সেরাতুল মুস্তাকীম ডেস্ক
সুরা ফালাক্ব কুরআনুল কারিমের ১১৩ তম সুরা। এটি ৫ আয়াত, ১ রুকু সমৃদ্ধ সুরা। এ সুরায় শয়তানের আক্রমণ ও জাদুটোনাসহ বিভিন্ন ধরনের অনষ্টিতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার কৌশল তুলে ধরা হয়েছে। এ সুরাটি বান্দার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনন্য নেয়ামত। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় সুরাটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা ওঠে এসেছে।
উচ্চারণসহ সুরা ফালাক্ব-এর বাংলা অনুবাদ
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
অর্থ : পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ
উচ্চারণ : কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক্ব
অর্থ : বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,
مِن شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণ : মিন শাররি মা খালাক্ব
অর্থ : তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে।
وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ
উচ্চারণ : ওয়া মিন শাররি গাসিক্বিন ইজা ওয়াক্বাব
অর্থ : অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়,
وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ
উচ্চারণ : ওয়া মিন শাররিন নাফ্ফাছাতি ফিল উক্বাদ
অর্থ : গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে,
وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
উচ্চারণ : ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইজা হাসাদ
অর্থ : এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।
সুরা ফালাক্ব-এর বিশেষত্ব
‘আন-ফালাক্ব’ শব্দের অর্থ প্রভাত। আল্লাহর কাছে বিভিন্ন অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় পেতে সুরা ফালাক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সুরা নাসের মতো সুরা ফালাক্ব সব অনিষ্টতায় পড়ার তাগিদ এসেছে হাদিসে। এই দুই সুরাকে একত্রে ‘মুআওবিযাতাইন’ বলা হয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এ দুইটি সুরা (সুরা ফালাক্ব ও সুরানাস) তোমরা পড়তে থাক। কেননা এ দুইটি সুরার মতো কোনো সুরা তোমরা কোনো দিন পাবে না।’ (মুসলিম)
সুরা ফালাক্বের মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে সৃষ্টির অনিষ্টতাসহ জাদুটোনা ও হিংসুকের কুমন্ত্রণা ও আক্রমণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এ সুরার আমলে হাদিসের দিকনির্দেশনাগুলো হলো-
> জাদুর আক্রমণ থেকে মুক্তি
এক ইয়াহুদি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের ওপর জাদু করেছিল। যার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরিল আলাইহিস সালাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন যে, এক ইয়াহুদি তাকে জাদু করেছে এবং যে জিনিস দিয়ে জাদু করা হয়েছে তা একটি কুপের মধ্যে পাথরের নিচে আছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করার জন্য লোক পাঠালেন। সেখানে গিয়ে কয়েকটি গিরা পাওয়া গিয়েছিল। তখন তিনি সুরা নাস ও ফালাক্ব একসঙ্গে পড়ে ফুক দেন আর গিরাগুলো সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে বিছানা থেকে ওঠেন।’
> সুরা ফালাক্ব পড়লে শয়তানের অনিষ্ট ও জাদুটোনা থেকে বেঁচে থাকা যায়। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সুরা ইখলাস ও এই দুই সুরা ( সুরা ফালাক ও সুরা নাস) পড়বে সে সকল বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (তিরমিজি)
> হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়তেন এবং উভয় হাতে ফুঁক দিতেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন।’ (বুখারি)
> ফজর আর মাগরিবে এই দুই ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস প্রতিটি তিনবার করে পড়া সুন্নত। অন্যান্য ফরজ সালাতের আদায় করে একবার করে এই তিন সুরা পড়ার কথা বলা হয়েছে।’ (আবু দাউদ)
> হজরত উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমার কি জানা নেই আজ রাতে আমার ওপর যে আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে এগুলোর মতো কোনো আয়াত দেখাও যায়নি এবং শোনাও যায়নি। আর তাহলো- কুল আউজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আউজু বি রাব্বিন নাস।’ (মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকতে সুরা ফালাক্ব, নাস-এর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমলগুরো বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Discussion about this post