মেহেদী হাসান সৈকত
মহাকালের বুকে টিকে থাকা হাজারো অপূর্ণ প্রণয়ের উপাখ্যানের মাঝে এটিও একটি ছোট্ট অপূর্ণতা। যা হয়তো পেতে পারত গতানুগতিক পরিপূর্ণতার স্বাদ, হতে পারত আর দশটা চিরচেনা নারীপুরুষ প্রেমের এক শাশ্বত উদাহরণ। কিংবা মেটাতে পারত মির্চার জীবনে অমৃতাকে অন্তত তিনবার দেখার আকাঙ্ক্ষাটুকু।
‘লা নুই বেঙ্গলী’ বা ‘বাংলার রাত’ বইটি মূলত বিশ শতকের গোড়ার দিকে সদ্য ইংরেজ বলয়ের থেকে একটু একটু করে মাথা তুলে ওঠা এলিট শ্রেণির এক বাঙালি তরুণীর জীবনে প্রথম প্রেমের ছোঁয়া লাগার এক অসমাপ্ত গল্প। যেখানে ধর্মের বেড়াজালে বন্দি থাকা নারী সম্প্রদায় অনুমতি ব্যতীত ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পেত না, সেখানে বাইরের এক অচেনা পৃথিবীর কাছে নিজের সাহিত্য প্রতিভা নিয়ে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিতে থাকে অমৃতা নামের ষোলো বছরের মেয়েটি। এরপরই সে জীবনে প্রথম খুঁজে পায় মানবপ্রেমের সংজ্ঞা, জানতে থাকে জাত-ধর্মের সকল বাঁধন ডিঙিয়ে এক অসম আকর্ষণ।
অন্যদিকে চাকরি সুবাদে হাজার মাইল পেরিয়ে ঝকঝকে ইউরোপীয় সভ্যতা ছেড়ে ভারতবর্ষে ছুটে আসে জ্ঞানপিপাসু এক যুবক। নিয়তির অলিখিত বাঁধনে জড়িয়ে পড়ে নেটিভ পরিচয়ের এক বাঙালি পরিবারের মায়ায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ প্রণয়কাব্য পেতে চলে এক নিদারুণ পরিণতি।
বিপুল পরিচিতি পাওয়া এ দুটি জীবনীগ্রন্থে পরস্পরের প্রতি যেমন দোষারোপ ছিল তেমনি প্রকাশ পেয়েছে অপরিসীম এক ভালোবাসারও। তাই যুগযুগান্তরের কালের খেয়া পেরিয়ে একটিবার চোখের দেখা দেখতেও জন্মেছিল হাজারো আকুলতা।
মহাকাল তাদের এক আশ্চর্য রূপ দেখিয়েছে। যার আদি নেই, মধ্য নেই, অন্তও নেই। শুধু আছে প্রেম। কালজয়ী এ প্রেম ধ্রুবতারার মতো তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পথ হারিয়ে পৌঁছে দেয় কোনো এক অজানা অতল মহাসমুদ্রে। মশিউর রহমানের প্রচ্ছদে বাংলাদেশ থেকে বই দুইটি প্রকাশ করেছে জয় প্রকাশন।
Discussion about this post