অনলাইন ডেস্ক
চারটি পবিত্র ও সম্মানিত মাসের মধ্যে জিলহজ অন্যতম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি—আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৬)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাদিসে এসেছে, ওই মাসগুলো হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব।
জিলহজ মাসে আমলের গুরুত্ব : জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম ১০ দিনের নেক আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল উত্তম নয়। সাহাবারা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এই ১০ দিনের আমলের চেয়ে উত্তম নয়? রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এর চেয়ে উত্তম নয়; তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে তার সর্বস্ব নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করল এবং কিছুই নিয়ে ফিরে এলো না।’ (বুখারি, হাদিস : ৯৬৯)
নখ, চুল মোচ ইত্যাদি না কাটা : জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে নিয়ে চুল, মোচ, নখ, বগল ও অন্য স্থানের লোম বা পশম না কাটা মুস্তাহাব। এ সম্পর্কে উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জিলহজের চাঁদ দেখে এবং কোরবানির ইচ্ছা করে, সে যতক্ষণ কোরবানি না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন চুল বা নখ না কাটে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৬৫৬)।
আরাফার দিন রোজা : আরাফার দিন রোজা রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, আরাফার দিনের রোজা আগের ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে।’ (মুসলিম)। তবে আরাফায় অবস্থানকারী হাজিদের জন্য রোজা রাখা মুস্তাহাব নয়। কেননা মহানবী (সা.) আরাফায় অবস্থান করেছিলেন রোজাবিহীন অবস্থায়।
হজ ও ওমরাহ পালন : হজ ও ওমরাহ এ দুটি হলো এ দশকের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারাস্বরূপ আর কবুল হজের প্রতিদান কেবলই জান্নাত।’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩)
বেশি দুআ করা : দুআ এবাদতের মূল। আর আরাফার দিনের দুআ আল্লাহর কাছে অনেক সবচেয়ে বেশি কবুল হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম দুআ আরাফার দিনের দুআ। আমি ও আমার আগের নবিদের সর্বোত্তম দুআ হলো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু,লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কদির।’ অর্থ : একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব ও প্রশংসা কেবল তাঁর জন্য, আর তিনি সর্ব শক্তিমান। (তিরমিজি, হাদিস নং : ১৪৯৪)।
তাকবির ও তাসবিহ পড়া : এই দিনগুলোতে তাকবির (আল্লাহু আকবার), তাহমিদ (আলহামদু লিল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবিহ (সুবহানল্লাহ) পড়া সুন্নত। এ দিনগুলোয় জিকির-আজকারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এ ১০ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়ে তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবির (আল্লাহু আকবার) ও তাহমিদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পাঠ করো।’ (বায়হাবি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৪৭৪)
তাকবিরে তাশরিক পাঠ : জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে নিয়ে ১৩ তারিখের আসরের নামাজ পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব।
নারী-পুরুষ সবার জন্য ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা কর্তব্য। এ তাকবির একবার পাঠ করবে। তাকবিরে তাশরিক হলো, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’
পশু কোরবানি করা : এ দিনগুলোর দশম দিন সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় করো ও কোরবানি করো।’ (সুরা : কাউসার, আয়াত : ২)
আনাস বিন মালেক (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) দুটি মোটা শিং বিশিষ্ট দুম্বা দিয়ে কোরবানি করতেন। তিনি নিজের হাত দিয়ে বিসমিল্লাহ ও তাকবির পাঠ করে তা জবাই করতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫২৫৭)
Discussion about this post