আদনান সহিদ
মূল শিরোনাম : The Eyes of Darkness
ধরন: রহস্য-রোমাঞ্চধর্মী উপন্যাস
মূল লেখক : ডিন কুন্টজ
মূল ভাষা : ইংরেজি
মূল উপন্যাসের প্রকাশকাল : ১৯৮১
বঙ্গানুবাদ : খন্দকার হিমেল হাসান
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান: শোভা প্রকাশ
প্রকাশ সাল : ২০২০
মুদ্রিত মূল্য:৩৫০ টাকা
প্রচ্ছদ: ইফতেকার হোসেন সোহেল
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২৮৮
______________________________ _____
পূর্বকথা ও সংশ্লিষ্ট তথ্য:
উনচল্লিশ বছর আগে ১৯৮১ সালে মার্কিন ঔপন্যাসিক ডিন কুন্টজ রচিত ‘দি আইজ অব ডার্কনেস’ (The Eyes of Darkness) উপন্যাসটি করোনাকালে নতুনভাবে আলোচনায় আসে ২০২০ সালে। উপন্যাসটিতে চীনের এক গবেষণাগারে তৈরি ‘উহান ৪০০’ নামক এক ভাইরাসের কথা উল্লেখ আছে যা সম্প্রতি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনা অতিমারীর সাথে বেশ সাদৃশ্যপূর্ণ।এছাড়া করোনা প্রাদুর্ভাবের উৎস চীনের উহান শহর বিধায় পাঠক,সমালোচক ও গবেষক মহলে ডিন কুন্টজের এই উপন্যাসটি প্রবল আগ্রহ ও কৌতূহলের উদ্রেক করেছে। ঔপন্যাসিক ডিন কুন্টজ অবশ্য করোনা অতিমারীর সাথে ‘দি আইজ অব ডার্কনেস’-এর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক নাকচ করে একে কেবল ‘ফিকশন’ হিসেবেই বিবেচনা করতে বলেছেন।বই বিক্রির অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আমাজন ডটকমের সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় উপন্যাসটি দীর্ঘদিন ধরে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম ছিল।ডিন কুন্টজ ‘লেই নিকোলাস’ ছদ্মনামে যে পাঁচটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন তার মধ্যে ‘দ্য আইজ অব ডার্কনেস’ দ্বিতীয়।পরবর্তীতে পরিমার্জিত সংস্করণে নিজের মূল নাম (ডিন কুন্টজ) ফিরিয়ে আনেন তিনি।
কাহিনী সংক্ষেপ ও প্রেক্ষাপট:
যুক্তরাষ্ট্রের সিয়েরা পর্বতমালার গহীন বনে পর্বতারোহণের সময় (সারভাইভাল টেস্ট) টিম লিডারসহ সদলবলে বেশ রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে যায় দশ বছর বয়সী ড্যানি ইভান্স। বেশ কিছুদিন পর ছেলেহারা, দিকভ্রান্ত মা ক্রিস্টিনা ইভান্স অদ্ভুত ও অবিশ্বাস্য কিছু ঘটনার সম্মুখীন হন যাতে ইঙ্গিত মেলে ড্যানি আসলে বেঁচে আছে এবং বড় ধরনের বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার আশায় মা’র সাহায্যপ্রার্থী। ড্যানি নিখোঁজ হবার পর স্বামী মাইকেলের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে নৃত্য পরিচালক ক্রিস্টিনার, একাকী নিজ বাসায় বসবাস করত সে। ঘটনাক্রমে তাঁর পরিচয় ঘটে সুদর্শন আইনজীবী এলিয়ট স্ট্রাইকারের সাথে। ড্যানির নিখোঁজের কথা শুনে ক্রমান্বয়ে মেলামেশার পর তাদের মাঝে এক বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রেমময় সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। সেই সম্পর্কের খাতিরে এলিয়ট ও ক্রিস্টিনা ড্যানি ইভান্সকে এক গোপন সামরিক গবেষণাগার থেকে উদ্ধারের ‘প্রায় অসম্ভব’ ও অজানা অভিযানে নেমে পড়ে যেখানে তারা দু’জনই সন্দিহান ড্যানি ইভান্স আসলেই বেঁচে আছে কিনা!
●আসলেই কি ক্রিস্টিনার ছেলে, ড্যানি ইভান্স বেঁচে আছে? নাকি এটি কেবলই বিভ্রম, দুঃস্বপ্ন বা কল্পনা?
