সেরাতুল মুস্তাকীম ডেস্ক
নবুয়ত লাভের পর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর দীর্ঘ ২৩ বছর ওহি অবতীর্ণ হয়। দীর্ঘ এই সময়ে রাসুল (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওহি এসেছে। বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর ছয়ভাবে ওহি অবতীর্ণ হয়েছে। তা হলো—
১. স্বপ্নযোগে : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে সর্বপ্রথম যে ওহি আসে তা ছিল নিদ্রাবস্থায় স্বপ্নযোগে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩)
অন্যান্য নবী-রাসুল (আ.)-ও স্বপ্নযোগে ওহি লাভ করতেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে পুত্র, নিশ্চয়ই আমি ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখেছি যে আমি তোমাকে জবাই করছি।’ (সুরা সফফাত, আয়াত : ১০২)
২. ইলহামের মাধ্যমে : ইলহাম হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের অন্তরে কোনো কিছু ঢেলে দেওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “নিশ্চয়ই ‘রুহুল কুদুস’ (জিবরাইল) আমার অন্তরে ঢেলে দিয়েছে যে কোনো ব্যক্তি মারা যায় না যতক্ষণ না তার জীবনকাল পূর্ণ হয় এবং সে পূর্ণ জীবিকা লাভ করে।’ (সহিহ আল-জামি, হাদিস : ২০৮৫)
৩. ঘণ্টাধ্বনির মতো : হারিস ইবনে হিশাম (রা.) আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনার কাছে ওহি কি রূপে আসে? আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, কোনো কোনো সময় তা ঘণ্টাধ্বনির মতো আমার কাছে আসে। আর এটি-ই আমার ওপর সবচেয়ে বেদনাদায়ক হয় এবং তা শেষ হতেই ফেরেশতা যা বলে তা আমি মুখস্থ করে নিই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২)
৪. ফেরেশতা মানুষের আকৃতি : আল্লাহর নির্দেশনা নিয়ে কখনো কখনো ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে আসত। এ অবস্থায় উপস্থিত সাহাবিরা ফেরেশতাদের দেখতে পেতেন। সহিহ বুখারির হাদিসে জিবরিলে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিবরাইল (আ.) একজন পথিকের বেশে হাজির হন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ওহি কিভাবে আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আবার কখনো ফেরেশতা মানুষের রূপধারণ করে আমার সঙ্গে কথা বলে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২)
৫. ফেরেশতা আপন আকৃতিতে : জিবরাইল (আ.) একাধিকবার আপন আকৃতিতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একবার আমি হাঁটছি, হঠাৎ আসমান থেকে একটা শব্দ শুনতে পেয়ে আমার দৃষ্টিকে ওপরে তুললাম। দেখলাম, সেই ফেরেশতা, যিনি হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিলেন, আসমান ও জমিনের মধ্যে একটি আসনে উপবিষ্ট। এতে আমি শঙ্কিত হলাম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪)
৬. সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন : ইসরা বা মিরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি নামাজের নির্দেশ লাভ করেন। মুসা (আ.)-এর সঙ্গেও আল্লাহ কথা বলেন। কিন্তু মুসা (আ.) আল্লাহর দর্শন লাভ করেননি। পৃথিবীতে কেবল মহানবী (সা.) আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের অনন্য মর্যাদা লাভ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুসার সঙ্গে আল্লাহ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ করেছিলেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৬৪)
গ্রন্থনা : আতাউর রহমান খসরু।
Discussion about this post