মহামারি করোনায় আক্রান্ত সারাদেশ। নেই কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা। যথাযথ সচেতনতাই মহামারি করোনা থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র উপায়। হাদিসে নির্দেশনা মেনে জীবন পরিচালনায়ও করোনা থেকে মুক্ত থাকা যায়। পাশাপাশি এ বিপদে নিজেকে মহান আল্লাহর জিম্মায় রাখতেও নসিহত পেশ করেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
বিপদ ও মুসিবত যত বেশিই হোক না কেন, মুমিন মুসলমানের উচিত নিজেদের মহান আল্লাহর হেফাজতে রাখা। এক্ষেত্রে হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলা।
বর্তমানে করোনার নজীরবিহীন প্রাদুর্ভাবের ও দুর্যোগের মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসটি হতে পারে সব মানুষের জন্য হেফাজতের উসিলা ও পরম রক্ষাকবচ। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে ছিলাম। তিনি আমাকে সম্বোধন করে বললেন, ‘হে ছেলে! আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য শিখিয়ে দিচ্ছি।
– তুমি আল্লাহর হেফাজত করো, আল্লাহ তোমার হেফাজত করবেন।
– তুমি আল্লাহর হেফাজত করো, আল্লাহকে তুমি তোমার বরাবর পাবে।
– যখন তুমি কিছু চাইবে, আল্লাহর কাছে চাইবে।
– তুমি যখন কিছু সাহায্য চাইবে, আল্লাহর কাছে চাইবে।
জেনে রাখো! গোটা জাতি যদি কোনো কিছুর মাধ্যমে তোমার উপকারের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়, তারা কিছুতেই কিছু দিয়ে তোমার উপকার করতে পারবে না, তোমার জন্য আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তা ছাড়া। আবার গোটা জাতি যদি কোনো কিছুর মাধ্যমে তোমার অপকার বা ক্ষতির বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়, তারা কিছুতেই কিছু দিয়ে তোমার অপকার বা ক্ষতি করতে পারবে না, তোমার বিপক্ষে আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তা ছাড়া। কেননা কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং কাগজ শুকিয়ে গেছে।’ (তিরমিজি)
বতর্মান সময়ের মহামারি করোনা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের এ মুহূর্তে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসটির আমল ও শিক্ষা সব মানুষের জন্য সবভাবে প্রযোজ্য।
প্রতিটি মানুষই নিজ নিজ কর্মের ব্যাপারে যেমন উদাসিন, তেমনি জীবনের প্রতিটি কাজেই মানুষ চরম অবাধ্য। এ অবাধ্যতা আল্লাহ বিমুখিতা মানুষকে চরম অধপবতন ও মহামারির ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ হাদিসের বিষয়ে খুব কম মানুষই চিন্তাভাবনা করে থাকে।
এ হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কম বয়সী সাহাবি হজরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অতি মূল্যবান ও অতীব গুরুত্বপূণ কয়েকটি উপদেশ দিয়েছেন।
প্রথম উপদেশটিই হলো-
احفظ الله يحفظك
‘তুমি আল্লাহর হেফাজত করো, আল্লাহ তোমার হেফাজত করবেন।’ বিস্ময়ের ব্যাপার হলো- ‘আল্লাহর হেফাজত করা নিয়ে। মানুষ কীভাবে আল্লাহর হেফাজত করবে?
মূলতঃ এর অর্থ দাঁড়ায়-
আল্লাহর হকগুলো যথাযথভাবে আদায় করা বা হেফাজত করা। আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা তথা সীমারেখাগুলোর হেফাজত করা। আল্লাহর বিধিনিষেধগুলো লঙ্ঘন না করা। এ সব বিষয়গুলোর যথাযথ হেফাজতই হলো আল্লাহর হেফাজত।
তবেই আল্লাহ তাআলা বান্দার হেফাজত করবেন। তার দুনিয়ার বৈষয়িক বিষয়াদি, তার নিজ ও পরিবার-পরিজন এবং স্বাস্থ্য-সম্পদ ইত্যাদিরও হেফাজত করবেন আবার তার আখেরাতে মুক্তির উপায় হিসেবে দ্বীন-ঈমানেরও হেফাজত করবেন। সুবহানাল্লাহ!
