এবং প্রতি চল্লিশজন বালিকার মধ্যে কেবল একজন কোন প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়। তিনি উপলব্ধি করেন যে, শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটেছে উল্লম্বভাবে, সমান্তরাল ভাবে নয়। সুতরাং কার্জন দুর্বল দিকগুলি সুদৃঢ় করতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং জনকল্যাণমূলক বিষয়গুলির প্রতি প্রদেশসমূহের উদাসীন দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ ও সংরক্ষণের পক্ষে মত প্রকাশ করেন, এগুলি বেসরকারি উদ্যোগের আদর্শ হিসেবে কাজ করবে। তিনি পরিদর্শন ও নিয়ন্ত্রণের সতর্ক নীতির মাধ্যমে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলির উপর কঠোরতর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এরূপ নীতি অবশ্যম্ভাবীরূপে শিক্ষিত ভারতীয়দের মনকে উত্তেজিত করে তোলে, যারা মনে করেন যে সরকার সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে তার নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে তুমল বিতর্ক হয়। দেশে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে কার্জন ১৯০২ সালে ‘Indian Universities Commission’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ কমিশন সুপারিশ করে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের আকার ছোট করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কেবল পরীক্ষাগ্রহণকারী সংস্থা হিসেবে নয়, শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবেও কাজ করবে। উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অধিভুক্ত কলেজসমূহে মানসম্মত শিক্ষাদানের জন্য চাপ প্রদান করবে। শিক্ষা পাঠক্রম উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে অতিরিক্ত রাষ্ট্রীয় সাহায্য প্রদান, দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজসমূহের বিলোপ সাধন এবং অধিভুক্ত কলেজসমূহে ন্যূনতম হারে ফি নির্ধারণ প্রভৃতি সম্পন্ন করার জন্য কমিশন সুপারিশ করে। তীব্র সমালোচনার কারণে শেষের দুটি সুপারিশ বাতিল করা হয় এবং অন্যান্যগুলির আইন পরিষদ ও সংবাদপত্রের বিরোধিতার মুখেও বাস্তবায়িত করা হয়।
Discussion about this post