ধর্ম ডেস্ক
কোথাও যখন কোনো সুসংবাদ নেই তখনই হতাশার কালো মেঘে গোটা পৃথিবী যেন অন্ধকার হয়ে আসে। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে সর্বত্র। কোথাও কোনো বন্ধু নেই। আপন বলতে কেউ-ই নেই। সবাই বিপদে, কাউকে সহানুভূতির হাত বাড়ানোর যেন কেউ নেই। উল্টো দুর্দিনের সুযোগ নিয়ে সর্বস্বান্ত করার জন্য সবাই ওত পেতে আছে। এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচানোর মালিক একমাত্র আল্লাহই। নিম্নে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো, যেগুলোর ওপর কেউ আমল করলে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।
আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যারা মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে, মহান আল্লাহ তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)
যেকোনো বিপদাপদে ভেঙে না পড়ে যারা বিষয়টিকে পরিপূর্ণভাবে মহান আল্লাহর ওপর ন্যস্ত করে দেয়, আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা করে, আল্লাহ তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ ভরসা করে তার দেখানো পথে চললেই তা থেকে তিনিই আমাদের উদ্ধার করবেন। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ তাআলার ওপর নির্ভরশীল হতে, তাহলে পাখিদের যেভাবে রিজিক দেওয়া হয় সেভাবে তোমাদেরও রিজিক দেওয়া হতো। এরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৪)
সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়া
মানুষের জীবনে পরিস্থিতি চলে আসে, যে এই মুহূর্তে পরিবার বা আশপাশের মানুষকে খুশি করতে গেলে আল্লাহর নিষেধ করা কোনো কাজ করতে হবে। যারা এমন মুহূর্তগুলোতে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিতে পারে, আল্লাহ তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি আকাঙ্ক্ষা করে তা মানুষের অসন্তুষ্টি হলেও, মানুষের দুঃখ-কষ্ট হতে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ তাআলাই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৪)
সব ক্ষেত্রে আখিরাতকে প্রাধান্য দেওয়া
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, পার্থিব চিন্তা যাকে মোহগ্রস্ত করবে, আল্লাহ তার কাজকর্মে অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন, দারিদ্র্য তার নিত্যসঙ্গী হবে এবং পার্থিব স্বার্থ ততটুকুই লাভ করতে পারবে, যতটুকু তার তাকদিরে লিপিবদ্ধ আছে। আর যার উদ্দেশ্য হবে আখিরাত, আল্লাহ তার সব কিছু সুষ্ঠু করে দেবেন, তার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করবেন এবং দুনিয়া স্বয়ং তার সামনে এসে হাজির হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১০৫)
সকাল-সন্ধ্যা দোয়া করা
আবুূ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সাতবার বলে, উচ্চারণ : ‘হাসবিয়াল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লাহু, আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল আরশিল আজিম’। অর্থ : ‘আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আমি তাঁর ওপর ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের রব।’ আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হবেন, যা তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তার বিরুদ্ধে, চাই যেন সত্যিকারভাবে অথবা কৃত্রিমভাবে বলুক না কেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮১)
দিনের শুরুতে চার রাকাত নামাজ আদায় করা
নুআইম ইবনে হাম্মার (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি : মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেছেন, হে আদম সন্তান, তোমরা দিনের পূর্বাহ্নের মধ্যে চার রাকাত নামাজ হতে আমাকে ত্যাগ করো না, তাহলে আমি আখিরাতে তোমার জন্য যথেষ্ট হবো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৮৯)
ইমাম আবু দাউদ, তিরমিজিসহ বিভিন্ন হাদিসবিদদের মতে, এখানে চার রাকাত নামাজ দ্বারা চাশতের নামাজের কথা বলা হয়েছে। ইবনে কায়্যিম ও ইবনে তাইমিয়্যার মতে, এখানে চার রাকাত নামাজ দ্বারা ফজরের সুন্নত ও ফরজ নামাজের কথা বলা হয়েছে।
Discussion about this post