হাদিসের দ্বিতীয় উপদেশটি অসাধারণ এবং অনেক বেশি আশ্বাসময়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় বলছেন, احفظ الله ‘তুমি আল্লাহকে হেফাজত করো’। এর প্রতিদান ঘোষণা করেছেন- تجده تجاهك ‘আল্লাহকে তুমি তোমার বরাবর পাবে।’
অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে সর্বাবস্থায় তাঁর সাহায্য ও সুরক্ষা দিয়ে তোমাকে ঘিরে রাখবেন। তোমাকে সব রকমের অযাচিত-অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় থেকে আল্লাহ নিরাপদ রাখবেন। তোমার সব উদ্যোগ-প্রচেষ্টায় আল্লাহ তোমাকে সফলতা দান করবেন।
সুতরাং মহামারি করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের এ প্রাদুর্ভাবের সময়ে মহান আল্লাহ তাআলার বিধানগুলোর যথাযথ হেফাজতই হলো মানুষের মুক্তি ও নিরাপত্তার অন্যতম উপায়। বিশেষ করে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দু’টি উপদেশ তথা বিধি-নিষেধ বাস্তবায়ন করলেই আল্লাহর প্রায় অন্যান্য সব নির্দেশ পালনের আওতায় চলে আসবে। আর তাহলো-
আল্লাহর বিশেষ বিধি-নিষেধ
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জবানে আল্লাহর ওয়াদাও ছিল এমন যে, ‘বান্দা যদি আল্লাহর হকসমূহ ও তাঁর বিধিবিধানের হেফাজত করে তাহলে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে তাকে বিপদাপদ, বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করবেন। এ নসিহত থেকে মহামারি করোনা ও নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাদ যায়নি বরং তিনি করোনার এ দুর্যোগে থেকেও সব মানুষকে হেফাজত করবেন। যদি বান্দা আল্লাহর হকগুলো তথা জীবন-বিধান মেনে চলেন।
– যে নির্দেশ পালন জরুরি
কুরআনে এমনটি একটি বিধান ও কাজকে হেফাজতে কথা আল্লাহ তাআলা বলেছেন। আর তাহলো নামাজ। এটি ইসলামের প্রধান ইবাদত ও নির্দেশ। ইমানের পরেই এর স্থান। আল্লাহ তাআলা বলেন-
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَىٰ
‘তোমরা সব নামাজের বিষয়ে, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের যথাযথ হেফাজত কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৩৮)
তাছাড়া, নামাজের হেফাজতই হতে পারে দ্বীনের অন্যান্য সব বিধি-বিধান হেফাজতের অন্যতম সহজ মাধ্যম। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর খেলাফতের গভর্নরদের এ মর্মে চিঠি লিখেন-
‘নিশ্চিত জেনে রেখো! আমার কাছে তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নামাজ। যে নামাজের হেফাজত করবে, নামাজের বিষয়ে যথাযথ যত্নবান হবে সে তার গোটা দ্বীনকে হেফাজত করলো আর যে নামাজের বিষয়ে অবহেলা করবে সে অন্যান্য সব বিষয়ের মধ্যে আরো বেশি অবহেলাকারী সাব্যস্ত হবে।’ (মুআত্তা মালেক)
– যে নিষেধাজ্ঞা মেনে নেয়া জরুরি
আর যেসব কাজ ছেড়ে দিলে মানুষ অনেক গোনাহের কাজ থেকে হেফাজত থাকতে পারবে। আল্লাহর অনেব বিধি-নিষেধের আওতায় চলে আসবে তাহলো- নিজের জবান ও লজ্জা স্থানের হেফাজত করা।
মানুষের জীবনে ও সমাজে যত অনিষ্ট, ঝগড়া-বিবাদ, মিথ্যা-প্রতারণা, অশ্লীলতা-বেহায়াপনার প্রচলন ইত্যাদি সবগুলোর মূলে এ দুই জিনিসের হেফাজত না হওয়া। অর্থাৎ মানুষের জবান ও লজ্জাস্থানের যথাযথ হেফাজত না থাকা।
আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে হাদিসের বিধি-নিষেধগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। নিজেদের আল্লাহর হেফাজতে রাখার তাওফিক দান করুন। মহামারি করোনা ও প্রাকৃতি দুর্যোগ থেকে হেফাজত থাকতে আল্লাহর বিধি-নিষেধগুলোর ব্যাপারে যথাযথ সতর্কতার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Discussion about this post