সালাম (سلام) আখলাক্বে হামীদাহ বা সচ্চরিত্রের অন্যতম একটি দিক, আবার এটা মহান রাব্বুল আলামীনের একটি গুণবাচক নামও। এর শব্দগত অর্থ দোষত্রুটি হতে মুক্ত থাকা। শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করা। পবিত্র ক্বোরআনে সালাম শব্দটি শান্তি ও নিরাপত্তা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-
سَلَامٌ عَلٰی مُوْسٰی وَہَارُوْنَ سَلاَمٌ عَلٰی نُوْحٍ فِیْ الْعَالَمِیْنَ তরজমাঃ শান্তি বর্ষিত হোক মূসা ও হারূনের উপর, শান্তি বর্ষিত হোক নূশেভ উপর সমগ্র বিশ্বের মধ্যে।
সালামের ফযীলত
سلام বা ‘আস্ সালামু আলাইকুম’ ইসলামী শরীয়তে একটি দো’আ, যা মুসলমানদের পরস্পরের সাক্ষাতের সময় পেশ করা হয়। সালাম দেয়া সুন্নত এবং এর উত্তর দেয়া ওয়াজিব। ‘আসসালামু আলাইকুম’ অর্থ হচ্ছে- ‘আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ ‘আমার পক্ষ হতে আপনাকে/আপনাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া হলো। আপনি আমাকে/আমাদেরকে নিরাপত্তা দান করুন।’ ক্বোরআন মজীদে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন-
اِذَا حُیِِّیْتُمْ بِتَحِیَّۃٍ فَحَیُّوْا بِاَحْسَنَ مِنْہَا اَوْرُدُّوْہَا তরজমাঃ এবং যখন তোমাদেরকে কেউ কোন বচন দ্বারা সালাম করে, তবে তোমরা তা অপেক্ষা উত্তম বচন তার জবাবে বলো, কিংবা অনুরূপই বলে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ্ প্রত্যেক কিছুর হিসাব গ্রহণকারী। [৪:৮৬]
সুতরাং সালাম প্রদানকারী السلام عليكم (আস্সালামু আলাইকুম) বলবে। আর এর সাথে ورحمة الله (ওয়া রাহমাতুল্লাহি) অংশটুকু বৃদ্ধি করাও অতি উত্তম। সুতরাং যদি সালামদাতা শুধু ‘আস্সালামু আলাইকুম’ বলে, তবে উত্তরদাতা জবাবে ورحمة الله (ওয়ারাহমাতুল্লাহি) বৃদ্ধি করবে। আর যদি সালামদাতা اَلسَلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ বলে তাহলে জবাবদাতা وَبَرَكَاتَه (ওয়া বরাকাতুহু) অংশটুকুও বৃদ্ধি করবে। আর যদি সালামদাতা ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ’ বলে তবে উত্তরদাতা ‘ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাক্বাতুহুর সাথে ‘ওয়া মাগফিরাতুহূও সংযোজন করতে পারবে। এর থেকে বেশী বলার নিয়ম নেই। অবশ্য পানাহার, মল-মূত্র ত্যাগ, তা’লীম দেয়া, ক্বোরআন তিলাওয়াত করা ও নামায রত অবস্থায় সালাম দেয়াও সালামের জবাব দেয়া মাকরূহ-ই তাহরীমী। অমুসলিম তথা কাফির-মুশরিককে সালাম দেয়া হারাম। যদি কোথাও মুসলমান ও কাফির একত্রিত থাকে, তবে سَلاَمٌ عَلى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدى (সালামুন ‘আলা মানিত্তাবা’আল হুদা) বলে সালাম দেবে এবং মনে মনে মুসলমানদের নিয়্যত করবে। সালাম দেয়ার সময় হাত উত্তোলন করা জরুরী নয়; তবে কোন দূরবর্তী লোককে সালাম বলার সময় হাত দ্বারা ইশারাও করতে পারে। অবশ্য মুখে সালাম না বলে শুধু হাত দ্বারা ইশারা করা, মাথা নাড়া ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থী; বরং ইহুদী, খ্রিস্টানদের কু-প্রথা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন। এবং অভিভাদনের জন্য ‘সালাম’ প্রথাকেই সুন্দর বিকল্প হিসেবে স্থির করেছেন। [মিশ্কাত শরীফ ও মিরক্বাত শরীফ-সালাম অধ্যায়]
সালাম বিনিময় প্রসঙ্গে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তাজ্ঞআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
۱.عَنْ اَبِیْ اُمَامَۃَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ اِنَّ اَوْلَی النَّاسِ بِاللّٰہِ مَنْ بَدَأَ بِالسَّلاَمِ وَرَوَاہُ اَبُوْدَاوٗدَ وَاَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِیُّ
অর্থাৎ: হযরত আবূ উমামাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা’আলার নিকট অধিকতর উত্তম ব্যক্তি হচ্ছে যে প্রথমে সালাম দেয়। [আবু দাউদ, আহমদ, তিরমিযী শরীফ]
۲.عَنْ جَابِرٍ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ اَلسَّلاَمُ قَبْلَ الْکَلاَمِ رَوَاہُ التِّرْمِذِیُّ
অর্থাৎ: হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, কথাবার্তা বলার পূর্বেই সালাম। [তিরমিযী]
۳. عَنْ عَبْدِ اللّٰہِ بْنِ عَمْرٍو اَنَّ رَجُلاً سَأَلَ رَسُوْلَ اللّٰہِ اَیُّّ الْاِسْلاَمِ خَیْرٌ؟ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتُقْرِئُ السَّلاَمَ عَلٰی مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ مُتَّفَقٌ عَلَیْہِ
অর্থাৎ : হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র দরবারে আরয করলেন, ‘‘ইসলামের কোন্ রীতিই উত্তম?’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, তুমি (অপরকে) খানা খাওয়াবে এবং পরিচিত ও অপরিচিত উভয় প্রকার (মুসলমানকে) সালাম করবে। [বুখারী ও মুসলিম]
۴.وَعَنْہُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ لاَ تَدْخُلُوْنَ الْجَنَّۃَ حَتّٰی تُؤْمِنُوْا وَلَاتُؤْمِنُوْنَ حَتّٰی تَحَابُّوْا اَوَلاَ اَدُلُّکُمْ عَلٰی شَئٍ اِذَا فَعَلْتُمُوْہُ تَحَابَبْتُمْ اَفْشُوا السَّلاَمَ بَیْنَکُمْ رَوَاہُ مُسْلِمٌ
অর্থাৎ: হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা ঈমান গ্রহণ করবে, আর ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন কথা বলে দেবো না, যার উপর আমল করলে তোমরা পরস্পরকে ভালবাসতে থাকবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন করো [মুসলিম]
۵.عَنْ اَنَسٍ رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ قَالَ اِنَّ رَسُوْلَ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلٰی غِلْمَانٍ فَسَلَمَّ عَلَیْہِمْ مُتَّفَقٌ عَلَیْہِ অর্থাৎ হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম একদল বালকের পার্শ্ব দিয়ে গমন করলেন এবং তাদেরকে সালাম বললেন। [বুখারী ও মুসলিম]
Discussion about this post