এখানে আমার শীতের সোনাঝরা আলো
ঝলমল সকাল ছিল—পদ্মবিলের জলে সূর্য দেখতাম,
সূর্যকে কোলে নিতে গিয়ে শুয়ে পড়তাম বিলের বুকেই
মধ্যরাতের গা মাখা জোছনা ছিল—জোছনায়
বুকসাঁতার দেওয়ার মজাটাই ছিল আলাদা
শিমুলতলায় পাতানো টঙ ছিল—প্রাণভরে
শিমুল দেখতাম শিমুলের রূপে পাগলপারা পাখিদের নৃত্য দেখতাম
শিমুল ধপাস করে আমার শরীরে পড়ত—
ঠোঁট দুটো আমার শিমুলরাঙা হয়ে উঠত…
এখানে আমার নিবাস ছিল—বড়োসড়ো নিকানো উঠোন
শানবাঁধা দিঘি, দিঘিতে হরেকরঙা পদ্ম,
ফুলে-ফলে নুয়েপড়া গাছগাছালি,
সফেদ খাতা, ঝরনা কলম, কল্লোলিত মন,
সংখ্যাহীন শব্দের কলকাকলি—
আমি শব্দগুলো ধরে ধরে
কলমের আগায় নিয়ে আসতাম
সফেদ খাতা আমার কবিতায় ভরে যেত…
একসময় এক পৃথিবী স্বপ্ন নিয়তির সুনামিতে ভেসে যায়
দুঃসহ জ্বালা আমাকে অহোরাত্র খুবলে খুবলে খায়
অবশেষে
শাম্মী এহসান
জীবনে বহুবার বহুজন বহুভাবে
প্রেমে পড়েছে আমার!
অথচ আমি জীবনে মাত্র একবারই প্রেমে পড়েছিলাম!
বয়স তখন সবেমাত্র ১৮!
কী প্রচণ্ড সেই প্রেম!
তাকে দেখলেই, অসম্ভব পিপাসা পেত আমার।
বুকের ভিতরে ধুকপুক! ভেতরে কী কাঁপন
অথচ শরীরে অদ্ভুত এক অবসন্নতা!
তার জন্য আস্ত একটা ডায়রিতে,
সযত্নে স্কচটেপে আটকে যেতে থাকল
তার ঘাম মুছে ফেলে দেওয়া টিসু্য,
চুয়িংগামের খোসা, ছুঁয়ে দেওয়া গোলাপের পাপড়ি,
ফেলে দেওয়া স্ট্র! আস্ত একটা পাকা চুল!
আরও কত কী!
আমার ২১-এ সে অন্যের হয়ে যায়
তার ৩৩-এ আমি অন্যের হয়ে যাই!
আমি তাকে ১৮-তে পাইনি,
২১-এ পাইনি, ২৫-এ পাইনি,
এমনকি ৪০-এও পাইনি!
আমাকে অবাক করে ৫০-এর এক ব্যস্ত সকালে
হঠাত্ই তার ফোন— ‘আমি তোমাকেই ভালোবাসি, তনু!’
আমার এখন ৫০!
তার? ৫৮ বা ৫৯!
আমি জানি, এই ভালোবাসা সেই ভালোবাসা না!
তারপরেও, আমার শুনতে ভালো লাগে!
সেও জানে, এই ভালোবাসা সেই ভালোবাসা না!
তারপরেও, তার বলতে ভালো লাগে!
হঠাৎ করেই আমার বাতের ব্যথাটা
একেবারেই কম মনে হয়!
ইনসুলিনটাও নিতে ভুলে যাই, ধুর!!
আমি সেই ১৮ বছরের কিশোরীর মতো
বেণি দুলিয়ে, লাফাতে লাফাতে সিঁড়ি ভেঙে ছাদে চলে যাই।
তারপর, আকাশের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলি—
জীবনে বহুবার বহুজন বহুভাবে
প্রেমে পড়েছে আমার!
অথচ আমি জীবনে মাত্র
একবারই প্রেমে পড়েছিলাম!
তখন বয়স সবেমাত্র ১৮!
ঠিক ২৫ বছর পর বিনিময় হলো আজ!
আমার? হ্যাঁ ৫০! তার? ৫৮ বা ৫৯
Discussion about this post