১৯৬৬ : ১৮ মার্চ: আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফা গৃহীত হয়। এরপর তিনি ৬ দফার পক্ষে দেশ ব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন এ সময় তাকে সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বার বার গ্রেফতার করা হয়। ৩ মাসে তিনি ৮ বার গ্রেফতার হন। শেষ বার তাকে গ্রেফতার করে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়।
১৯৬৮ : ৩ জানুয়ারী: পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামী করে মোট ৩৫জন বাঙ্গালী সেনা ও সিএসপি অফিসারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বিছিন্ন করার অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।
১৯৬৮ : ২৮ জানুয়ারী: নিজেকে নির্দোষ দাবী করে আদালতে লিখিত বিবৃতি দেন। এই বিবৃতি পড়ে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে আন্দালন গন অভুঙ্খানে রূপ নেয়। ছাত্র সমাজ ছয় দফার সমর্থনে ১১ দফা দাবী উপস্থাপন করে।
১৯৬৯ : ৩০ জানুয়ারী: উদ্ভুত পরিস্থিতি ঠেকাতে আলোচনার জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব দেয় পাকিস্তানী জান্তা সরকার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সে প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেন।
১৯৬৯ : ১৫ ফেব্রুয়ারী: ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে মামলার অন্যতম আসামী সাজেন্ট জহুরুল হককে নির্মম ভাবে হত্যা করা হলে বিক্ষুব্ধ জনতা বাধ ভাঙ্গা বন্যার মতো রাস্তায় নেমে আসে। ১৯৬৯ : ২২ ফেব্রুয়ারী: তীব্র গণআন্দোলনের মুখে সরকার ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য’ শিরোনামে মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়।
১৯৬৯ : ২৩ ফেব্রুয়ারী: ডাকসু এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবকে এক বিশাল সম্বর্ধনা দেয়ার আয়োজন করে। ঐ সভায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
১৯৬৯ : ১০ মার্চ: রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন। গোল টেবিলে ৬ দফার পক্ষে বঙ্গবন্ধু দৃঢ় অবস্থান নেন। তবে ঐ বৈঠক ব্যর্থ হয়।
১৯৬৯ : ২৫ মার্চ: রাওয়াল পিন্ডি গোল টেবিল বৈঠক ব্যর্থ হবার প্রেক্ষিতে আইয়ুব খান ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ইয়াহিয়া সামরিক শাসন জারী করেন।
১৯৬৯ : ২৮ নভেম্বর: জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ এর ১ জানুয়ারী থেকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষনা দেন। ঐ বছরের শেষ ভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাও ঘোষণা করেন।
১৯৭০ : ১ জানুয়ারী: ১৯৫৮ সালের পর প্রথম রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। বঙ্গবন্ধু প্রথম দিন থেকেই ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন।
১৯৭০ : ৪ জুন: নির্বাচনকে সামনে রেখে মতিঝিল ইডেন হোটেল প্রাঙ্গনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ একক ভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
১৯৭০ : ৫ জুন: পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনী এলাকা বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে ৩১০টি আসন আর জাতীয় পরিষদে ১৬৯টি আসন নিদির্ষ্ট করা হয়।
১৯৭০ : ১৫ আগষ্ট: প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন যথাক্রমে ৭ ও ১৭ ডিসেম্বর।
১৯৭০ : ৮ অক্টোবর: ইসলামাবাদ থেকে ১৯টি রাজনৈতিক দলের প্রতীক ঘোষনা করে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। স্মরনীয় যে, ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিলো নৌকা।
১৯৭০ : ২৮ অক্টোবর: বঙ্গবন্ধু বেতার ও টেলিভিশনে নির্বাচনী ভাষণ দেন। তিনি বলে, ‘প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগের জন্ম। তার সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগের বিকাশ’ । তিনি দেশবাসীর কাছে ছয় দফার পক্ষে ম্যান্ডেট চান।