●ড্যানির সাথে আবিষ্কৃত গোপন গবেষণাগারের সম্পর্ক কি?
●ক্রিস্টিনা ও এলিয়ট কি রহস্যের শেষ দেখে ছাড়বে?
●পাঠক কি সত্যিই বর্তমান করোনা (কোভিড-১৯) ভাইরাসের সাথে উপন্যাসে বর্ণিত ‘উহান ৪০০’ ভাইরাসের মিল খুঁজে পাবেন?
●ঠিক কী উদ্দেশ্যে গোপন গবেষণাগারে তৈরি করা হচ্ছে মানবসৃষ্ট চারশতম মাইক্রো অর্গানিজম, ‘উহান-৪০০’?
●’উহান-৪০০’ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কি লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে?
●ড্যানির নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার সাথে কি ‘উহান ৪০০’ ভাইরাসের কি আদৌ সম্পর্ক আছে?
রহস্য-রোমাঞ্চধর্মী ”ষদি আইজ অব ডার্কনেস’ উপন্যাসটি পাঠের মাধ্যমেই উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর যথাযথ উত্তর পাওয়া যাবে।
ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ ও মতামত:
”দি আইজ অব ডার্কনেস’ উপন্যাসটির মূল ইংরেজি সংস্করণ, ‘The Eyes of Darkness’ পড়েছিলাম পিডিএফ কপিতে আর খন্দকার হিমেল হক অনূদিত বঙ্গানুবাদটি পড়া শেষ করেছি লকডাউনের মাঝেই, মাস কয়েক আগে।মূলত অনুবাদে আগ্রহ থাকায় বাংলা ও ইংরেজি দুই সংস্করণেই উপন্যাসটি পড়েছি ভাষাগত উপস্থাপনের একটা তুলনামূলক চিত্র পাবার আশায়।সামান্য কিছু বানান বিভ্রাট ব্যতীত খন্দকার হিমেল হক অনূদিত উপন্যাসটি সাবলীল ও নির্মেদ লেগেছে।
পারমাণবিক ও রাসায়নিক শক্তির অধিকারী এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ সুপারপাওয়ার রাষ্ট্রগুলো কীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াইয়ে নেমে গবেষণার মত মহৎকর্মকে ‘কন্সপিরেসি থিওরি’ (ষড়যন্ত্র তত্ত্ব) রূপে বিতর্কিত ও সন্দিহান করে তুলছে আলোচ্য উপন্যাসটি তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।উপন্যাসটির চরিত্রগুলোর গতি-প্রকৃতি, কার্যকলাপ ও কথোপকথন সন্তোষজনক।তবে মূল রহস্যে প্রবেশের ক্ষেত্রে পাঠককে ‘বেশ খানিকটা’ অপেক্ষা করানোর পর উপন্যাসটি আচমকা শেষ হয়ে গেছে বলে মনে হয়েছে। শুরুর দিকটায় দুই-তৃতীয়াংশ যেভাবে খুঁটিনাটি সহকারে বর্ণনা করে পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন ঔপন্যাসিক ডিন কুন্টজ তার বিপরীতে শেষ এক তৃতীয়াংশে তড়িঘড়ি করে ‘প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা’ দিয়ে শেষ করে দেয়া হয়েছে যা একটু ‘কম মানানসই’ লাগল।
”দি আইজ অব ডার্কনেস’ উপন্যাসটি সম্পর্কে ডিন কুন্টজ পরিশিষ্টে উল্লেখ করেছেন যে, এটি তাঁর ‘মিশ্র ধারার উপন্যাস লেখার প্রথমদিককার কাজ যাতে অ্যাকশন, সাসপেন্স, রোমান্স ও হালকা অনুভূতির ছোঁয়া সবই আছে’- তাঁর সাথে একমত পোষণ করছি। অপরদিকে, ‘যদিও উত্তেজনা, চরিত্রের গভীরতা, কাহিনীর সূক্ষ্মতা আর গতির যথেষ্ট অভাব রয়েছে এতে’ – কুন্টজের এই ভাষ্যের সাথেও দ্বিমত নই।
পরিশেষে, ব্যতিক্রমী প্রেক্ষাপট ও সাম্প্রতিক ‘কোভিড-১৯’ এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ প্লটে রচিত উপন্যাসটি আকর্ষণীয় ও সময়োপযোগী একটি পাঠ হবে বলেই মনে করি।
Discussion about this post