শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রিয় নবীজি (সা.)-এর উদ্দেশে কোরআন কারিমে বলেন, ‘এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জত কায়েম করো, ইহা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে—মাকামে মাহমুদে।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ৭৯)।
রমজান মাস রহমতের শ্রেষ্ঠ মাস। রহমতের শ্রেষ্ঠ সময় তাহাজ্জতের সময়। বছরের বিশেষ রাতসমূহে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটতম আসমানে অবতরণ করেন। তাহাজ্জতের সময়ে প্রতিটি রাতেই আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে এসে বান্দাদের আরজি ও আবেদন-নিবেদন শোনেন।
রাতের ইবাদত প্রসঙ্গে কোরআন মাজিদে আরও রয়েছে, ‘হে কম্বলাবৃত! রাতে দণ্ডায়মান হও কিছু অংশ বাদ দিয়ে; অর্ধরাত্রি অথবা তার চেয়ে কিছু কম অথবা তার চেয়ে বেশি এবং কোরআন তিলাওয়াত করো সুবিন্যস্তভাবে ও স্পষ্টভাবে। আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। নিশ্চয়ই ইবাদতের জন্য রাত্রিতে ওঠা প্রবৃত্তি দমনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। নিশ্চয়ই দিবাভাগে রয়েছে তোমার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। তুমি নিজ পালনকর্তার নাম স্মরণ করো এবং একাগ্রচিত্তে তাতে নিমগ্ন হও।’ (সুরা-৭৩ মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ১-৮)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘হে বস্ত্রাবৃত! ওঠো, সতর্ক করো, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করো, স্বীয় পোশাক পবিত্র করো এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো। অন্যকে কিছু দান করে অধিক প্রতিদান আশা করবে না। আর তোমার পালনকর্তার উদ্দেশে ধৈর্য ধারণ করো।’ (সুরা-৭৪ মুদ্দাচ্ছির, আয়াত: ১-৭)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতেই তাহাজ্জত নামাজ আদায় করতেন। তাই এটি সুন্নাত, অতিরিক্ত হিসেবে নফল। নবীজি (সা.)-এর জন্য এটি অতিরিক্ত দায়িত্ব ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত নফলের মধ্যে তাহাজ্জত সর্বোৎকৃষ্ট আমল। হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘যাঁরা রাত জেগে তাহাজ্জত পড়েছেন, তাঁরাই আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ঊর্ধ্বারোহণ করেছেন।’ (দিওয়ানে আলী, নাহজুল বালাগা)। তাহাজ্জত হলো মোক্ষ লাভের মোক্ষম মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ফরজ নামাজসমূহের পর উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জত।’ (মুসলিম, আলফিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ৯৭, হাদিস: ৪০৫)। তাহাজ্জত সংকট উত্তরণে শ্রেষ্ঠ অবলম্বন।
মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে নানা কুসংস্কার বিদ্যমান আছে। যেমন ‘তাহাজ্জত অন্ধকারে পড়তে হয়’ বা ‘তাহাজ্জত গোপনে পড়তে হয়’ ও ‘তাহাজ্জত পড়লে জিন আসে’ এবং ‘তাহাজ্জুত শুরু করলে নিয়মিত আদায় করতে হয়’। এসব ভয়ে ও বিভ্রমে অনেকে তাহাজ্জত পড়েন না। প্রকৃতপক্ষে এসব ভুল ধারণা। তবে কারও ঘুমের ব্যাঘাত যেন না হয় এবং প্রচার মানসিকতা যেন না থাকে, এ বিষয়ে যত্নশীল ও সতর্ক থাকতে হবে। তাহাজ্জত নিয়মিত আদায় করতে পারলে তা অতি উত্তম।
নফল নামাজে রুকু, সিজদাসহ প্রতিটি রুকন বা পর্ব দীর্ঘ করা সুন্নাত ও মুস্তাহাব। এ জন্য রুকু ও সিজদায় তাসবিহ অনেকবার পড়া যায় এবং অন্যান্য পর্বেও বেশি পরিমাণে বিভিন্ন দোয়া মাসুরা, যা কোরআন-হাদিসে আছে, পাঠ করা যায়। একই রাকাতের একই সুরা বারবার এবং বিভিন্ন সুরা ও বিভিন্ন আয়াত পড়া যায়। সুন্নাত ও নফল নামাজে কিরাতে তিলাওয়াতের তারতিব বা ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি নয়।
রমজান মাসে যেহেতু ফরজ রোজা পালনের জন্য সহায়ক হিসেবে সাহ্রি খাওয়ার সুন্নাত আদায়ের জন্য আমরা সবাই উঠি এবং সাহ্রির সময়ই হলো তাহাজ্জতের সময়; সুতরাং রমজানে তাহাজ্জত আদায় করা খুবই সহজ। তাহাজ্জত ২ রাকাত করে ৮ রাকাত, ১২ রাকাত বা আরও কম বা বেশিও পড়া যায়। রমজানের নফলের সওয়াব ফরজের সমান, ফরজের সওয়াব ৭০ গুণ।
লেখক- মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী ,যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
Discussion about this post