১৯৭০ : ১২ নভেম্বর: পূর্ব বাংলায় ভয়াবহ ঝড় এবং জলোচ্ছাসে ১০/১২ লাখ মানুষ মারা যান। বঙ্গবন্ধু তার নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত করে ত্রাণ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি এই অঞ্চলের জনগনের প্রতি চরম উদাসীনতা তুলে ধরেন। এই সময় ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেনো’ শিরোনামে তথ্য সম্বলিত একটি পোষ্টার জাতিকে নাড়া দেয়।
১৯৭০ : ৭ ডিসেম্বর: বন্যা-দুর্গত এলাকা বাদে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তান পিপলস পার্টি পায় ৮৮টি আসন।
১৯৭০ : ১৭ ডিসেম্বর: প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান ২৯৮টি আসন লাভ করে।
১৯৭১: ৩ জানুয়ারী: আওয়ামী লীগের সকল নির্বাচিত সদস্য ৬ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রনয়ন তথা ৬ দফা বাস্তবায়নের শপথ গ্রহণ করেন। ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ এই রবীন্দ্র সংগীতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। বঙ্গবন্ধু ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে বাঙালী জাতির মুক্তির সংকল্প ব্যক্ত করেন। শপথ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সংগীতের পর ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’। গানটি পরিবেশিত হয়।
১৯৭১ : ১০ জানুয়ারী: প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সংগে তিন দফা বৈঠক করেন। ৪দিন পর ফিরে আসার সময় তিনি বলেন ‘শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন’।
১৯৭১ : ২৭ জানুয়ারী: জুলফিকার আলী ভূট্টো ঢাকা এসে বঙ্গবন্ধুর সংগে কয়েকদফা আলোচনা করেন। কিন্তু ভূট্টোর সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হয়।
১৯৭১ : ১৩ ফেব্রুয়ারী: এক সরকারী ঘোষণায় বলা হয় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় ৩ মার্চ ১৯৭১ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেছেন।
১৯৭১ : ১ মার্চ: জাতীয় পরিষদ অধিবেশনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক শুরু হয় হোটেল পূর্বানীতে। ঐ দিনই আকস্মিক ভাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনিদিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষনা করেন। সারা বাংলা ক্ষোভে ফেটে পরে। বিক্ষুদ্ধ জনসমুদ্রে পরিণত হয় রাজপথ। বঙ্গবন্ধু এটাকে শাসকদের আরেকটি চক্রান্ত বলে চিহ্নিত করেন। তিনি ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল আহবান করেন।
১৯৭১ : ২ মার্চ: ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বত:স্ফুর্ত হরতাল পালিত হয়। উত্তাল জনস্রোতে ঢাকা পরিণত হয় এক বিক্ষোভের শহরে। জান্তা সরকার ঢাকা শহরের পৌর এলাকায় সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ জারী করেন।
১৯৭১ : ৩ মার্চ: বিক্ষুদ্ধ জনতা কারফিউ উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে। সামরিক জান্তার গুলিতে মারা যান ৩জন আহত হন কমপক্ষে ৬০জন। এই সময় পুরো দেশ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে।
১৯৭১ : ৭ মার্চ: বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক যুগান্তকারী ভাষনে ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষনে ষ্পষ্ট হয়ে যায় স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যত। সারাদেশে শুরু হয় এক অভূতপূর্ব অসযোগ আন্দোলন। ১৯৭১ : ১৬ মার্চ: বিস্ফোরণমুখ বাংলাদেশে আসেন ইয়াহিয়া খান। বঙ্গবন্ধুর সংগে তার দীর্ঘ আলোচনা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু তার গাড়ীতে কালো পতাকা উড়িয়ে হেয়ার রোডে প্রেসিডেন্ট ভবনে আলোচনার জন্য যান।
