দ্বিতীয়ত ছিল তাঁর জনশিল্পের চর্চা। তিনি বইয়ের প্রচ্ছদ, অলংকরণ, সাজসজ্জা থেকে শুরু করে শাড়ির নকশা করতেও ইতস্তত করেননি। বিসিকের নকশাকেন্দ্র প্রতিঠা করে তিনি ঐতিহ্যবাহী জামদানির নকশা সংগ্রহ এবং এর আধুনিকায়নে একাগ্র ছিলেন। বৈশাখী মেলার আয়োজন করে কারুশিল্পকে নাগরিক জনরুচি গড়তে এবং তার প্রসার ঘটাতে চেয়েছেন।
তৃতীয়ত ছিল শিল্পী হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক দায়বোধ। তিনি প্রচুর রাজনৈতিক পোস্টার ও কার্টুন করেছেন। তাঁর আঁকা ইয়াহিয়া খানের মুখচ্ছবির কার্টুনটি মুক্তিযুদ্ধের আইকন হয়ে উঠেছে। রাজনীতিতে শিল্পের ভূমিকার এটি এক অনন্য উদাহরণ। মুক্তিযুদ্ধকালে প্রবাসী সরকারের তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ে আর্ট ও ডিজাইন বিভাগের প্রধান হিসেবে বহু স্মরণীয় কাজ করেছেন। জাতীয় পতাকার নকশার পূর্ণাঙ্গতা দিয়েছেন। জাতীয় প্রতীকের ডিজাইন, দেশের সংবিধানের প্রচ্ছদ ও অলংকরণও তাঁর হাতে সৃষ্টি। বাংলা একাডেমির ফেলো, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ বিভিন্ন পদক পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছিল তাঁকে।
মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে, ষাটের দশকের স্বাধিকার আন্দোলন, চিরগৌরবের মুক্তিযুদ্ধ হয়ে, স্বাধীনতা–পরবর্তী স্বৈরশাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক সব সংগ্রামে তিনি ছিলেন সক্রিয়। তাঁকে পাওয়া গেছে রাজপথের সংগ্রামী কর্মীর ভূমিকায়। তাঁর জীবনের যবনিকাও হয়েছে সেই সক্রিয়তারই ভেতরে। ১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় কবিতা পরিষদের উৎসবের সমাপনী দিনে সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে তিনি ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’ শিরোনামের স্বৈরাচারবিরোধী রেখাচিত্র আঁকার পর আকস্মিকভাবে গত হন মাত্র ৬৭ বছর বয়সে। এমন মৃত্যুর মধ্যে অর্থবহ হয়ে রইল কামরুল হাসানের সারা জীবনের সাধনা।
কর্মসূচি
শিল্পী কামরুল হাসানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত ২৫ নভেম্বর কলাকেন্দ্র আয়োজিত তাঁর শিল্পকর্মের প্রদর্শনী দিয়ে। ‘সহজিয়া’ নামের এ প্রদর্শনী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে গতকাল সকাল সাড়ে নয়টায় শিল্পীর কবরে উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ ছাড়া তাঁর নামে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে চারুশিক্ষার্থীদের জন্য স্থাপন করা একটি কম্পিউটার ল্যাবও উদ্বোধন করা হয়। আজ ৩ ডিসেম্বর গ্রাফিকস আর্ট বিভাগের আয়োজনে বেলা ১১টায় হবে আলোচনা সভা।
Discussion about this post