প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনায় আক্রান্ত পুরো বিশ্ব। সব মানুষই চরম বিপদসঙ্কুল অবস্থা অতিবাহিত করছে। এ বিপদে ধৈর্যধারণ করা একজন মানুষের জন্য বীরত্বপূর্ণ কাজ। বিপদে ধৈর্যধারণে রয়েছে অনেক ফজিলত ও উপকারিতা। যার চূড়ান্ত নেয়ামত হলো মহান আল্লাহর সঙ্গে দিদার লাভ করা। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু বলেছেন, মুমিন নারী-পুরুষের ওপর সময় সময় বিপদ ও পরীক্ষা এসে থাকে। কখনও সরাসরি তার ওপর বিপদ আসে। কখনও তার সন্তান মৃত্যুবরণ করে। আবর কখনও তার ধন-সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যায়। সে এ সব মুসিবতে ধৈর্যধারণ করার ফলে তার অন্তর পরিষ্কার হতে থাকে এবং পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হতে থাকে। অবশেষে সে নিষ্পাপ আমলনামা নিয়ে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে মিলিত হয়।’ (তিরমিজি)
ধৈর্যধারণ করা এ কারণে বীরত্বপূর্ণ কাজ যে, যারা এ গুণের অধিকারী হয় তাদের জীবনে অনেক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। যারা এর বাইরে গিয়ে রুক্ষ ও বদমেজাজি হয়, যাদের ভাষা হয় কর্কশ, তারা জীবনে সফল হয় না।
ধৈর্য বলতে আমরা কী বুঝি?
ধৈর্য একটি মহৎগুণ। মানুষের মেজাজের ভারসাম্যতা রক্ষা করা, আত্মসংযম অবলম্বন করা, বিপদে ভেঙে না পড়ে অটল-অবিচল থাকা, ত্বরিতগতিতে ফল লাভের আশা না করার নামই ধৈর্য।
যে কোনো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজের মন মেজাজকে পরিবর্তন না করা। সর্বাবস্থায় এক সুস্থ ও যুক্তিসঙ্গত আচরণ রক্ষা করে চলা। ধৈর্য-সহ্য, সহিষ্ণুতা না থাকলে কোনো কাজেই সফল হওয়া যায় না। সফলতার জন্য প্রয়োজন তীক্ষ্ণ ও কোমল মেজাজ।
যারা ধৈর্য হারা হয়ে যায়, লোকেরা তাদের ধারে কাছে ভিড়তে চায় না। তাদের থেকে দূরে সরে যায়। সুতরাং সুখে-দুঃখে, অসুখে-বিসুখে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সুস্থ ও সবল হতে কিংবা জীবনে সফলতা লাভ করতে প্রয়োজন ধৈর্যধারণ করা। ধৈর্যধারণই মানুষের জন্য বীরত্বপূর্ণ কাজ। সাহসী মানুষ ছাড়া কেউ এ গুণের অধিকারী হতে পারে না।
সর্বোপরি কথা হলো
কোনো মুমিন বান্দার জন্য শোভনীয় নয় যে, সে বিপদে ধৈর্যহারা হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা মহামারি দেখা দিলে সে কাণ্ডজ্ঞান শূন্য হয়ে পড়বে। চিন্তা-অস্থিরতায় ভেঙে পড়বে। এমনটি মুমিনের জন্য ঠিক নয়। হাদিসে এসেছে-
‘যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণের চেষ্টা করবে আল্লাহ তাআলা তাকে ধৈর্যের শক্তি দান করবেন। ধৈর্য থেকে উত্তম ও কল্যাণকর বস্তু আর কী আছে?’
মুমিন বান্দা যে কাজে ধৈর্যধারণ করে-
ধৈর্য বা সবরের তিনটি স্তর রয়েছে। মুমিন বান্দাই এ তিন স্তরকে নিজের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পারে। অন্য কারো তা মেনে চলা সম্ভব নয়। আর তাহলো-
– নিজের নফসকে হারাম এবং অবৈধ কাজ থেকে বিরত রাখা।
– নিজের নফসকে ইবাদত ও আনুগত্যে বাধ্য করা।
– যে কোনো বিপদ-আপদে নির্বিঘ্ন ধৈর্যধারণ করা।
যখনই কোনো মহামারি সমতুল্য রোগ-ব্যধির প্রকোপ দেখা দেয়, ঘূর্ণিঝড়-তুফান সমতুল্য মারাত্মক মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয় সে সব বিপদ-আপদকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের পরীক্ষা কিংবা আজাব হিসেবে নাজিল হয়েছে বলে মেনে নিয়ে তাতে ধৈর্যধারণ করা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে এর বিনিময়ে পুরস্কার বা প্রতিদান পাওয়ার আশা করাই হচ্ছে মুমিনের প্রকৃত পরিচয়।
তবে এতে হতাশা হওয়ার কিছু নেই যে-
যদি কোনো মুমিন বান্দা চরম বিপদ ও হতাশায় মুখ দিয়ে কোনো কাতর শব্দ ব্যবহার করে কিংবা অন্যের কাছে নিজের সুখ-দুঃখ প্রকাশ করে তবে সবর বা ধৈর্যের পরিপন্থী হবে না। হাশরের ময়দানে এ মর্মে ঘোষণা করা হবে বলে হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-
‘ধৈর্যধারণকারীরা কোথায়?’
সেদিন এ ঘোষণা শোনার সঙ্গে সঙ্গে উল্লেখিত তিন ধরনের ধৈর্যধারণকারী দাঁড়িয়ে যাবে। আর এসব ধৈর্যধারণকারীদের বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। তারাই হবে সফল।
সুতরাং বিনা হিসেবে জান্নাতে যেতে হলে মহামারি করোনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সব বিপদ-আপদে মুমিন বান্দাকে বীরত্বপূর্ণ ধৈর্যের গুণ অর্জন করতে হবে। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধৈর্যের সাহসিকতা দেখাতে হবে।
আসুন, ধৈর্যধারণ করে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করি। যাবতীয় বিপদ আপদে চরম ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। নিজেদের জীবনে ধৈর্যধারণ করে প্রকৃত বীরের পরিচয় দেই। আল্লাহ তাআলা সবাইকে ধৈর্যধারণকারী হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
Discussion about this post