১৯৭১ : ১৭ মার্চ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫১তম জন্মদিন। এই দিন ইয়াহিয়া খানের সংগে দ্বিতীয় দফা আলোচনা থেকে ফিরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলে ‘এদেশে জন্ম দিনই বা কি আর মৃত্যু দিনই বা কি আমার জনগনই আমার জীবন’।
১৯৭১ : ২৩ মার্চ: কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রতিরোধ দিবস পালনের ঘোষনা দেন। সমস্ত সরকারী এবং বেসরকারী ভবনে ‘বাংলাদেশের’ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এদিন সরকারী ছুটি ঘোষনা করেন।
১৯৭১ : ২৫ মার্চ: পৃথিবীর ইতিহাসে এক নৃশংসতম কালো রাত্রি ২৫ মার্চ। এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে মানুষের ঢল নামে। সন্ধ্যায় খবর পাওয়া যায় ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করেছেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। তার সাড়ে এগারটায় শুরু হয় ‘অপারেশন সার্চ লাইট’। ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা।
১৯৭১ : ২৬ মার্চ: ১২-৩০ মিনিট ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হবার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাবার্তা ওয়ারলেস যোগে চট্টগ্রামের জহুরুল আহমেদ চৌধুরীকে প্রেরণ করেন। চট্টগ্রাম বেতার থেকে আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বানী স্বকন্ঠে প্রচার করেন। পরে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামে অবস্থিত অষ্টম ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান ঐ ঘোষণা পূণ:পাঠ করেন। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে করাচীতে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯৭১ : ২৭ মার্চ: বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষন এবং স্বাধীনতার ঘোষণার আলোকে বীর বাঙালী গড়ে তোলে স্বত:স্ফুর্ত প্রতিরোধ। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের এক গৌরবজ্জল অধ্যায়।
১৯৭১ : ১৭ এপ্রিল: তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার ভবের পাড়ার (বৈদ্যনাথ তলা) আমবাগানে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে নতুন মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহম্মদ ঘোষণা করেন আজ থেকে (১৭ এপ্রিল) বৈদ্যনাথ তলার নাম মুজিব নগর এবং অস্থায়ী রাজধানী মুজিব নগর থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।
১৯৭১ : ২৫ মে: ক্রমেই মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হতে শুরু করে। সংগঠিত হয় প্রবাসী সরকার। ২৫ মে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হয়। এই কেন্দ্রের সিগনেচার টিউন ছিলো ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’। কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচারিত হতে থাকে। এই কেন্দ্র থেকে প্রচারিত শোন একটি মুজিবরের কন্ঠে…… গানটি বাঙালীর উদ্দীপনা বাড়িয়ে দেয়।
১৯৭১ : ৩ আগষ্ট: পাকিস্তান টেলিভিশন থেকে বলা হয় ১১ আগষ্ট থেকে সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধুর বিচার শুরু হবে। এই ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ এবং উদ্বেগের ঝড় বয়ে যায়। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রবাসী বাঙালীরা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী সন ম্যাকব্রাইডকে ইসলামাবাদে পাঠান। কিন্তু পাকিস্তানী জান্তা সরকার বিদেশী আইনজীবী নিয়োগে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে।
১৯৭১ : ১০ আগষ্ট: পাকিস্তানী জান্তা সরকার বঙ্গবন্ধুর পক্ষ সমর্থনের জন্য আইনজীবী একে ব্রোহীকে নিয়োগ দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে যখন ২৬ মার্চ ইয়াহিয়া খানের ভাষনের টেপ শোনানো হয় তখন তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে অস্বীকার করেন এবং ব্রোহীকে অব্যহতি দেন। জাতীয় ও আন্তজার্তিক ভাবে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাপক জনমত তৈরী হয়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্বপ্ন বস্তবতা স্পর্শ করতে থাকে।
