মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজই দানতুল্য।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০২১)
আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে ভালো কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি সতর্ক করেছেন মুসলিমরা যেন কোনো ভালো কাজকে ছোট করে না দেখে। কেননা ছোট-বড় সব নেক আমলই পরকালে মুমিনের পাথেয় হবে।
ভালো কাজ কী?
ইমাম রাগেব ইস্পাহানি (রহ.) বলেন, ‘যে কাজ ইসলামী শরিয়ত ও মানুষের বিবেক মতে ভালো ও উত্তম তাই ভালো কাজ। ইসলামী শরিয়ত যে কাজের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে, যার প্রশংসা করেছে এবং মানুষও যাকে ভালো ও পুণ্যের কাজ মনে করে।
ভালো কাজ সদকাস্বরূপ
প্রতিটি ভালো কাজ হওয়ার ব্যাখ্যায় হাদিস বিশারদরা বলেন, ভালো কাজ সদকা হওয়ার উদ্দেশ্য হলো সদকার মতো সাওয়াব বা বিনিময় লাভ করা। হাদিসে প্রতিটি ভালো কাজকে সদকা বলা হয়েছে। কেননা ভালো কাজের দ্বারা আল্লাহর রহমত তরান্বিত হয় এবং এই রহমত আমলকারী ব্যক্তি ছাড়াও আর প্রতিবেশী সৃষ্টিজীবরাও লাভ করে। অন্যদিকে মানুষ পাপ কাজ করলে আল্লাহর ক্রোধ তরান্বিত হয় এবং তার প্রভাব সৃষ্টিজগতের অন্য বিষয়কেও প্রভাবিত করে। এ জন্য ভালো কাজের অর্থ হলো সৃষ্টিজগতের কল্যাণ করা। এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, শুধু অর্থ ব্যয় করাই দান বা সদকা নয়; বরং সদকা বিভিন্ন রূপ হতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক নামাজ, প্রত্যেক রোজা, প্রত্যেক হজ, প্রত্যেক তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ), প্রত্যেক তাকবির (আল্লাহু আকবার) ও প্রত্যেক তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) তার জন্য সদকাস্বরূপ।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১২৮৬)
কোনো ভালো কাজ ছোট নয়
বিজ্ঞ আলেমরা বলেন, কোনো ভালো কাজই ছোট নয়, যেমন কোনো পাপ কাজ ছোট নয়। কেননা পরকালে আল্লাহ পাপ-পুণ্যের পূর্ণাঙ্গ হিসাব নেবেন। মহান আল্লাহ এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকাজ করলে সে তাও দেখবে।’ (সুরা জিলজাল, আয়াত : ৭-৮)
হাদিসের শিক্ষা
মুহাদ্দিসরা আলোচ্য হাদিসের শিক্ষা হিসেবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করেন।
১. ভালো কাজে অগ্রগামী হওয়া এবং তাতে বিলম্ব না করা।
২. কোনো পুণ্যের কাজকে ছোট করে না দেখা।
৩. ভালো কথা ও কাজ উভয়টি ‘মারুফ’-এর অন্তর্ভুক্ত। তাই কাজের মতো কথা ও আচরণ সুন্দর করা।
৪. আল্লাহ ধনীদের মতো দরিদ্র ব্যক্তিদেরও ভালো কাজের বহু পথ বলে দিয়েছেন। তাই সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে ভালো কাজ করবে।
৫. ভালো কাজ জীবনকে সুন্দর ও প্রাচুর্যময় করে। তাই বেশি বেশি পুণ্যের কাজ করতে হবে।
আল্লাহ সবাইকে ভালো কাজে মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
Discussion about this post