বিজ্ঞানেও বিপ্লব ঘটে। সে বিপ্লবে রক্ত ঝরে না, প্রাণহানিও হয় না। নীরব বিপ্লব যাকে বলে। বিজ্ঞানের একেকটা বিপ্লব পাল্টে দেয় গোটা দুনিয়াকে। মানবসভ্যতায় সঞ্চার হয় নতুন গতি। প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্ব, আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা, নিলস বোরের আধুনিক পরমাণুবাদ বিজ্ঞান ইতিহাসের একেকটা মহাবিপ্লব। পদার্থবিজ্ঞানের সেসব বৈপ্লবিক ইতিহাস নিয়ে প্রফেসর এ এম হারুন অর রশীদ লিখেছিলেন আস্ত একখান বই—পদার্থবিজ্ঞানে বিপ্লব। তিনি আরও লিখেছিলেন মৌলিক কণা নামে আরও একটি কালজয়ী বাংলা বই। গ্রিক পরমাণুবাদ থেকে ডালটনের পরমাণুবাদ, ইলেকট্রন আবিষ্কারের কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে ঐতিহাসিক গল্পের ভঙ্গিমায়। সেই সঙ্গে বইটিতে উঠে এসেছে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভেতরের খবর। পজিট্রন, নিউট্রন, মিউওন, কেয়ন, পাই-মেসন, নিউট্রিনোর মতো রহস্যময় কণার আলোচনাও বাদ পড়েনি বই থেকে। কোয়ার্কের রূপ-রস-গন্ধও অত্যন্ত সাবলীলভাবে বর্ণনা করেছেন লেখক। কোয়ার্ক সম্পর্কে লেখক বলেছেন, ‘যখন কোয়ার্কের প্রস্তাব করা হয়েছিল, তখন তিন ধরনের কোয়ার্কের কথা চিন্তা করা হয়। আজকাল অবশ্য ১২টি কোয়ার্কের কথা বলা হয়। এদের আবার চারটি বর্ণে বা পরিবারে ভাগ করা হয় এবং প্রতিটি বর্ণে আবার তিনটি করে গন্ধযুক্ত কোয়ার্কের কথা বলা হয়েছে। অবশ্য বর্ণ ও গন্ধের অর্থ এ ক্ষেত্রে সাধারণ অর্থ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।’
এ এম হারুন অর রশীদ লিখেছিলেন নতুন শতাব্দীর নতুন বিজ্ঞান নামে আরেকটি সুখপাঠ্য বই। যেটিতে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গভীর আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা করা হয়েছে বসু-আইনস্টাইনের পরিসংখ্যানের স্বরূপও। বইটিতে উঠে এসেছে আপেক্ষিকতা ও বিশ্ব সৃষ্টি তত্ত্বও। এমনকি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, আলোচনা করা হয়েছে বিজ্ঞানে হালের সেনসেশন কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়েও। কৃষ্ণগহ্বর ও ফার্মার শেষ উপপাদ্য নিয়ে লেখা দুটি প্রবন্ধও পাঠক মনের খোরাক মেটাতে সক্ষম। বোস-আইনস্টাইন ঘনীভবন কী, আমরা বুঝে উঠতে পারি না। লেখক সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এই বইয়ের ‘নতুন শতাব্দীর নতুন বিজ্ঞান’ পর্বে।
এ এম হারুন অর রশীদ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার অন্যতম পথিকৃত্। বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে সহজ-সাবলীল গদ্যে লিখেছেন অসংখ্য সুখপাঠ্য বাংলা বই। লিখেছেন বেশ কিছু পাঠ্যবইও। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা, আপেক্ষিকতা, কণা-পদার্থবিজ্ঞান, বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান নিয়ে তিনি বাংলা ভাষায় বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তাঁর বিভিন্ন বইয়ে। তাঁর অসংখ্য বিজ্ঞান বইয়ের ভেতর থেকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বই আর কিছু অগ্রন্থিত রচনার সংকলন হলো
এই বিজ্ঞানসমগ্র। বইটি প্রকাশ করেছে অনুপম প্রকাশনী। ৪১৬ পৃষ্ঠার বইটির দাম রাখা হয়েছে মাত্র ৪০০ টাকা। বইটি ঢাকাসহ দেশের যেকোনো বুকস্টলে পাওয়া যায়।
Discussion about this post