১৯৭১ : ১১ নভেম্বর: বঙ্গবন্ধুকে ইয়াহিয়া খানের সামনে হাজির করা হয়। ইয়াহিয়ার সংগে ছিলেন ভূট্টো এবং জেনারেল আকবর। ইয়াহিয়া করমর্দনের জন্য হাত বাড়ালে বঙ্গবন্ধু বলে ‘দুঃখিত ও হাতে বাঙালীর রক্ত লেগে আছে ও হাত আমি স্পর্শ করবো না’। এ সময় অনিবার্য বিজয়ের দিকে এগুতে থাকে আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।
১৯৭১ : ২ ডিসেম্বর: বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির সংগ্রাম যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন লায়ালাপুর কারাগারে ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর সংগে সমঝোতার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ঐ সমঝোতা প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করেন।
১৯৭১ : ১৬ ডিসেম্বর: ত্রিশ লাখ শহীদ এবং তিন লাখ মা বোনের ইজ্জ্বতের বিনিময়ে আসে আমাদের বিজয়। বাঙালী জাতি মুক্ত হয় পরাধীনতার শৃংখল থেকে। কিন্তু মুক্তির অপূর্ণতা রয়ে যায় স্বাধীনতার স্থাপতি তখন নির্জন কারাগারে।
১৯৭২ : ৩ জানুয়ারী: পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জুলফিকার আলী ভূট্টো করাচীতে ঘোষণা করেন ‘শেখ মুজিবকে বিনা শর্তে মুক্তি দেয়া হবে’।
১৯৭২ : ৮ জানুয়ারী: বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পান। পিআইয়ের একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠানো হয়। ৮ জানুয়ারী ভোরে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌছেন। তার হোটেলের সামনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা করেন ‘আমি আমার জনগনের কাছে ফিরে যেতে চাই’।
১৯৭২ : ১০ জানুয়ারী: সকালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথের আগ্রহে ব্রিটেনের রাজকীয় বিমান বাহিনীর এক বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু নয়া দিল্লী পৌছালে রাষ্ট্রপতি ভি.ভি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরাগান্ধী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান। বিমান বন্দরে বঙ্গবন্ধু বলেন ‘অশুভের বিরুদ্ধে শুভের বিজয় হয়েছে’। ঐ দিন বিকেলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। লাখো মানুষের জনস্রোত, বাঁধভাঙ্গা আবেগে অশ্রসিক্ত জাতিরপিতা বলেন ‘আজ আমার জীবনের স্বাদপূর্ণ হয়েছে’ ।ঐ দিন জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু হৃদয়কাড়া এক ভাষণ দেন। ঐ রাতেই তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ : ১২ জানুয়ারী: দেশে রাষ্ট্রপতি শাসনের পরিবর্তে সংসদীয় শাসন কাঠামো প্রবর্তন করে নতুন মন্ত্রী পরিষদ গঠন করে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
১৯৭২ : ১২ মার্চ: স্বাধীনতার মাত্র ৫০ দিনের মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়।
১৯৭২ : ২৬ মার্চ: শোষনহীন সমাজ গঠনের অঙ্গীকারের মধ্যে দিয়ে প্রথম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়।
১৯৭২ :২০ এপ্রিল: শুরু হয় গণপরিষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষনা সম্পর্কিত প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়।
১৯৭২ : ৪ নভেম্বর: গণপরিষদে বাংলাদেশের খসড়া শাসনতন্ত্র অনুমোদিত হয়। এ উপলক্ষে প্রদত্ত ভাষনে বঙ্গবন্ধু বলেন ‘বিজয়ের ৯ মাসের মধ্যে শাসনতন্ত্র দেয়া, মানুষের মৌলিক অধিকার দেয়ার অর্থ হলো জনগনের উপর বিশ্বাস করি।
১৯৭২ : ১৬ ডিসেম্বর: নতুন সংবিধান কার্যকর করা হয়। বাতিল করা হয় গণপরিষদ।
১৯৭২ : ৭ মার্চ: নতুন সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতির জনকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৩০০টির মদ্যে ২৯২টি আসনে বিজয়ী হয়।
Discussion about this post